ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছাবে ২০২১ সালের কার্বন নিঃসরণ
মহামারি থেকে বড় আকারের অর্থনৈতিক উত্তরণের পথে রয়েছে বিশ্ব, আর এই বিকাশ অব্যাহত থাকলে চলতি বছর কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছাবে, বলে আভাস দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে শক্তি উৎপাদনের জন্য নানা ধরনের জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে সৃষ্ট কার্বন নিঃসরণের প্রাক্কালন করেছে। ওই সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর নিঃসরণের মাত্রা ১৫০ কোটি টন পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর প্রধান কারণ, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য চীনসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের উদ্যোগ শক্তিশালী হওয়ার পরও কয়লাই এই অঞ্চলের প্রধান অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি হিসেবে রয়ে গেছে।
সংস্থাটির আভাস বাস্তবে রূপ নিলে তা হবে রেকর্ডকালীন ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বার্ষিক কার্বন নিঃসরণের ঘটনা।
আইইএ নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরল এক বিবৃতিতে বলেন, "কোভিড-১৯ থেকে উত্তরণের বর্তমান চরিত্র যে পৃথিবীর প্রাণ-প্রকৃতির সহযোগী নয়, সেই সম্পর্কে প্রতিবেদনটিকে সমূহ বিপদ সংকেত মনে করতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, অর্থনৈতিক বিকাশ টেকসই ও পরিবেশ সম্মত উপায়ে হচ্ছে না। বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো যদি নিঃসরণ কমাতে এখনই উদ্যোগী না হয় তবে ২০২২ সালে আমরা আরও ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হব।"
ইতোপূর্বে, বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার পর ১০ বছর আগে উত্তরণের কালে কার্বণ দূষণের মাত্রা বেড়েছিল, তারপরই চলতি বছরের বৃদ্ধি হবে ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তাই সরকারগুলোর দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যর্থতা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার লক্ষ্যপূরণকে অসম্ভব করে তুলবে বলে হুঁশিয়ার করেছে আইইএ।
জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষণ সৃষ্টিকারী ও অপরিচ্ছন্ন জ্বালানি হলো কয়লা। এশিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রেও সস্তায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যে রয়েছে কয়লার ব্যাপক ব্যবহার। কয়লার চাইতে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সস্তা হওয়ার পরও বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রে কয়লার ব্যবহার পুনরায় বাড়তে থাকার বিষয়টি বেশ উদ্বেগের।
এব্যাপারে প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ফাতিহ বিরল বলেন, "চলমান দশা আমাদের একই সাথে বিস্মিত এবং আতঙ্কিত করে। কারণ, একদিকে বিশ্বের সরকারগুলো বলছে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাকে তারা প্রাধান্য দিচ্ছে। তবুও আমরা ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নিঃসরণ বৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি, যা সত্যিই হতাশজনক।"
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পরিমাণ ১.৫ সেলসিয়াস বৃদ্ধি পর্যন্ত সীমিত রাখতে হলে চলতি দশকে ৪৫ শতাংশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমাতে হবে বলে বিজ্ঞানীরা আগেও সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। ২০২০ এর দশকই পৃথিবীর সামনে শেষ সুযোগ, এই সময়ে বৈশ্বিক অর্থনীতিকে পরিবেশবান্ধব ভাবে ঢেলে না সাজালে বায়ুমণ্ডলে কার্বনের মাত্রা এতো বেড়ে যাবে, যা বিপজ্জনকভাবে উষ্ণতা বাড়াবে। "কিন্তু কোভিডের পর যেভাবে বর্তমানে নিঃসরণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে করে দশকের শুরুতে আসা পরিবর্তনটি মোটেই ইতিবাচক কিছু নয়," বলে মন্তব্য করেন আইইএ নির্বাহী পরিচালক।
পূর্ববর্তী আর্থিক মন্দার পর ২০১০ এর উত্তরণকালের অতি দূষণের সঙ্গে বর্তমানের সাদৃশ্য রয়েছে বলে জানান বিরল। ওই সময়ে বৈশ্বিক কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ ৬ শতাংশ বেড়েছিল বিভিন্ন দেশের সস্তা জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে চাঙ্গা করার সিদ্ধান্তে। "আজ মনে হচ্ছে, আমরা পুরোনো সেই ভুল আবার করতে চলছি, তাই ২০১০ সালের চাইতেও আমি এখন অনেক বেশি মর্মাহত," তিনি যোগ করেন।
উল্লেখ্য, গেল বছর পৃথিবীজুড়ে অতিমারি হানা দেওয়ার পর লকডাউনের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা প্রায় স্থবির হয়ে পড়লে, বার্ষিক হিসাবে নিঃসরণও ৭ শতাংশ কমে। কিন্তু, বছরের শেষদিক থেকে অর্থনীতি সচল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০১৯ সালের দূষণ মাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে বিশ্বের অনেক অঞ্চল।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান