বাঁশখালীতে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট, ইঞ্জিনিয়ার গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার দায়ে শাহনেওয়াজ চৌধুরী (৩৭) নামে স্থানীয় এক প্রকৌশলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৮ মে) বাঁশখালীর পূর্ব বড়ঘোনা এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তারের পর তাকে ওই দিনই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় বাঁশখালী থানা পুলিশ।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এসএস পাওয়ার লিমিটেডের চিফ কো-অর্ডিনেটর ফারুক আহমেদের দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ফেসবুকে আক্রমণাত্মক মিথ্যা তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করে বিদ্বেষ, অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপরাধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। শাহনেওয়াজ চৌধুরী বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা গ্রামের রশিদ আহমদের ছেলে।
মামলার বাদী ফারুক আহমেদ টিবিএসকে বলেন, "জনৈক শাহনেওয়াজ চৌধুরী তার ফেসবুক আইডি থেকে এসএস পাওয়ারের বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে ফেসবুকে মিথ্যা ও বিদ্বেষপূর্ণ তথ্য ছড়ায়। গত ১৭ এপ্রিলের দুর্ঘটনার পর এমনিতেই এক ধরনের অস্থিরতা রয়েছে। পুনরায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি করতে ওই ব্যক্তি ফেসবুকের মাধ্যমে লোকজনকে প্ররােচিত করার চেষ্টা করেছেন। তাই শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে বৃহষ্পতিবার রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করি। ওই ব্যক্তি পেশায় একজন প্রকৌশলী বলে জানতে পেরেছি"।
ইঞ্জিনিয়ার শাহ নেওয়াজ চৌধুরী নামের ফেসবুক আইডিতে উল্লেখ করা হয় "টুয়েলভ মার্ডারের (১২ খুনের) পরিবেশ বিধ্বংসী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে বাঁশখালীর মানুষ মনে করেছিল গন্ডামারা ইউনিয়ন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। আজ দেশের মানুষ প্রকৃতপক্ষে দেখতে পাচ্ছে গন্ডামারাবাসী জোয়ারের পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। বাঁশখালীর তরুণ ও যুবসমাজকে সাহসী লেখনীর মাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং উন্নয়নের পক্ষে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে নির্ভয়ে"। ওই পোস্টে কয়েকটি ছবিও আপলোড করা হয়।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ শফিউল কবির বলেন, "কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় শাহনেওয়াজ নামে জনৈক ব্যক্তিকে শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়। ওই দিন বিকেলে আদালতে পাঠালে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন"।
প্রসঙ্গত, বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা এলকায় নির্মাণাধীন এসএস পাওয়ার প্লান্টে শ্রমিক বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে গত ১৭ এপ্রিল ৭ জন শ্রমিক নিহত হয়। এর আগে ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ৫ জন স্থানীয় গ্রামবাসী নিহত হয়।
অভিযোগ রয়েছে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অনেক গ্রামবাসীকে সঠিক ক্ষতিপূরণ না দিয়ে তাদের ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং জমি অধিগ্রহণের সময় কোম্পানী ওই প্রকল্পে তাদের চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিলেও বর্তমানে বাঁশখালী এলাকার বাইরের লোকজনেক চাকরি দিয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। গত ১৭ এপ্রিল বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় পুলিশের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি মামলায় অজ্ঞাতনামা সাড়ে ৩ হাজার গ্রামবাসীকে আসামী করা হয়। এ নিয়ে গ্রামবাসীদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।