ট্রাম্প এখন এক অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিবেশী!
হোয়াইট হাউজ ছেড়ে ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে বসবাসের জন্য গিয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে সেখানে প্রতিবেশি হিসেবে ট্রাম্পকে মেনে নিতে নারাজ স্থানীয় বাসিন্দারা।
প্রতিবেশীদের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার সকালে পাম বিচের কমিশনার এবং ইউএস সিক্রেট সার্ভিসের কাছে দেওয়া একটি দাবিনামায় এই বার্তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়ে, ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির কারণে ট্রাম্প মার-এ-লাগোতে বসবাসের আইনি অধিকার হারান যখন তিনি তার ব্যক্তিগত বাসভবন থেকে এটিকে একটি প্রাইভেট ক্লাবে রূপান্তরিত করেন।
এই চুক্তি অনুযায়ী, ট্রাম্প তার ক্লাবে টানা ৭ দিন এবং বছরে ২১ দিনের বেশি থাকতে পারবেন না।
দাবীনামার বিষয়ে মার-এ-লাগো প্রতিবেশীদের পক্ষে একজন আইনজীবী বলেছেন, শহর কর্তৃপক্ষের উচিত ট্রাম্পকে জানানো যে তিনি মার-এ-লাগোকে তিনি বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না।
এই আইনি জটিলতা একটি 'সম্ভাব্য বিব্রতকর পরিস্থিতি'র সৃষ্টি করেছে। নিয়মনুসারে ওভাল অফিসের একজন প্রাক্তন বাসিন্দা'কে আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে বসবাসের জন্য একটি জায়গা বেছে নিতে হবে।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানাচ্ছে, এটি ট্রাম্পের জন্য একটি আইনি মাথাব্যথার সৃষ্টি করতে পারে। কারণ তিনি তার আনুষ্ঠানিক বাসভবন মার-এ-লাগোতে পরিবর্তন করেন।
মার-এ-লাগো ক্লাবে প্রেসিডেন্টের ঘন ঘন ভ্রমণের কারণে সেখানে যানজট এবং সড়ক অবরুদ্ধ করার বিষয়ে এর আগে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন স্থানীয়রা।
এমনকি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেও ট্রাম্প স্থানীয় বিভিন্ন নিয়মকানুন মেনে চলেননি বলে ওয়াশিংটন পোস্টের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।
পাম বিচ কাউন্টির স্টেট অ্যাটর্নি ডেভ অ্যারনবার্গ দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাম বিচ শহরের সাথে বিবাদের ইতিহাস রয়েছে এবং এবার'ও তা ব্যতিক্রম নয়।"
নিকটবর্তী পাম বিচের আরেকজন গৃহকর্তা গ্লেন জেইটজ বলেন, "এমন কোন আইনি তত্ত্ব নেই যার অধীনে তিনি এই সম্পত্তিকে একটি বাসস্থান এবং ক্লাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। মূলত, সে একটা অচল হাত বাজাচ্ছে। সে মানুষকে ভয় দেখাবে না বা ধোঁকা দিতে পারবে না, কারণ আমরা সেখানে থাকবো।"
পাম বিচ কাউন্টির ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান টেরি রিজো এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "সুখবর: তিনি আর হোয়াইট হাউজে নেই। খারাপ খবর হচ্ছে তিনি এখন আমাদের উঠোনের সামনেই থাকবেন।"
এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র এবং পাম বিচ মেয়রের কাছে একটি মন্তব্য চাওয়া হলে তারা কেউ সাড়া দেয়নি। আজ পর্যন্ত পাম বিচ ট্রাম্পকে মার-এ-লাগোতে বসবাস করতে বা তার বৈধ বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখার কোন প্রকাশ্য প্রচেষ্টা করেনি।
সূত্রমতে, বর্তমান বাসভবন বিতর্ক ১৯৯৩ সালে ট্রাম্পের একটি চুক্তির কথা সামনে নিয়ে আসে, সেই চুক্তির অধীনে, ক্লাবের সদস্যদের বছরে ২১ দিনের বেশি ক্লাবের অতিথি স্যুটে কাটানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তারা পরপর সাত দিনের বেশি সেখানে থাকতে পারবে না।
