কোভিড ১৯: সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে বাড়ছে আইসিইউ’র চাহিদা
আবার বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু। সংক্রমণ বাড়ার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে। এরইমধ্যে কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড দুটি হাসপাতালের আইসিইউতে কোন বেড খালি নেই। চিকিৎসকেরা বলছেন, গত দুই মাসের তুলনায় আইসিইউ এর জন্য অপেক্ষমান রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ছয় দিন ধরে সরকারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনও আইসিইউতে বেড খালি নেই। এই হাসপাতাল দুটিতে আইসিইউ বেড রয়েছে যথাক্রমে ১০টি ও ১৪টি। অপরদিকে, বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালের ১২টি আইসিইউ বেডের সবগুলোতেই রোগী ভর্তি রয়েছে।
মুগদা জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট ডা. অনিরূদ্ধ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'হাসপাতালে কোভিড রোগী অনেক বেড়েছে। ১৫ দিন আগেও আইসিইউতে একটা বা দুইটা বেড খালি থাকতো। কিন্তু এখন আইসিইউ বেডের অপেক্ষায় থাকা রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে'।
ড. অনিরূদ্ধ বলেন, 'এখন রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপ হচ্ছে। ভ্যাকসিনেশন শুরু হওয়ায় মানুষ এখন মাস্ক পরছেনা, স্বাস্থ্যবিধি মানছেনা তাই রোগী বাড়ছে। ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েই মানুষ আর স্বাস্থ্যবিধি মানছেনা, তাই ভ্যাকসিন নেয়ার পরও আইসিইউতে রোগী মারা যাচ্ছে'।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত আইসিইউ বেড খালি আছে মাত্র ১১৯টি। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও (১ মার্চ) ঢাকার হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড খালি ছিলো ১৯০টি।
প্রায় দুই মাস ধরে সংক্রমণের হার ৫% এর নিচে ছিল। তবে গত সপ্তাহ থেকে নতুন রোগী শনাক্তকরণ এবং সংক্রমণের হার বাড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রোটোকল অনুসারে, সংক্রমণের হার টানা তিন সপ্তাহ ৫% এর নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে, বিবেচনা করা হয়।
বর্তমানে সংক্রমণ হার ৬% এর কাছাকাছি। দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও দু্ই মাস পর ১০০০ ছাড়িয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, 'কোভিড পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। আমরা মাস দুয়েক একটু শ্বাস ফেলার সুযোগ পেয়েছিলাম। কখনো একটা বেডও খালি রাখতে না পারলেও রোগীদের ওয়ার্ডে শিফট করা যাচ্ছিল। মৃত্যুহার অনেক কম ছিল। এক সপ্তাহের মাঝে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। আক্ষরিকভাবে রোগীদের বাঁচিয়ে রাখতে আমরা এখন যুদ্ধ করছি এবং হেরে যাচ্ছি'।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রায় ৫০% রোগী বেশি বেড়েছে। আইসিইউ বেডের জন্য রোগীর কিউ অনেক বেড়েছে'।
গত বছরের জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসের পিকটাইম ছিলো। সে সময় দেশে আইসিইউ বেডের জন্য হাহাকার তৈরি হয়েছিলো। আইসিইউ বেডের অভাবে অনেক রোগী মারা গেছেন। গরমে সংক্রমণ মোকাবেলায় আবারও আইসিইউ বেড বাড়ানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
প্রথিতযশা ভাইরোলজিস্ট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গরমে রোগী বাড়ছে। সামনে আরো রোগী বাড়বে। এখন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি হাসপাতালে আরো আইসিইউ বেড, অক্সিজেন, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যালুনার ব্যবস্থা করতে হবে'।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, 'হাসপাতালগুলোতে রোগী বাড়ছে। আইসিইউর চাহিদা বাড়ছে। তবে এখনো আমাদের বেড অকুপেন্সি রেটের তুলনায় রোগী কম আছে। প্রয়োজন অনুযায়ী হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান আছে। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড খালি আছে তবে ঢাকায় কিছুটা সংকট রয়েছে। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে জোর দিতে হবে। সংক্রমণ আরো বাড়লে আইসিইউ বেড বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে'।