করোনাকালেও আলু রপ্তানিতে রেকর্ড
করোনাকালে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে রেকর্ড পরিমাণ আলু রপ্তানি হয়েছে। চলতি অর্থবছর শেষ হতে এখনো আড়াই মাস বাকি থাকলেও গত অর্থবছরের চেয়ে ১৫,১৯১ মেট্রিক টন আলু রপ্তানি বেশি হয়েছে। অর্থবছর শেষে এই পরিমাণ আরো প্রায় ৫ হাজার টন বেশি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০২০-২১ অর্থবছরের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত আলু রপ্তানি হয় ৪৬,৫৯৩ মেট্রিক টন।
দেশে মোট আলু রপ্তানির ৯৫ ভাগ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বাকি ৫ ভাগ বাংলাবান্দা দিয়ে রপ্তানি হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আলু রপ্তানির মেট্রিক টন প্রতি গড় মুল্য ২৫০ ইউএস ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে আলু রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ১১.৬৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
আলু রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, দেশের রপ্তানি খাতকে উৎসাহিত করতে সরকার আলু রপ্তানি খাতে নগদ ২০% আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করছে। তাছাড়া দেশে আলুর মোট চাহিদার প্রায় ৩০ ভাগ বেশি উৎপাদন হয়। বিশ্ববাজারেও বাংলাদেশে উৎপাদিত আলুর প্রচুর চাহিদা। বিশ্ব বাজারের চাহিদাকে কাজে লাগানো গেলে বাংলাদেশ এই খাত থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের (প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টিন স্টেশন) তথ্য অনুসারে, ২০২০-২১ অর্থবছরের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত আলু রপ্তানি হয় ৪৬,৫৯৩ মেট্রিক টন। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে ৩১৪০২ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩২,০৮৯ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৯ হাজার ৩৫৯ মেট্রিক টন আলু রপ্তানি হয়।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ পরিচালক মো: নাছির উদ্দিন বলেন, চলতি অর্থবছরের পুরোটা সময়জুড়ে করোনার নেতিবাচক প্রভাব থাকলেও আলু রপ্তানি অন্য যে কোন বছরের তুলানায় অনেক বেশি হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটিকালীন সময়ে অন্য সরকারী অফিস বন্ধ থাকলেও সমুদ্রপথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য অব্যাহত রাখতে সচল থাকে এই দপ্তরের কার্যক্রম। চলতি অর্থবছরের বাকি আড়াই মাসে রপ্তানির পরিমাণ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী দেশে গড়ে প্রায় ৮০ লাখ টন আলু উৎপাদিত হচ্ছে। দেশের চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৩০ ভাগ উৎপাদন বেশি হওয়ায় আলু চাষীরা ন্যায্যমূল্য পায়না। উৎপাদন মৌসুমে ন্যায্যমূল্যের আশায় বিকল্প হিসেবে কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষণ করতে না পেরে আলুর চাষিরা অনেক সময় তা কম মূল্যে বিক্রি করে দেয়। উৎপাদন উদ্বৃত্ত আলু রপ্তানিতে সরকার আরো উদ্যোগী হলে রপ্তানি খাতে আলু মাইলফলক সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে রপ্তানির প্রায় ৮০ ভাগ আলু যায় মালয়েশিয়ায়। এছাড়া ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ, বাহরাইন, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ব্রুনাই, ওমান, হংকং, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে আলু রপ্তানি হয়। বাংলাদেশ মূলত ৪ ধরনের আলু রপ্তানি করে। এর মধ্যে রয়েছে গোলাকৃতির ৫০ গ্রাম থেকে ১৫০ গ্রামের আলু। রপ্তানির আইটেম হিসাবে এ ধরনের আলুকে বলা হয় 'গানালা। ডিম্বাকৃতির ৫০ গ্রাম থেকে বেশি ওজনের ডায়মন্ড আলু, ৮০ গ্রাম থেকে ১২০ গ্রাম ওজনের গোলাকৃতি মানিলা আলু এবং ৬০ গ্রামের বেশি ওজনের রেড পটেটো।
বাংলাদেশ পটেটো এক্সপোর্টার এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. শেখ আবদুল কাদের দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গত বছরের তুলনায় আলু রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। এটি কৃষি পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক। তবে এই পরিমাণকে আরো দ্বিগুণ করার সুযোগ রয়েছে।