মৃত্যুর আগে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান আবরারের মা
কুষ্টিয়ার পিটিআই রোডের একতলা বাড়ি, যেখানে এক সময় বুয়েটের নিহত শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ পরিবার নিয়ে থাকতেন। এই বাড়িটিকে কিছুদিন আগেও এলাকার মানুষ একটি সুখী পরিবারের বাড়ি বলে জানতো। যেখানে অবসরপ্রাপ্ত এনজিও কর্মকর্তা বরকতউল্লাহ তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করতেন। কিন্তু হঠাৎ কয়েকদিন আগে বুয়েট ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীর নির্যাতনে তাদের আদরের ছেলে আবরার ফাহাদ নিহত হওয়ায় সবকিছুই যেন পাল্টে যায়।
নির্মম এই হত্যাকান্ডের পর আবরারের মা রোকেয়া খাতুন যেন শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন। ছেলের শোকে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। এখনো তিনি ঠিক মতো ঘুমাতে পারেন না। প্রতিবেশী স্বজনদের কাছে শুনে দীর্ঘদিন পর টিভির সামনে বসে আবরার হত্যার অভিযোগে ২৫ জনকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অভিযুক্ত করে পুলিশের চার্জশিট জমা দেওয়ার খবর দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বুক চাপড়ে হাত তুলে মোনাজাত করে আল্লাহ কাছে খুনিদের দ্রুত বিচার করার কথা বলে ফরিয়াদ করেন।
এ সময় রোকেয়া খাতুন (আবরারের মা) এবং তার স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের রোকেয়া খাতুন বলেন, “পুলিশ প্রশাসন আমাদের যথেষ্ঠ সহযোগিতা করেছেন এবং দ্রুততার সাথেই চার্জশিট দিয়েছেন। তবে যেহেতু আমরা এখনো চার্জশিটটি পড়িনি তাই অভিযোগপত্র নিরপেক্ষ দিয়েছে কিনা সেটা বলতে পারছি না। আমরা টিভিতে দেখেছি যে ১১ জন সরাসরি আমার ছেলেকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে সেখানে বুয়েট প্রশাসন জানার পরও কোন ব্যবস্থা নেয়নি।”
“পুলিশ যেভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে, তেমনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার চাওয়া, যেন দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার কাজ শুরু হয় এবং আসামিদের ফাঁসি দেওয়া হয় এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে এই রায় কার্যকর হয়।”
রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘‘আমি নিজ হাতে আমার বাবাকে মুখে তুলে খাইয়ে বাড়ি থেকে বিদায় দিয়েছিলাম। সেই ছেলেকে যারা কেড়ে নিয়েছে তাদের ফাঁসি দেখে যেন আমি মরতে পারি এটাই আমার শেষ ইচ্ছা।’’
আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বলেন, “এখন পর্যন্ত আমাদের যেটা চাওয়া ছিলো সেটা হলো এই ঘটনার সঠিক তদন্ত। মনে হচ্ছে সেটা হয়েছে।”
এই ঘটনায় যে চার আসামি এখনো পলাতক রয়েছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি করে ফাইয়াজ বলেন, “যেহেতু সবাই জানে বুয়েট কর্তৃপক্ষের এখানে কিছু গাফিলতি ছিলো তাই তাদের কিছু জবাবদিহিতার প্রয়োজন আছে।”
মামলা কার্যক্রম যেন দ্রুত শেষ হয় সেই ব্যবস্থা করার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ফাইয়াজ।