১২ দিনে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর এক শতাংশের বেশি টিকার আওতায়
করোনা প্রতিরোধে বিশ্বের অনেক দেশেই টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। খুব অল্প দেশই মোট জনসংখ্যার এক শতাংশের টিকা দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করেছে।
দেশে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৩১৩ জন। যা মোট জনসংখ্যার এক শতাংশেরও কিছুটা বেশি।
বাংলাদেশের আগে টিকা কার্যক্রম শুরু করার পরও জনসংখ্যা বেশি বিধায় ভারতে এখনও এক শতাংশ জনগোষ্ঠীর টিকাদান সম্পন্ন হয়নি।
ইতোমধ্যেই ১৫টির বেশি দেশ মোট জনসংখ্যার এক শতাংশের বেশি টিকার আওতায় আনতে পেরেছে।
এছাড়া যুক্তরাজ্য মোট জনসংখ্যার ২৩ শতাংশকে টিকা দিয়েছে। 'করোনা সংক্রমণের গতিবিধি ও টিকা' শীর্ষক বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএইচআরএফ) সংলাপ অনুষ্ঠানে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কমকর্তা ডা. এ এস আলমগীর এই তথ্য জানান। গতকাল শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন তিনি।
ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফের সঞ্চালনায় সংলাপে ইউজিসি অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবি এম আব্দুল্লাহ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ও করোনা প্রতিরোধে জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান, একুশে পদকপ্রাপ্ত অণুজীব বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ডা.আবু জামিল ফয়সাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ডা. আলমগীর বলেন, "কোভ্যাক্স থেকে মোট জনগোষ্ঠীর ২০ শতাংশকে টিকা সরবরাহ করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিলো। তবে এটি বেড়ে ২৭ শতাংশ হতে পারে। দেশে এখন ক্লাস্টার ভিত্তিক সংক্রমণ চলছে কি না তা এ সপ্তাহের মধ্যেই জানা যাবে।
তিনি আরও বলেন, "দেশে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের কম । আমরা স্বস্তির একটি পরিবেশে আছি। এর মানে এই নয় সংক্রমণ কমে গেছে। বিশ্বের অনেক দেশেই সংক্রমণের হার কমার পরে পুনরায় তা বেড়েছে। তাই আমাদের টিকা নেওয়ার পাশাপাশি মাস্ক পড়া, ঘনঘন সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া, জনসমাবেশ এড়িয়ে চলার মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে টিকা মৃত্যু কমাবে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা একটি অন্যতম পন্থা। একমাত্র পন্থা নয়।"
অধ্যাপক ডা. এবি এম আব্দুল্লাহ বলেন, "সংক্রমণ কমে এসেছে তা স্বস্তির খবর। কিন্তু আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নাই। মৃত্যুর মিছিল ওঠা নামা করছে। এখন অনেকেই আমাদের দেশে আসবে। ভাইরাসটি যাতে নতুন করে না আসে সেই বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। টিকা দেয়ার পাশাপাশি মাস্কও পড়তে হবে। দু'টি মাস্ক পড়লে তা আরো বেশি কার্যকর বলে বলা হচ্ছে।"
অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, "সংক্রমণ কমলেও ঝুঁকিমুক্ত হইনি। ভবিষ্যতে ঝুঁকির আশঙ্কা আছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাজনৈতিক সমাবেশসহ বিভিন্ন জনসমাবেশ হচ্ছে। ভবিষ্যতে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকতে এই জনসমাবেশ বন্ধের বিষয়ে সরকারকে মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।"
ডা.আবু জামিল ফয়সাল বলেন, "সংক্রমণ কমানো এবং টিকা কার্যক্রম সফল করতে সমাজপতি থেকে শুরু করে ধর্মীয় নেতাসহ সবাইকে সম্পৃক্ত করতে হবে। নারীরা, বস্তির এবং নিম্ন আয়ের লোকজন এখনও টিকা নিচ্ছেন না।"
অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা বলেন, "দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর আগেই আমাদের সিকোয়েন্সিংয়ের মেশিন ছিলো। কিন্তু এই কাজে আমরা সফলতা দেখাতে পারিনি। কিন্তু করোনাকালে সবাই মিলে যখন কাজটি শুরু করি তখন বড় একটি কাজ হলো। এই বিষয়ে আমাদের আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে।"
বিএইচআরএফের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ রাব্বি শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।