ইতিহাসের মাহেন্দ্রক্ষণ আয়োজনে যা বললেন বিশ্বনেতারা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন শুরু করেছে বাংলাদেশ।
বুধবার (১৭ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডে ১০দিন ব্যাপী এই আয়োজনের উদ্বোধন হয়।
অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ অনুষ্ঠানে সরাসরি যোগ দেন।
সোনার বাংলা স্বপ্নের সঙ্গে মেলবন্ধন গড়তে পারে চীনের বৃহৎ জাতীয় স্বপ্ন: চীনের প্রেসিডেন্ট
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে ভিডিওবার্তায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, "এখন দুদেশই পুনরুজ্জীবন ও উন্নয়নের খুব গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। চীনের বৃহৎ জাতীয় নবায়নের স্বপ্ন জোরালোভাবে 'সোনার বাংলা' স্বপ্নের সঙ্গে মেলবন্ধন গড়তে পারে।"
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে তিনি বলেন, "তিনি গোটা জীবন দেশ ও জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। এখনও বাংলাদেশের মানুষ তাই শেখ মুজিবকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। যে সোনার বাংলার স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, তা এখনও বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে জাতীয় পুনরুজ্জীবনের দিকে ধাবিত করছে।"
শেখ মুজিবকে চীনের 'পুরনো ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু' হিসেবে বর্ণনা করে প্রেসিডেন্ট শি বলেন, "১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে দুবার চীন সফরে তিনি চেয়ারম্যান মাও সে তুং ও প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইসহ জ্যেষ্ঠ চীনা নেতাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছিলেন।"
তিনি বলেন, "একটি চীনা প্রবাদে আছে 'পানি পানের সময় কূপ খননকারীকে ভুলো না', পূর্বপ্রজন্মের নেতারা কী করেছিলেন তা আমাদের সবসময় মনে রাখা উচিত।"
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কারণেই আজকের বাংলাদেশ: জাস্টিন ট্রুডো
শুভেচ্ছা বক্তব্যে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, "আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধুর শাসনামলেই বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক ও সহযোগিতার গড়ে উঠেছিল। শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নের কারণেই আজকের অনুষ্ঠান সম্ভব হচ্ছে।"
তিনি বলেন, "১৯৭৩ সালে বাবা যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন আমার বাংলাদেশ সফরে আসার সুযোগ হয়েছিল। আমার বাবা ও শেখ মুজিবুর রহমান তখনই একটি শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ৫০ বছরে এই দেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রসর হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেক ব্যাপ্ত হয়েছে, দারিদ্র্যের হার কমেছে, শিক্ষার হার বেড়েছে, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন হয়েছে, মানুষের জন্য নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।"
ট্রুডো বলেন, বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সামাজিক ও অর্থনৈতিক রূপান্তরের অভিজ্ঞতা পেয়েছে। এসব অগ্রগতিতে কানাডা সব সময় বাংলাদেশের সহযোগী ছিল।
"আমরা বাংলাদেশের অগ্রগতিতে অবদান রেখেছি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়, যুব কর্মসংস্থান, সব গুরুত্বপূর্ণ সব উন্নয়নে সহযোগিতা করেছি। আমাদের এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"
'জাপানের পতাকা মাথায় রেখে বাংলাদেশের পতাকা চিন্তা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু'
শুভেচ্ছা জানিয়ে ভিডিও বক্তব্যে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে শুগা বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মনে করতেন জাপানের উন্নয়ন মডেল অনুসরণযোগ্য।'
জাপানের জনগণের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, দুদেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি দৃঢ় উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
বর্তমান সম্পর্কের বিষয়ে জাপানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে জাপানি শিশুরা ত্রাণ সংগ্রহের জন্য যেমন অত্যন্ত পরিশ্রম করেছে, তেমনি ১০ বছর আগে যখন জাপানে একটি বড় ভূমিকম্প হয় তখন বাংলাদেশ ত্রাণ দিয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, 'বিশ্বাস, সহযোগিতা ও উভয়ের জন্য মঙ্গলজনক এই তিনটি জিনিষের ওপর ভিত্তি করে আমাদের প্রথাগত সম্পর্ক এখন আরও দৃঢ় ও মজবুত হয়েছে।'
প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন বঙ্গবন্ধু: মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ বলেন, "বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং জনগণের কঠোর পরিশ্রম দেশকে দ্রুত উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।"
তিনি বলেন, "এই মহতী আয়োজনে আমন্ত্রিত হয়ে আমি সম্মানিত বোধ করছি। শেখ মুজিবুর রহমান প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তার জীবন বাংলাদেশকে স্বতন্ত্র একটি পরিচয় দান করেছে।"
"সারাজীবন তিনি গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তার ছয় দফা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তি স্থাপন করেছিল। তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা। তার এই ভাষণ ইউনেস্কোর ডকুমেন্ট হেরিটেজের অংশ হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়েছে।"
করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে বাংলাদেশ যে সাহায্য মালদ্বীপকে করেছে, সে কথা তুলে ধরে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সলিহ বলেন, "মহামারীর মধ্যে সারা বিশ্ব একটি বিশেষ অবস্থার মধ্যে যাচ্ছে। মালদ্বীপ বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্বের জন্য কৃতজ্ঞ। এই বন্ধুত্ব মহামারী সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করছে।"