এবারের লকডাউনেও বেড়েছে পণ্যমূল্য, এপ্রিলের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৫.৫৬ শতাংশ
কয়েক মাস ধরে নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্যেই এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৫৬ শতাংশে। মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট (আগের বছরের একই সময়ের তুলনায়) মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৪৭ শতাংশ। করোনা ভাইরাসের কারণে দ্বিতীয় দফায় লকডাউনের প্রথম মাসে মূল্যস্ফীতি ৯ বেসিস পয়েন্ট বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
বোরো ধান আসার ভরা মৌসুম হিসেবে পরিচিত এপ্রিলে ৬ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫.৫৭ শতাংশে। একই সময়ে ৫.৩৯% থেকে বেড়ে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫.৫৫ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনায় লকডাউনে কাজ হারিয়ে নিম্ন আয়ের লোকজন এমনিতেই বেকায়দায় রয়েছেন। এ সময়ে পণ্যের বাড়তি দাম তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আয় কমে আসার বিপরীতে দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই খাদ্যপণ্য কম কিনছেন। পুষ্টি ও উৎপাদনশীলতায় এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও তাদের আশঙ্কা।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত বছরের মার্চের শেষের দিকে করোনার কারণে ঘোষিত প্রথম দফার লকডাউনেও পণ্য সামগ্রীর দাম ব্যাপক হারে বেড়েছিল। এক মাসে ৪৮ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছিল ৫.৯৬ শতাংশে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক (সিপিডি) ড. ফাহমিদা খাতুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, সরবরাহের শৃঙ্খল ব্যাহত হওয়ার কারণে যেকোনও দুর্যোগে পণ্যের দাম বাড়তে পারে। কিন্তু এপ্রিল মাসে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির পিছনে কোনও কারণ ছিল না কারণ সরকার পণ্যবাহী চালানকে লকডাউনের আওতার বাইরে রেখেছিল।
ড. ফাহমিদা বলেন, লকডাউন অবস্থায় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং পণ্যগুলোর একটি কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছিল, যার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দরিদ্ররা।
তিনি আরও বলেন, উন্মুক্ত অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনও ম্যান্ডেট থাকে না, তবে অনুদান, ভর্তুকি ইত্যাদি প্রদানের মাধ্যমে মধ্যম দরিদ্র এবং সরাসরি নগদ অর্থ সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে অতি দরিদ্রদের জন্য বাজার পরিচালনার বিধান গ্রহণ করা যায়।
গতকাল প্রকাশিত বিবিএসের 'গ্রাহক মূল্য সূচক (সিপিআই), মুদ্রাস্ফীতি হার এবং মজুরি হার সূচক' অনুসারে গত বছরের মে থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১২ মাসের গড় মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৫.৬০%, যা মে ২০১৯-এপ্রিল ২০২০ সময়কালে ৫.৬৩% ছিল।
শহরাঞ্চলে এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৩৯% যা গ্রামীণ অঞ্চলের ৫.৬৬% এর তুলনায় কম।
মার্চের তুলনায় এপ্রিল মাসে খাদ্য ও পানীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি বাড়ে ০.৯৩% এবং আসবাব, গৃহস্থালী সরঞ্জাম, পরিবহন ও যোগাযোগ, চিকিৎসা ব্যয় ও অন্যান্য পরিষেবার উল্লেখযোগ্য মূল্যবৃদ্ধি ঘটে।
বিবিএসের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে যে, মার্চ মাসে ৫.৫৫% এর তুলনায় গ্রামীণ অঞ্চলে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৬৬%। এছাড়া, শহরাঞ্চলে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি এপ্রিলে সামান্য বেড়ে ৫.৩৯% হয়েছে, যা মার্চে ছিল ৫.৩১%।
গ্রামাঞ্চলে এপ্রিলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৮৮%, যা এ বছরের মার্চ মাসে ৫.৮৩% ছিল।
শহরেও এপ্রিল মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি লক্ষ্য করা গেছে ৪.৮৭% যা মার্চের ৪.৮% এর চাইতেও ৭ বেসিস পয়েন্ট বেড়েছে।