শয্যা সঙ্কটে হিমশিম খাচ্ছে সীমান্তবর্তী জেলার হাসপাতালগুলো
সীমান্তবর্তী জেলার হাসপাতালগুলো উদ্বেগজনক হারে সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে কোভিড-১৯ রোগীর চাপ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য বেড রয়েছে ২৬৪টি। গত মঙ্গলবার (৮ জুন) সেখানে ভর্তি ছিলেন ২৭৭ জন রোগী। ১৩ জন কোভিড রোগীকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কোন সিট খালি নেই আইসিইউতে।
শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ নয়, রোগী বাড়ায় চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজসহ সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর হাসপাতালগুলো রোগী সামলাতে টালমাটাল দশায় পড়েছে।
এনিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আগে আমাদের হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য ১৩৫টি জেনারেল বেড ছিল। রোগীর চাপ বাড়ায় মঙ্গলবার আরেকটি ওয়ার্ড চালু করা হয়। এখন কোভিড ইউনিটে মোট বেড ২৬৪টি। আমরা আইসিইউতে দশটি থেকে বাড়িয়ে ১৮টি শয্যা করেছি। আরো শয্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে যে হারে রোগী বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে।"
গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেল ৩৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে। এর আগের দিন ভর্তি করা হয় ৩৩ জনকে।
রাজশাহীতে সংক্রমণ মোকাবেলায় অ্যান্টিজেন টেস্ট বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন এক হাজার অ্যান্টিজেন টেস্ট করার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার টিবিএস'কে বলেছেন, অ্যান্টিজেন টেস্টে যারা কোভিড পজেটিভ হচ্ছে তাদের কোয়ারেন্টাইন করা হচ্ছে। এছাড়া, হাসপাতালে রোগীর চাপ সামলাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পাশাপাশি অন্য প্রতিষ্ঠানে বেড বাড়ানো হবে।
রাজশাহীতে স্থানীয় অধিবাসীদের অ্যান্টিজেন টেস্টে উদ্বুদ্ধ করার কর্মসূচির অংশ হিসেবে টিসিবির পণ্য ক্রেতাদের টেস্ট করা হচ্ছে। চাপাইনবাবগঞ্জের জেলা হাসপাতালের ৫০ বেডের করোনা ইউনিটে কোন বেড খালি নেই।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও কোভিড ইউনিটের মুখপাত্র ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ১০০টি। বর্তমানে রোগী ভর্তি আছে ১৩০ জন। কোভিড ওয়ার্ডের বাইরেও রোগী ভর্তি রয়েছে। আইসিইউয়ের ২০টি বেডের একটিও খালি নেই।
এদিকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর)
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) ১০ শতাংশের বেশি সংক্রমণ হার থাকা জেলাগুলোকে 'উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল' হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আর ৫-৯ শতাংশ হার থাকা জেলাগুলোকে 'মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ' ও ৫ শতাংশের নিচের জেলাকে 'স্বল্প ঝুঁকির অঞ্চল' হিসেবে চিহ্নিত করছে।
বুধবার নাগাদ নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ৩৬ শতাংশের বেশি পজিটিভ শনাক্তের হার নিয়ে শীর্ষে ছিল খুলনা বিভাগ। গত কয়েক সপ্তাহ চাপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছিল বেশি।
তবে গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় পরীক্ষার বিপরীতে পজিটিভ শনাক্তের হার ছিল প্রায় ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। গত শনিবার থেকে জেলায় লকডাউন চললেও, এখনও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটেনি। এ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮২টি নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ শনাক্ত হন ১০৮ জন।
এছাড়া, ৩২ শতাংশ পজিটিভ শনাক্তের হার নিয়ে রংপুর জেলাতেও সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক প্রাদুর্ভাবের লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে। উত্তরপশ্চিমের নাটোর, জয়পুরহাট এবং বগুড়াতেও বাড়ছে সংক্রমণ হার।
তবে করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় নওগাঁ পৌরসভা ও নিয়ামতপুর উপজেলার সর্বাত্মক লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। এর পরিবর্তে জেলাজুড়ে ১৫ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে নওগাঁ জেলা প্রশাসন।
সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান, শপিংমল ও মার্কেট খোলা রাখা যাবে। তবে চায়ের স্টল বন্ধ থাকবে। জেলার সকল পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউিনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। সকল ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বিবাহ অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।