চট্টগ্রামে হেফাজতের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, কাউন্সিলর গিয়াসের সশস্ত্র মহড়া
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে হাটহাজারী মাদ্রাসার বিক্ষোভ মিছিলে ৪ জন নিহতের ঘটনায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতা-কর্মীরা। শনিবার দুপুর দেড়টায় (জোহর নামাজ শেষে) চট্টগ্রাম নগরের জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে হেফাজত ইসলামের প্রায় আড়াই-তিনশ নেতাকর্মী অংশ নেয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা শনিবার হাটহাজারীতে চারজন নিহতের প্রতিবাদে রোববার (২৮ মার্চ) সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশে হেফাজতে ইসলাম কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আল্লামা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, 'স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে দেশের মানুষ সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবে এটা স্বাভাবিক। আমরাও এই অনুষ্ঠানকে স্বাগত ও সাধুবাদ জানিয়েছি। কিন্তু সিংহভাগ মুসলমানদের দেশে ভারতে মুসলিম হত্যাকারী নরেন্দ্র মোদিকে এদেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে এদেশের মুসলমানকে অপমান করা হয়েছে। তাই দেশের তৌহিদী জনতা একসাথে মিলিত হয়ে মোদির আগমনের প্রতিবাদ জানিয়েছে। সেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিলে বিনা উস্কানিতে হামলা ও গুলি চালিয়েছে পুলিশ ও সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা। যেখানে আমাদের চারজন কর্মী নিহত হয়েছে'।
তিনি আরো বলেন, 'আমরা সরকারের কাছে এই হত্যার বিচার চায়। সরকার যদি এই হত্যার বিচার না করে, তাহলে তৌহিদী জনতার যেই লড়াই শুরু হয়েছে, এই হত্যার বদলা না নেয়া পর্যন্ত এই লড়াই চলবে'।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলাম কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমীর ও মহানগর সেক্রেটারি লোকমান হাকিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সায়েম উল্লাহ, আলী উসমান, চট্টগ্রাম মহানগর নেতা ইউছুফ বিন ইয়াকুব, মাওলানা শামীম ও মির্জা ইয়াছিন।
হেফাজত ইসলাম কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমীর ও চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি হাফেজ মাওলানা তাজুল ইসলাম বিক্ষোভ মিছিল শেষে মোনাজাত পরিচালনা করেন।
এদিকে হেফাজতের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল শেষে প্যানেল মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে সশস্ত্র বিক্ষোভ করে একদল যুবক। যাদের হাতে হকি স্টিক, লাঠি-সোটাসহ বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র দেখা যায়। এই সময় পুলিশকে এলাকাজুড়ে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়।
এদিকে শনিবারও (২৭ মার্চ) হাটহাজারীর পরিস্থিতি ছিল থমথমে। এলাকায় র্যাব সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এলাকার বিভিন্ন স্থানে সড়কে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দেওয়ায় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এলাকার দোকানপাটও বন্ধ রাখা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার (২৬ মার্চ) দুপুরে হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা থেকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এই সময় পুলিশের সঙ্গে হেফাজত নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে হেফাজতের তিন কর্মীসহ চারজন নিহত হয়।
এর প্রতিবাদে সারাদেশে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ পালনের ঘোষণা দেন হেফাজত ইসলামের আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি আগামীকাল রোববার (২৮ মার্চ) সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে হরতাল কর্মসূচি পালন করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
শুক্রবার (২৬ মার্চ) রাতে হাটহাজারীর সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মুফতি জসিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব নাসির উদ্দিন মুনির, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদরিসসহ একটি প্রতিনিধি দল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করলেও কর্মসূচি প্রত্যাহার করেনি হেফাজতে ইসলাম।