বেসরকারি বিনিয়োগে আস্থা ফিরছে না, নিম্নমুখী দিকেই ঋণ প্রবৃদ্ধি
করোনার প্রকোপ কমতে শুরু করলেও বেসরকারিখাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের সপ্তম মাসেও আস্থা ফেরেনি। অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক অর্থনীতি গতি-প্রকৃতি দেখেই বিনিয়োগে ধীর গতিতে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন উদ্যোক্তারা।
এর সামগ্রিক প্রভাব পড়ছে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিতে। ডিসেম্বরের পর জানুয়ারিতেও এই ঋণ প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী। জানুয়ারিতে এই হার ৮.৩২ শতাংশ, যা ডিসেম্বরে ছিল ৮.৩৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্য বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৪.৮ শতাংশ।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান- এ প্রসঙ্গে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কোভিডের আগে থেকেই বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমতির দিকে ছিল। কোভিডের পর সেটা আরো প্রবল হয়েছে। কোভিড পূর্ববর্তী বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগেরে ক্ষেত্রে চট করে সিদ্ধান্ত নিলেও, এখন অনেক ভেবেচিন্তেই এগোচ্ছেন। তার প্রভাবই পড়ছে ঋণ প্রবৃদ্ধিতে।"
তিনি বলেন, টিকা কর্মসূচি শুরু হওয়ায় চলতি বছরের মধ্যেই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আস্থা ফিরে আসবে। কারণ, অর্থনীতিতে চাহিদা বৃদ্ধি শুরু হয়েছে।
তবে রপ্তানি গন্তব্যের বাজারে কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি না হলে; রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর রপ্তানি আগের পর্যায়ে না গেলে, বিনিয়োগেও এর প্রভাব পড়বে বলে তিনি মনে করেন।
বেসরকারি বিনিয়োগে আস্থা ফিরে না আসার চিত্র- আমদানি পরিস্থিতিতেও ফুঠে ওঠছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস জুলাই-ডিসেম্বরে মোট আমদানি ব্যয় কমেছে ৬.৮ শতাংশ।
একই সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করার জন্য এলসি খোলার পরিমাণ আগের অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর এর তুলনায় ১১.৩৪ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে এলসি সেটেলমেন্ট কমেছে ৩৭.৫৮ শতাংশ।
অর্থাৎ, নতুন করে বিনিয়োগের জন্য যেমন মূলধনী যন্ত্রপাতি আনতে আগ্রহী হচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। অন্যদিক্ আগে যেসব এলসি খুলেছিলেন সেগুলোও নিষ্পত্তি করতে চাইছেন না। তবে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বাড়ায় ভোক্তাপণ্য এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কিছুটা বেড়েছে।
বেসরকারিখাতে ঋণের চাহিদা যেমন বাড়ছে না। অন্যদিকে সরকারের ব্যয় কমে যাওয়ায় ব্যাংক ঋণ নেয়ার প্রবণতাও কম। দুইয়ে মিলে ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত তারল্য বাড়ছে। গেল ডিসেম্বর শেষে এর পরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
অতিরিক্ত তারল্য ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকগুলোকে বাড়তি খরচ বহন করতে হচ্ছে। অন্যদিকে, বেসরকারিখাত ঋণ প্রবৃদ্ধি না বাড়ায়, লোন ও অ্যাডভান্স থেকে সুদ বাবদ আয় কমে যাওয়ার শঙ্কাও করছেন ব্যাংকাররা।