এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর ৩ বছর জিএসপি সুবিধা দেবে যুক্তরাজ্য
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে তিন বছর বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দেবে যুক্তরাজ্য। এরপর কী হবে, তা নির্ভর করবে দেশটির বাণিজ্য নীতিমালার ওপর।
ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন বুধবার তার বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা, ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, হেলথ কেয়ার, আইসিটিসহ বিভিন্নখাতে যুক্তরাজ্যের ১০-১৫টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আগ্রহী জানিয়ে তিনি বলেন, এসব বিনিয়োগ পেতে বাংলাদেশকে ব্যবসার পরিবেশে উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক সংলাপ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি স্কিমের সঙ্গে সমন্বয় করে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রেখেছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে গ্রাজুয়েশনের পর তিন বছর এ সুবিধা বহাল থাকবে। বাংলাদেশ ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে ২০২৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে জিএসপি সুবিধা পাবে।
কোভিড মহামারির কারণে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) সঙ্গে বৈঠকে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছে। এটি হলে যুক্তরাজ্যের বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা ২০২৯ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের এক প্রশ্নে পরিষ্কার করেন হাইকমিশনার।
যুুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৩.৪ বিলিয়ন পাউন্ড। এর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ২.৮ বিলিয়ন পাউন্ড ও আমদানি ৬০০ মিলিয়ন পাউন্ড। ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দিচ্ছে দেশটি। এর আগে অস্ত্র বাদে সকল পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা ছিল।
ডিকসন বলেন, বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর দেশ হিসেবে অভ্যন্তরীণ বিশাল বাজার, পজিটিভ ইকোনমিক গ্রোথ ও বিপুল তরুণ জনগোষ্ঠীর কারণে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় বিনিয়োগক্ষেত্র। তবে বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার জন্য ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নসহ বাংলাদেশকে অনেক কিছু করতে হবে। এজন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন।
'আমলতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতি, মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ও কর সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত বিদেশি বিনিয়োগ পাচ্ছে না। এসব বাধা দূর করে ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে উন্নতি করতে পারলে খুব সহজেই মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারবে বাংলাদেশ,' যোগ করেন তিনি।
ডিকসন বলেন, বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮ নম্বরে। তাই বিদেশি বিনিয়োগ পেতে বাংলাদেশকে অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে হবে। মধ্যম আয়ের দেশের যোগ্য আর্থিক সেক্টর নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের কর পলিসি আনপ্রেডিক্টেবল। এ দেশে ব্যবসা শুরু করা কঠিন।
'এবিলিটি টু ইনফোর্স কনট্রাক্ট, প্রপার্টি ডিসপুট রেজুলেশন নিয়ে সমস্যা রয়েছে। নাথিং ইজ ইনকারেজিং ফর ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টর। বাংলাদেশে ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি প্রোটেকশনের ঘাটতি রয়েছে, যা ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টরদের জন্য কনসার্ন,' জানান হাইকমিশনার।
তিনি বলেন, ব্যবসার পরিবেশ উন্নত হলে নিশ্চিতভাবেই যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। মধ্যম আয়ের দেশের উন্নীত হওয়ার জন্য ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর, ইন্সুরেন্স ও ক্যাপিটাল মার্কেট শক্তিশালী করতে হবে।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সংলাপে বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষায় যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ আগ্রহের কথা জানিয়েছি। ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের অন্তত ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে। কারিগরি ও পেশাগত কাজের জন্য বিশেষায়িত শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশে এসে শ্রীলঙ্কা ও মালয়েশিয়ার মতো সাফল্য নিশ্চিত করতে চায়। ব্রিটিশ কারিকুলামে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে তারা ভূমিকা রাখবে।