সে সময় শহরের নেতারা ট্রাম্পকে ভয় পেয়েছিলেন কারণ তিনি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন যখন তারা ঐতিহাসিক মার-এ-লাগো সম্পত্তিকে একাধিক হাউজিং লটে বিভক্ত করার প্রচেষ্টা বন্ধ করে দিয়েছিল।
প্রতি বছর, ক্লাবকে রিপোর্ট করতে হবে যে মার-এ-লাগোর অন্তত ৫০ শতাংশ সদস্য পাম বিচে বাস করে অথবা কাজ করে; যে ক্লাব ৫০০ এর কম সদস্য আছে; এবং যে কেউ বছরে ২১ দিনের বেশি অতিথি স্যুট ব্যবহার করছে না। যদিও শহর কর্তৃপক্ষ বলছে যে গত ২০ বছরের চারটি রিপোর্টের কোন রেকর্ডই তাদের কাছে নেই।
ট্রাম্প বারবার তার চুক্তির কিছু অংশ পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছেন। ২০১৮ সালে তিনি শহরে ক্লাবের একটি ডক নির্মাণ নিষিদ্ধ করা একটি বিধান বাতিল করার আহ্বান জানান। তিনি প্রাথমিকভাবে বলেন যে সিক্রেট সার্ভিস এবং স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের তার সুরক্ষার জন্য কাঠামো প্রয়োজন।
যুক্তি বিবেচনবায় পরে পরিবর্তন করা হয় যে ডকটি প্রেসিডেন্ট এবং ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য। প্রতিবেশীরা আশঙ্কা করছিল যে ডকটি নোংরা মদ ক্রুজের জন্য ব্যবহার করা হবে। ট্রাম্প এই বছরের শুরুতে ডকের অনুরোধ প্রত্যাহার করে নেন।
ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে অন্তত ৩০ বার মার-এ-লাগো ভ্রমণ করেছেন এবং সেখানে অন্তত ১৩০ দিন কাটিয়েছেন। এই প্রথা নিয়ে আপত্তি উঠেছে বলে প্রকাশ্যে কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। মার-এ-লাগোর ওয়েবসাইটেই দেখা যায় যে ট্রাম্প প্রকাশ্যে এই চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন।
প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে পাম বিচ নিরাপত্তা রক্ষীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছে, যার ফলে তার ১৯৯৩ সালের চুক্তিতে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ একটি হেলিপ্যাড নির্মাণ অনুমোদন করা হয়েছে। কথা ছিল একবার ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ছেড়ে চলে গেলে, তিনি আর হেলিপ্যাড ব্যবহার করতে পারবেন না।
ন্যাশনাল ট্রাস্ট চুক্তির অংশ হিসেবে ট্রাম্প মার-এ-লাগো উন্নয়নের জন্য তার অধিকার ত্যাগ করতে অথবা "ক্লাব ব্যবহার ছাড়া অন্য যে কোন উদ্দেশ্যে" ব্যবহার করতে সম্মত হয়েছেন।
এই বছরের নির্বাচনের পর থেকে সিক্রেট সার্ভিস হোয়াইট হাউসের পরবর্তী সময়ে ট্রাম্পের জীবন রক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং আইনগতভাবে একজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার সুরক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্টদের একটি দল তার ব্যক্তিগত জীবনে তাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করবে এবং এজেন্সি নিরাপত্তা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তার বাসভবনে একটি পৃথক কক্ষে বসবাস করবে।
ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজ ছাড়ার আগে তার এজেন্টদের জন্য জীবনযাত্রার ব্যবস্থা করতে হবে- যেখানেই তিনি বাস করেন না কেন। যদি তাকে হঠাৎ করে মার-এ-লাগোতে বসবাস করতে বাধা দেয়া হয়, তাহলে সিক্রেট সার্ভিসকে সম্ভবত ভিন্ন স্থানে তাকে রক্ষা করার জন্য একটি নতুন পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
মার-এ-লাগো প্রতিবেশীরা ট্রাম্প বাস করার জন্য একটি নতুন জায়গা খুঁজে পেলে আপত্তি জানাবে না। ওয়েস্ট পাম বিচের অ্যাটর্নি রেজিনাল্ড স্ট্যামবাগের লেখা তাদের দাবিনামায় বলেন: "পাম বিচে বিক্রির জন্য অনেক সুন্দর বাসভবন আছে এবং আমরা আত্মবিশ্বাসী যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন একটি বাসা খুঁজে পাবেন যা তার চাহিদা পূরণ করবে।"