এক বা দুই ডোজ যা-ই হোক, সহজলভ্য ভ্যাকসিন গ্রহণের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে জনসন অ্যান্ড জনসনের এক ডোজের ভ্যাকসিন। কানাডা, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও ভ্যাকসিনটির ডোজ আগাম অর্ডার দিয়ে রেখেছে।
শীঘ্রই হয়তো অন্যান্য অনেক দেশেই ভ্যাকসিনটির সরবরাহ শুরু হয়ে যেতে পারে। তবে এই ভ্যাকসিনটির আগেই অনুমোদন পাওয়া অ্যাস্ট্রাজেনেকা/অক্সফোর্ড, ফাইজার/বায়োএনটেক, মডার্না বা সিনোভ্যাকের ২ ডোজ ভ্যাকসিনের বদলে এক ডোজের এই ভ্যাকসিন গ্রহণের ব্যাপারে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে পারেন।
জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিনের অন্যান্য ভ্যাকসিনের চেয়ে আলাদা কিছু সুবিধা রয়েছে। দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য দুটি ডোজের পরিবর্তে একটি ডোজ গ্রহণের সুবিধা ছাড়াও রেফ্রিজারেটরে বেশ কয়েক মাস সংরক্ষণ করা যায় এই ভ্যাকসিনটি। সবচেয়ে ইতিবাচক দিল হলো ভ্যাকসিনটি গুরুতর অসুস্থ হওয়া ও মৃত্যুবরণ থেকে সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা দিতে পারে এই ভ্যাকসিনটি। কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে গুরুতর অসুস্থ হওয়া থেকে ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে ভ্যাকসিনটি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ৬৬ শতাংশ কার্যকর জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন।
যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়টের মেয়র জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিনের চালান ফিরিয়ে দিয়েছেন এমন ঘটনাও ঘটেছে। তবে শুধু সংক্রমণ রোধের শতাংশের হিসাব দিয়েই একটির সঙ্গে অন্য ভ্যাকসিনের তুলনা করা কঠিন বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফাইজার বা মডার্নার ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের ক্লিনিকাল ট্রায়ালও চালানো হয় মহামারির ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন দেশে। যেসব দেশে জনসন অ্যান্ড জনসনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল চালানো হয় সেসব দেশেই প্রতিনিয়ত ভাইরাসের অধিক সংক্রামক নতুন স্ট্রেইনের দেখা মিলছে। এ সব পার্থক্যই ট্রায়ালে উঠে আসা কার্যকারিতার ফলাফলে আলাদাভাবে ভূমিকা রাখতে পারে।
ইয়েল ইউনভার্সিটির জনস্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জেসন শোয়ার্টজ এবিষয়ে বলেন, "সবগুলো ভ্যাকসিনই কার্যকর, একটি ভ্যাকসিনের সঙ্গে অন্যটির তুলনা করার কিংবা একটি আরেকটির চেয়ে ভালো বা খারাপ তা বলার উপায় নেই।"
এই ভ্যাকসিনটির অনুমোদন ভ্যাকসিন সংকট কমাতে ভূমিকা রাখবে, সেইসাথে যেসব অঞ্চলে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ দেওয়া কষ্টসাধ্য, সেসব দেশ ও অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জন্য এই ভ্যাকসিনটি আশির্বাদ হয়েই এসেছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস ফর হেলথের (এনআইএইচ) শীর্ষ রোগ সংক্রমক বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনী ফাউসি সম্প্রতি হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, "আপনাদের কাছে যে ভ্যাকসিন পৌঁছাবে, যেটি সহজলভ্য, সেটিই গ্রহণ করুন।"
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডা. রন ইয়ি বলেন, "এই মুহুর্তে সংক্রমণ কমানোই সবচেয়ে জরুরি, এটিই করতে হবে আমাদের। সব ভ্যাকসিনই গ্রহণযোগ্য।"
শুধু জনসন অ্যান্ড জনসনই নয়, যে কোনো ভ্যাকসিনের ব্যাপারে ভুল তথ্য ছড়ালে তা ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে আরও ঝুঁকিতে ফেলবে।
ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি হেলথ সার্ভিসের (আইসিএইচএস) প্রেসিডেন্ট তেরেসতিটা বাতায়োলা জানান, সময়ই নতুন ভ্যাকসিনের ব্যাপারে আশঙ্কা দূরে করে দেবে।
"জনসাধারণ এখনো কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা পাওয়ার ব্যাপারেই বেশি চিন্তিত। এক ডোজের ভ্যাকসিন আমাদের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করবে। ভ্যাকসিনটির ব্যবহারে আমরা অন্যান্য ভ্যাকসিনের চেয়ে দ্বিগুণ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে পারবো।"
এক ডোজের ভ্যাকসিন হোক বা দুই ডোজের, সুরক্ষাবিহীন থাকার চেয়ে যতো বেশি মানুষ ভ্যাকসিন নেবেন, ওই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর অনাক্রম্যতা (হার্ড ইমিউনিটি) অর্জনের সম্ভাবনাও ততো বৃদ্ধি পাবে। সব ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়ালেই ভ্যাকসিনের সংক্রমণ কমানো, আক্রান্ত হলে গুরুতর অসুস্থ হওয়া ঠেকানো ও মৃত্যুহার কমানোর প্রমান মিলেছে।
একারণেই বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জনসাধারণকে অতি সত্বর নিজ দেশে বা অঞ্চলে সহজলভ্য ভ্যাকসিন গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন।
- সূত্র: এনপিআর