ইতিহাসজুড়ে মঙ্গলকে যেভাবে কল্পনা করেছে মানুষ
বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান যত উন্নত হয়েছে, সৌরজগতের লাল গ্রহ নিয়ে জল্পনা-কল্পনাও যেন ততোই ডালপালা মেলেছে। মঙ্গলের কল্পিত অধিবাসীদের ধূর্ত আক্রমণকারী থেকে শুরু জলবায়ু শরণার্থী, এমনকি হিতৈষী নিরমিষাশী রূপেও কল্পনা করা হয়েছে।
জুপিটারকে রাজা, ইউরেনাসকে ভাঁড় আর প্লুটোকে অভাগা হিসেবে চিত্রায়িত করা হলেও সৌর জগতের সবথেকে জনপ্রিয় তারকা সম্ভবত মঙ্গল। গ্রহ হলেও মঙ্গলের এই তারকাখ্যাতি কিন্তু এক দিনে আসেনি। শতাব্দীর পর শতাব্দীর বিবর্তনে শক্তিশালী দেবতা থেকে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী আর হাল জমানার পপ সংস্কৃতিতে জায়গা করে নিয়েছে মঙ্গল। ইতিহাসজুড়ে মঙ্গল সম্পর্কে মানুষের ধারণাগুলো এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।
মার্স এবং ভেনাসের প্রণয় কাহিনী (১৫৭০)
বিপরীত আকর্ষণ: রোমান দেবতা মার্স আর দেবী ভেনাসের মাঝে প্রেমের সঞ্চারণ ঘটায় ছোট্ট কিউপিড। ১৫৭০ সালে পাওলো ভেরোনিজ চিত্রটি অঙ্কন করেন।
ওয়্যার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস (১৮৯৮)
পৃথিবীবাসীর সাথে মঙ্গল নিবাসীদের তুমুল যুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করছে এইচ জি ওয়েলের কুখ্যাত ঐতিহাসিক থ্রিলার 'ওয়্যার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস।'
মঙ্গলের বুকে খাল (১৯০৬)
১৯০৬ সালে প্রকাশিত এক বইতে আমেরিকান ব্যবসায়ী, লেখক ও গণিতবিদ পারসিভাল লওয়েল মঙ্গলের একটি মানচিত্র প্রকাশ করেন। তিনি দেখান বহু সেচ খালে আবৃত মঙ্গলের অবস্থা মৃতপ্রায়।
মঙ্গলে যাত্রা (১৯০৮)
'অ্যা ট্রিপ টু মার্স' নামের একটি ড্যানিশ নির্বাক চলচ্চিত্রে ১৯১৮ সালে মঙ্গল যাত্রা দৃশ্যায়িত হয়। সেখানে মঙ্গল নিবাসীদের নিরীহ হিতৈষী নিরামিষাশী হিসেবে তুলে ধরা হয়।
দ্য ম্যান ফ্রম মার্স (১৯৩৯)
ফ্যান্টাস্টিক অ্যাডভেঞ্চারসের জন্য ফ্র্যাংক আর পল মার্টিয়ান বা মঙ্গলবাসীদের চিত্র এঁকেছিলেন। পলের মার্টিয়ানদের ছিল টেলিপ্যাথিক ক্ষমতা। বরফে জমে যাওয়া থেকে বাঁচতে এই প্রাণীরা নিজেদের চোখ এবং নাক গুটিয়ে নিতে পারত।
প্রজেক্ট মার্স (১৯৪৮)
১৯৪৮ সালে জার্মান রকেট ইঞ্জিনিয়ার ভার্নার ভন ব্রাউন মানুষের মঙ্গল ভ্রমণ নিয়ে এক কল্পকাহিনী লিখেন। ব্রাউনের লেখাটি পরবর্তীতে 'প্রজেক্ট মার্স' নামে ইংরেজিতে অনূদিত হয়। ১৯৫৩ সালে পুনর্সংস্করণকৃত বইটিতে মঙ্গল যাত্রার বর্ণনা ছিল অসাধারণ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন।
