যুক্তরাষ্ট্রে কোভিডে উচ্চ মৃত্যুহারের জন্য দায়ী স্থূলতা: প্রতিবেদন
বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি; সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে এই দেশটিতেই। সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন একটি প্রতিবেদনের মতে, ভাইরাসে উচ্চ মৃত্যুহারের জন্য দায়ী এর নাগরিকদের স্থূলতা।
দেশটির প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার শতকরা ৭০ভাগ অত্যধিক ওজনের অধিকারী।
ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি ফেডারেশনের (ডব্লিউওএফ) গবেষণায় দেখা গেছে, যে দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছে সেখানে কোভিডের মৃত্যুর হার ১০ গুণ বেশি।
আমেরিকাতে প্রতি এক লাখ মানুষে ১৫২.৫ জন কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন পাঁচ লাখের অধিক আমেরিকান।
শুধু কোভিডেই নয়, স্থূলতার দিক দিয়েও আমেরিকানরা সবার শীর্ষে। ডব্লিউওএফের মতে, সেখানে দুই-তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্কের বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স) ২৫ এর উর্ধ্বে। সাধারণত ১৮ থেকে ২৪ বিএমআই একক স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে বিবেচিত হয়; ৩০ এর ওপরে উঠলেই স্থূল। বর্তমানে ৭০ মিলিয়নের অধিক আমেরিকান স্থূলতায় ভুগছে।
এমনকি কিছু মার্কিন রাজ্য স্থূলতাকে তাদের দীর্ঘমেয়াদী (ক্রনিক) রোগের তালিকাভুক্ত করেছে এবং সে অনুযায়ী আক্রান্তরা যেন যথাযথভাবে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে পারে সে ব্যবস্থা নিয়েছে।
তবে স্থূলতার সাথে লড়াই করা হাজার হাজার আমেরিকানের কাছে ভ্যাকসিন তুলনামূলক দেরিতেই পৌঁছেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কৃশকায় বা ছিপছিপে গড়নের হলে দেশটিতে বিরাট সংখ্যক মানুষকে বাঁচানো যেত; হাসপাতালে মারা যাওয়ার ঝুঁকি কমত এবং এত কঠোর লকডাউন ব্যবস্থা গ্রহণেরও প্রয়োজন পড়ত না।
প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ পশ্চিমাদের জীবন চর্চার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাই এ প্রতিবেদনের ফলাফলকে তাদের জন্য ' ওয়েক আপ কল' হিসেবে বিবেচনা করতে বলেছে।
প্রতিবেদনটি বলছে, এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর ফলে বিশ্বের ২৫ লাখ মৃত্যুর ভেতর ২২ লাখ মৃত্যু সেসব দেশেই ঘটেছে যেখানে মানুষ স্থূলতায় আক্রান্ত।
সেখানে বলা হয়, 'বর্ধিত ওজন হাসপাতালে ভর্তির অন্যতম প্রভাবক এবং কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য উচ্চ মৃত্যুঝুঁকির কারণ"।
শুধু এই প্রতিবেদনেই নয়, টুফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক আরেকটি গবেষণা অনুমান করছে যে, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত দুই-তৃতীয়াংশ মার্কিনীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পেছনে চারটি দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক অবস্থা দায়ী ছিল- স্থূলত্ব, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ।
স্থূলতা একাই বাকি তিনটি রোগ বাড়িয়ে তুলতে অবদান রাখে!
টুফ্টসের ফ্রিডম্যান স্কুলের ডিন এবং গবেষণাটির প্রধান ড. দারিউশ মোজাফফারিয়ান বলেন, "আমরা জানি যে ওজন হ্রাস ছাড়াও কেবল ডায়েটের পরিবর্তনের মাধ্যমেও মাত্র ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে বিপাকক্রিয়া বাড়িয়ে দ্রুত স্বাস্থ্যের উন্নতি করা যায়।
শুধু করোনা মহামারীই নয়, ভবিষ্যতের মহামারী মোকাবিলার জন্যও এখন থেকেই জীবনচর্চায় পরিবর্তন আনতে হবে।"
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, অতিরিক্ত ওজনশীল বা স্থূলকায় লোকদের মারাত্মকভাবে কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে কেননা, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত কম থাকে।
অন্যদিকে প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, যেসব দেশে জনসংখ্যার ৪০ শতাংশেরও কম মানুষের অধিক ওজন রয়েছে, তাদের কোভিডে আক্রান্তের হার প্রতি লাখে ১০ জন মাত্র।
কোভিডে সর্বনিম্ন মৃত্যুহারের দেশটির নাম ভিয়েতনাম; যেখানে স্থূলতার হারও সবচেয়ে কম, মাত্র ৭.৩ শতাংশ। তালিকায় আরও এসেছে জাপান এবং সিঙ্গাপুরের নাম, এ দুই দেশের স্থূলত্ব এবং কোভিডে মৃত্যুর হার উভয়ই কম।
চীনের নিকটবর্তী হওয়া সত্ত্বেও দেশগুলো মহামারী চলাকালীন বিপর্যয় এড়াতে সক্ষম হয়।
- সূত্রঃ ডেইলি মেইল