ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা
প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে বেতন ভাতার জন্য নেয়া ঋণ পরিশোধের সময়সীমা আরো দুই বছর বাড়ানোর দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করবেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা।
প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধের সময়সীমা সম্প্রতি ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। পোশাক মালিকরা ঋণ পরিশোধের কিস্তি ১৮ থেকে ৩৬-এ উন্নীত করা এবং চলতি মূলধন হিসেবে নেয়া ঋণ পরিশোধের সময় আরো দুই বছর বাড়িয়ে মোট তিন বছর করার দাবি জানাবেন।
পাশাপাশি কোভিডের অভিঘাত মোকাবেলায় তৈরি পোশাক খাতের সহায়তা অব্যাহত রাখতে নতুন প্রণোদনা প্যাকেজের আবেদনও করা হবে।
বিকেএমইএ এর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বিষয়টি নিশ্চিত করে দ্য বিজেনস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের জন্য তারা সময় চেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সাক্ষাত করার সময় পেলে তারা দেখা করবেন। তাদের দাবিগুলো লিখিত আকারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে বিকেএমইএ'র বিশেষ সাধারণ সভায় সংগঠনটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেন, করোনার ফলে অর্ডার বাতিল হওয়া, সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়া, জাহাজে পণ্য পরিবহন ব্যয় ২০০-৩০০ শতাংশ বেড়ে যাওয়া, ঋণ পরিশোধে ব্যাংকের চাপ, কর সংক্রান্ত নানাবিধ অযৌক্তিক চাপের কারণে তৈরি পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।
এছাড়া আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তৈরি পোশাকখাতে চলমান অবস্থার উন্নতি না হওয়ার সম্ভাবনা আছে অথচ দুটি ঈদে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও বোনাস পরিশোধের বাধ্যবাধকতা আছে। এমন পরিস্থিতিতে সহায়তা অব্যাহত না রাখলে এই শিল্প টিকে থাকতে পারবে না।
বিকেএমইএ সভাপতি বলেন, 'এ অবস্থায় আমরা সুদ দিতে পারবো। প্রণোদনার আসল টাকা আপাতত দিতে পারবো না। আরও দুই বছর সময় দেয়ার দাবি জানাই। ব্যাংক গুলো ঋণের টাকা পেতে বেশি চাপ দিলে প্রতিটি কারখানা মালিক খেলাপি হয়ে পড়বে। যদি আমরা আটকে যাই তাহলে ব্যাংকসহ প্রতিটি খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ওই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে টাস্কফোর্স ফর আরএমজি এর প্রধান ও সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, 'সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ব্যবসাবান্ধব। আমরা আমাদের সমস্যার কথা তার কাছে পৌঁছে দিতে পারলেই সমাধান আসবে। তিনি ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে এনেছেন। আমাদের সমস্যা তৈরি করছে কাস্টমস, সেখানে দুর্নীতি আছে অতিমাত্রার। আমরা এটা চাই না, এ সমস্যার সমাধানে আমরা আবারও কথা বলব।'
এদিকে বুধবার বিকেএমই এর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পোশাকখাতের দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ১৪-১৫ বছর করার পক্ষে ব্যাংকগুলো রাজি থাকলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক এই সময়সীমা ৮ বছর নির্ধারিত করা আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সময়সীমা না বাড়ালে আগামী কয়েক মাসে অনেক পোশাক শিল্প মালিক খেলাপি হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিকেএমই নেতা মোহাম্মদ হাতেম জানান, এসব বিষয়ের পাশাপাশি তৈরি পোশাক খাত যেসব হয়রানির শিকার হচ্ছে সেটিও প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হবে।
তিনি জানান, যেসব রপ্তানিকারক স্থানীয় বাজার থেকে কাঁচামাল ব্যবহার করে পোশাক রপ্তানি করছেন তারা নগদ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ ধরনের রপ্তানিকারকদের তালিকা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা। বিকেএমইএ যে ইউডি দেয় সেটিও অবৈধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এসবের প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করা হবে বলে জানান মোহাম্মদ হাতেম।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, অনেক পোশাক মালিক না চাইলেও বন্ড সুবিধা ব্যবহার করতে তাদের বাধ্য করা হচ্ছে। এতে দেশীয় লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিজগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৈরি পোশাক খাতে বর্তমানে ভ্যালু এডিশন প্রায় ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকা রপ্তানি আয়ের বিপরীতে পোশাক রপ্তানি সংশ্লিষ্ট ৩৫ টাকার পণ্য আমদানি করতে হবে। এসব পণ্যের অনেকগুলোই বর্তমানে দেশে তৈরি হচ্ছে।
কোভিডের অভিঘাত মোকাবেলায় গেল বছর যে প্রণোদনা প্যাকেজ গঠন করা হয়েছিল তার মধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকা তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের বেতন ভাতা বাবদ রাখা হয়েছিল। এই পুরো টাকাই ঋণ হিসেবে বিতরণ হয়ে গেছে। চাহিদা পূরণ না হওয়ায় এ বাবদ অতিরিক্ত ৩ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল এর পরিমাণ দেড় বিলয়ন ডলার বাড়িয়ে ৫ বিলিয়নে উন্নীত করা হয়েছে। এই তহবিল থেকে গেল জানুয়ারি শেষে ৪.৫৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড় করা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি এই আট মাসে তৈরি পোশাকখাতের রপ্তানি আয় গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩.৭৩ শতাংশ কমেছে। এর মধ্যে ওভেন পোশাকের রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ। তবে নিট পোশাকের রপ্তানি ৪ শতাংশ বেড়েছে।