সাতক্ষীরায় বন্ধ সাকিবের কাঁকড়া খামার, পাওনা টাকা ও জমি ফেরত চায় মালিকরা
২০১৬ সালে সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলায় "সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেড" নামে একটি হ্যাচারি কাঁকড়া খামার গড়ে তোলেন জাতীয় দলের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
সম্প্রতি, বিপাকে পড়েছেন সাকিবের সঙ্গে চুক্তিতে যাওয়া জমির মালিক ও ফার্মের সঙ্গে লেনদেন করা অন্যান্য কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা। গত বছর থেকে খামারটি বন্ধ থাকায় পাওনা টাকা বা জমি কোনোটাই ফেরত পাচ্ছেন না জমির মালিকরা।
২০১৬ সালের পয়লা জানুয়ারি শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের উপকূলীয় দাতিনাখালি এলাকায় ৪৮ বিঘা জমির ওপর কাঁকড়া প্রকল্পের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তি করা হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, স্থানীয় ১২ জন জমির মালিকের কাছ থেকে প্রতি বিঘা জমি ১২ হাজার টাকা হিসেবে ইজারা নেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ তার দুই ব্যবসায়িক সহযোগী সাহাগীর হোসেন পাভেল ও মো. ইমদাদুল হক।
জমির চুক্তিনামার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর।
প্রকল্পে জমি ইজারাদানকারী আবদুল মজিদের ছেলে সাইফুল ইসলাম জানান, অনেক আগেই ক্রিকেটার সাকিবসহ তিনজনের সঙ্গে জমির চুক্তিপত্রের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এছাড়া, এর আগে সাকিব আল হাসানের নামে সাইনবোর্ড থাকলেও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে সাকিবের নামের কোনো অস্তিত্ব নেই। পাশাপাশি, বর্তমানে খামারটি বন্ধ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
"চুক্তির মেয়াদ ছয় মাস আগে শেষ হয়েছে। আমার বাবা প্রকল্পে সাড়ে পাঁচ বিঘা জমি দেন। বর্তমানে ১৯ হাজার টাকা বাকি থাকলেও তারা তা পরিশোধ করছে না," বলেন তিনি।
"মেয়াদ শেষ হলেও তারা নতুন করে চুক্তি করছে না। এমনকি জমিও ফেরত দিচ্ছে না," অভিযোগ জমির আরেক মালিকসাইফুল ইসলামের।
সাকিবের প্রকল্পে ১৭ শতক জমি ইজারা দিয়েছিলেন সুরাত আলী গাজী। তিনি জানান, "আমি এখনও ৬৫ হাজার টাকা পাব।"
জমি ইজারা দেওয়া আরেক চুক্তিকারী আবুল বাসার বলেন, "সাকিব একজন আন্তজার্তিক মানের ব্যক্তিত্ব। তাকে দেখেই আমরা জমিটা দিয়েছিলাম। এখন জমিও ফেরত পাচ্ছি না আবার টাকাও পাচ্ছি না। মৌখিকভাবে আমরা ঘটনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। তিনিও কোনো সু্রাহা করতে পারেননি।"
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তার ব্যবসায়িক সহযোগীদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ সকল জমির মালিকদের।
সামসুদ্দীন গাজী বলেন, "একজন স্বনামধন্য ক্রিকেটার হিসেবে আমরা সাকিবকে শ্রদ্ধা করি। তার তো টাকার অভাব থাকার কথা নয়।"
"আমরা সমস্যার সমাধান চাই। আমরা তার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে প্রশাসনের কাছে যেতে চাই না," বলেন তিনি।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "কাঁকড়া হ্যাচারি থেকে সাকিব আল হাসানের নামের সাইনবোর্ডটি খুলে ফেলা হয়েছে। গত এক বছর ধরে হ্যাচারিতে কোন কার্যক্রম নেই। জমির মালিকরা আমার কাছে অভিযোগ করলে সাকিবের দুই সহযোগী ইমদাদুল হক ও সাহাগীর হোসেন পাভেল সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছেন।"
তিনি আরও জানান, "প্রকল্পটিতে এখন সাকিব আল হাসান আদৌ আছেন কিনা তা আমরা বলতে পারছি না। আমি সাকিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে চাই না কারণ তিনি দেশের সম্পদ।"
এর আগে, খামারের শ্রমিকরা পাওনা টাকার দাবিতে বিক্ষোভ করেছিলেন। পরবর্তীতে, সাকিবের নির্দেশনায় সেই টাকা দ্রুত পরিশোধ করা হয় বলে জানান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের আরেক অংশীদার ইমদাদুল হক বলেন, "প্রকল্পটি এখন বন্ধ। সাকিব আল হাসান সকল বিষয়ে অবগত রয়েছেন। সমস্যার সমাধান করা হবে।"
অপর অংশীদার সাহাগীর হোসেন পাভেল বলেন, প্রকল্পটি চট্টগ্রামের একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে ।
শনিবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে সাকিব আল হাসান বলেন, সরকারি প্রণোদনার অর্থ আসলেই জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
"আমরা লোকসানের মুখে পড়েছি। মহামারির মধ্যে পাঁচ কোটি টাকার অর্ডার বাতিল করা হয়। সরকার থেকে প্রণোদনা হিসেবে ঋণ পেলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ করব," বলেন সাকিব।