বাজেটে শহরের বাইরে নতুন হাসপাতাল স্থাপনে কর অবকাশ
সাশ্রয়ী খরচে উন্নত মানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আসন্ন বাজেটে বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণে বিনিয়োগকারীদের ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিশেষ এই কর সুবিধা পেতে বিনিয়োগকারীদের ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও বিভাগীয় শহরের বাইরে অন্তত ২০০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল অথবা, ২৫০ শয্যার সাধারণ হাসপাতাল স্থাপন করতে হবে।
বর্তমানে, দেশের প্রায় সকল বিশেষায়িত হাসপাতাল ঢাকা এবং চট্টগ্রাম নগরে অবস্থিত। বিশেষজ্ঞ এবং উদ্যোক্তাদের মতে, নতুন এই উদ্যোগ সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে বিনিয়োগকারীদের প্রান্তিক অঞ্চলে বিনিয়োগে উৎসাহিত করবে।
মহামারির সময় সরকারের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উদ্যোগটি গৃহীত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডক্টর শাফিউন নাহিন শিমুল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাদি বিকেন্দ্রীকরণ করা দারুণ একটি সিদ্ধান্ত হতে চলেছে। প্রায় সকল বিশেষায়িত হাসপাতালই এখন ঢাকা এবং চট্টগ্রাম নগর অঞ্চলে অবস্থিত।"
তিনি আরও বলেন, "কর অবকাশ সুবিধার কারণে বেসরকারি উদ্যোক্তারা স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন।"
শহরের বাইরে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আগ্রহী করে তুলতে সরকারের বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অন্যথায়, প্রান্তিক পর্যায়ের হাসপাতালগুলো বিশেষজ্ঞ সংকটে পড়বে।
দেশের স্বাস্থ্যখাতের জন্য বিষয়টিকে মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রীতি চক্রবর্তী। এর ফলে, প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষকে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা সহজ হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
"স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়ে আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে এই মহামারি," বলেন তিনি।
ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী আরও জানান, "নতুন বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোর ওপর সরকারকে যথাযথ নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে।"
এছাড়া, বর্তমানে যেসব হাসপাতাল আছে, সেখানে সরকারকে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সরকারি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসি,আর) উপদেষ্টা ডক্টর মোহাম্মদ মুশতাক হুসাইন বলেন, "মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে আমাদের আরও হাসপাতাল প্রয়োজন। কিন্তু মহামারির সময়, আমাদের প্রথম কাজ হলো সংক্রমণ রোধ করে রোগীর সংখ্যা সীমিত রাখা।"
সেক্ষেত্রে, যথাযথ চিকিৎসা সেবা প্রদান করা সহজ হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
"হাত ধোয়া, মাস্ক পরিধান এবং সংক্রমিত হলে সেলফ-কোয়ারেন্টাইন রক্ষার মতো বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে জনস্বাস্থ্য কার্যক্রমে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা জরুরি," বলেন তিনি।
সরকার যদি জনস্বাস্থ্য খাতে গবেষণায় বরাদ্দকৃত তহবিলের পরিমাণ না বাড়ায় তাহলে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও কঠিন পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে বলে সতর্ক করেন তিনি।
হাসপাতালগুলোর বর্তমান অবস্থা:
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি খাতের হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সংখ্যা ছয় হাজার ২০১টি। অন্যদিকে, বিশেষায়িত হাসপাতালের সংখ্যা মাত্র ২৩টি।
২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে ১৫ হাজার ৭২৮টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ব্লাড ব্যাংক রেজিস্ট্রেশন করে।
রেজিস্ট্রিকৃত বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের সংখ্যা ৫ হাজার ২৩১টি। অন্যদিকে, রেজিস্ট্রিকৃত বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১০ হাজার ৪০৭টি।
রেজিস্ট্রিকৃত বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে মোট শয্যা সংখ্যা ৯১ হাজার ৫৩৭টি।
স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন সূত্রের তথ্যানুযায়ী, অধিকাংশ বিশেষায়িত হাসপাতাল ঢাকা এবং চট্টগ্রামে অবস্থিত।