ফ্লাইট টু মার্স (১৯৫১)
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নির্ভর এই নাটকে ভূগর্ভস্থ মঙ্গল অধিবাসীদের তুলে ধরা হয়। মানুষের মতোই ঐ প্রজাতির অস্তিত্ব ছিল সংকটে। পাতাললোকের এই মার্টিয়ানরা পরবর্তীতে পৃথিবী দখলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
মঙ্গলের পূর্ণ রঙিন চিত্র (১৯৫৪)
অ্যাস্ট্রোনমার ই সি স্লাইফার দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ১৯৫৪ সালে মঙ্গলের একটি চিত্র ধারণ করেন। তিনি ১৯৬২ সালে 'ফটোগ্রাফিক স্টোরি অব মার্স ১৯০৫-১৯৬১' প্রকাশ করেন।
মেরিনার ফোর (১৯৬৫)
১৯৬৫ সালে মেরিনার ফোর নামের মহাকাশজানটি মঙ্গলের বেশ কিছু ছবি তুলে পাঠায়। কিন্তু, মঙ্গলের এই চিত্র মানুষকে চূড়ান্ত হতাশ করে। চাঁদের মতো দেখতে এই গ্রহটিও ছিল খানা-খন্দে ভরা। প্রাণহীন এই গ্রহের কোনও এলিয়েনের ছায়াও দেখা যায়নি।
সাগানে'র চোখে মঙ্গল (১৯৬৭)
কার্ল সাগান ১৯৬৭ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের জন্য মঙ্গলের একটি কল্পিত চিত্র নির্মাণ করেন। সেখানে তিনি মার্টিয়ানদের র্যাডিয়েশন বিরোধী কাঁচে আবৃত অবস্থায় দেখান। বাঁধাকপির ন্যায় উদ্ভিদও দেখা যায় এই চিত্রে। রাত নামলে গুটিয়ে যায় এই উদ্ভিদ্গুলো। মার্টিয়ানদের দেখা যায় এই মাঙ্গলিক বাঁধাকপি খেতে।
মার্স ভাইকিংস (১৯৭৬)
নাসার ভাইকিং মিশনে দুইটি অরবিটার এবং দুইটি ল্যান্ডার ছিল। এই মিশনেই সর্বপ্রথম মঙ্গলের ভূ-পৃষ্ঠের সবথেকে কাছাকাছি উচ্চ রেজ্যুলিউশন সম্পন্ন চিত্র ধারণ করা হয়।
মার্স অ্যাটাকস (১৯৬৬)
১৯৬৬ সালে টিম বার্টন পরিচালিত সাই-ফাই চলচ্চিত্র 'মার্স অ্যাটাকস' মঙ্গল নিয়ে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করে। চলচ্চিত্রটিতে ভয়ংকর মার্টিয়ান এলিয়েনদের দেখা যায় পৃথিবীতে আতঙ্কের সৃষ্টি করতে। শেষ পর্যন্ত আঞ্চলিক এক গানের মাধ্যমে তাদের পরাস্ত করা সম্ভব হয়!
দ্য মার্টিয়ান (২০১৫)
মঙ্গলের প্রতিকূলতার মধ্যে টিকে থাকা নিয়ে ২০১৫ সালে নির্মিত হয় অ্যান্ডি উইয়ারের দ্য মার্টিয়ান। অ্যাস্ট্রোনট মার্ক ওয়াটনের চরিত্রে ওভিনয় করেন ম্যাট ডেমন। মৃত ভেবে এই মহাকাশচারীকে মঙ্গলে ফেলে যায় সহকর্মীরা।
স্টারশিপ (২০১৯)
স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক চাইলে টেক্সাসে নির্মিত অদ্ভূতদর্শন এই স্থাপনাটির কোনও সংস্করণ মানুষকে নিয়ে একদিন চাঁদ, মঙ্গলগ্রহসহ দূর-দূরান্তে পাড়ি জমাতে পারে!
- সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক