কাদের মির্জাসহ ৯৭ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন ফেরত
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খানের ওপর হামলার ঘটনায় বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জাসহ ৯৭ জনের নামে আদালতে করা মামলার আবেদন ফেরত দিয়েছেন আদালত।
মামলাটি আমলে নেওয়ার এখতিয়ার না থাকার কথা উল্লেখ করে আদালত আবেদনটি ফেরত দিয়েছেন এবং বাদীকে আবেদনটি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে দায়ের করার পরামর্শ দিয়েছেন।
একই সঙ্গে মির্জার অনুসারী সালা উদ্দিন পিটনের দায়ের করা মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিকেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।
সোমবার বিকেলে নোয়াখালী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২নং আমলী আদালতের বিচারক এস এম মোসলে উদ্দিন মিজান এ আদেশগুলো প্রদান করেন।
বাদলকে প্রধান, সেতুমন্ত্রীর দুই ভাগিনাকে দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং এমদাদ হোসেনকে ৩২নং আসামী করে মির্জার অনুসারীর মামলা:
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকেলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের চাপরাশিরহাট পূর্ব বাজারে মিজানুর রহমান বাদলের নেতৃত্বে ১০৫জন সন্ত্রাসী মেয়র আবদুল কাদের মির্জার সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা কামাল পাটোয়ারীসহ বেশ কয়েকজনকে গুলি করে জখম করে। এ ঘটনায় ২০ ফেব্রুয়ারি মির্জার অনুসারী সালা উদ্দিন পিটন কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি এজাহার দায়ের করলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। তাই সোমবার পিটন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১০৫জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত নামা আরও ১০০-১৫০জনকে আসামী করে মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় কোম্পানীগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরর ভাগিনা মাহবুব রশিদ মঞ্জু, ফখরুল ইসলাম রাহাত, উপজেলা আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, সাধারণ সম্পাদক নূর নবী চৌধুরী ও নিহত আলা উদ্দিনের ছোট ভাই এমদাদ হোসেনকে আসামী করা হয়েছে।
মামলার আইনজীবী শংকর চন্দ্র ভৌমিক জানান, আদালত সালা উদ্দিন পিটনের মামলাটি গ্রহণ করে তদন্ত পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মির্জার বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে মঙ্গলবার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে যাবেন পারভীন:
সোমবার দুপুরে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২নং আমলী আদালতে মির্জাকে প্রধান আসামী করে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে একটি মামলা দায়ের করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খানের স্ত্রী আরজুমান পারভীন। মামলায় মির্জার ভাই শাহাদাত হোসেনকে দ্বিতীয় ও ছেলে মির্জা মাশরুর কাদের তাসিককে তৃতীয়সহ ১৬৪জনরে নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৫০-৬০জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এড. হারুন অর রশিদ হাওলাদার জানান, মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও তার লোকজন গত ৮মার্চ সন্ধ্যায় কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটে উপজেলা আ.লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খানের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে মারধর করে। এসময় হামলাকারীরা ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতংক তৈরি করে। এ ঘটনায় মামলার বাদী আরজুমান পারভীন কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। এ কারণে সোমবার আদালতে মামলাটি দায়ের করেন পারভীন। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক এস এম মোসলে উদ্দিন মিজান বিকেল তিনটায় মামলাটির শুনানি শেষে অত্র আদালতে দ্রুত বিচার আইনের মামলা নেওয়ার আইনগত সুযোগ না থাকায় মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে করার নির্দেশ প্রদান করেন।
গ্রেপ্তার আতংকে আত্মগোপনে ৮ জনপ্রতিনিধি:
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও সাত ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার আতংকে পলাতক আছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। গত তিন মাসের সৃষ্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু'টি হত্যাকাণ্ড এবং আওয়ামী লীগের বিবদমান দু'পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ, প্রশাসনের একাধিক বার ১৪৪ধারা জারি এবং একে অপরের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা দায়ের করেছে। এসকল মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপনে রয়েছেন।
এসব জনপ্রতিনিধিরা হচ্ছেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আজম পাশা চৌধুরী রুমেল, সিরাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর নবী চৌধুরী, চরপার্বতী ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন কামরুল, চরহাজারী ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হুদা, চরফকিরা ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন লিটন, রামপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরী, মুছাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চৌধুরী শাহীন এবং চরএলাহী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক।
পুলিশের অভিযানে মির্জার আরও ৩ অনুসারী গ্রেপ্তার:
সোমবার দুপুর ১টার দিকে বসুরহাট বাজারে অভিযান চালিয়ে মেয়র আবদুল কাদের মির্জার আরও ৩ অনুসারীকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন, চরপার্বতী ১নং ওয়ার্ডের জিয়াউল হকের ছেলে সিরাজুল হক হাসেম (৪৯), বসুরহাট পৌরসভা ২ নং ওয়ার্ড রামদী গ্রামের ওবায়দুল হকের ছেলে হুমায়ুন প্রকাশ মিন্টু (৩৫) ও একই গ্রামের সোবাহানের ছেলে মো. পারভেজ (২৫)।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধাসহ বিস্ফোরক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত রোববার একই আদালতে আবদুল কাদের মির্জাসহ ১৬৪জনের নাম উল্লেখ করে আলা উদ্দিন হত্যার ঘটনায় তার ভাই এমদাদ হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে শুনানী শেষে এই হত্যার ঘটনায় ইতোমধ্যে কোথাও কোন মামলা দায়ের হয়েছে কিনা তা আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে জানাতে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।