কার্যাদেশ না পাওয়া ও বেতন দিতে না পেরে চট্টগ্রামের দুটি ইপিজেডে বন্ধ হয়েছে ৮ কারখানা
মহামারির সময় পর্যাপ্ত কার্যাদেশ না পাওয়ার কারণে শ্রমিকদের বেতন দিতে ব্যর্থ হয়ে চট্টগ্রামের দুটি ইপিজেডে বন্ধ হয়ে গেছে ৮ টি কারখানা।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম ইপিজেডে বন্ধ হওয়া ৬ টি কারখানার মধ্যে ৪ টি কারখানার বিনিয়োগকারী বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান, বাকি দুটি ডেনমার্কের। অন্যদিকে কর্ণফুলী ইপিজেডে বন্ধ দুটি কারখানার একটি ভারতের এবং অন্যটি যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান।
করোনার প্রভাবে রপ্তানির অর্ডার কমে যাওয়া, ব্যবস্থাপনায় অভ্যন্তরীন সমস্যা, শ্রমিকদের সময়মতো মজুরি পরিশোধ করতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণে এসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ইপিজেড নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থা বেপজা।
এদিকে বাংলাদেশ ইপিজেড ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের (বেপজিয়া) তথ্য অনুযায়ী করোনার কারণে দুই ইপিজেডে আরো অন্তত ৫ টি কারখানা বন্ধ হতে পারে।
বেপজার জেনারেল ম্যানেজার (পাবলিক রিলেশন) নাজমা বিনতে আলমগীর টিবিএসকে বলেন, দুই ইপিজেডে বর্তমানে পুরোদমে চালু আছে ১৮৮ টি কারখান। সেই তুলনায় কম সংখ্যক ৮টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এ কারণে ইপিজেড দুটিতে খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তা বলা যাবেনা। একাধিক মালিক সংখ্যা কিংবা পরিচালনায় অদূরদর্শিতার কারণে এসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
বেপজার তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম ইপিজেডে বর্তমানে ১৪৬ টি কারখানা সচল আছে। এতে কর্মরত আছে ১,৫৭,৫৯৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬৫৯৮১ জন, নারী ৯১৩৬৬ এবং বিদেশী কর্মী আছে ২৪৯ জন। কর্ণফুলী ইপিজেডে সচল আছে ৪২ টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করে ৭২৮৩৬ জন কর্মী । এর মধ্যে ২৭,১১৫ জন পুরুষ, ৪৫,৩৯২ জন নারী এবং ৩২৯ জন বিদেশী কর্মী রয়েছে।
বেপজার তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম ইপিজেডে বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলো হলো এএন্ডবি আউটওয়্যার লি., নর্মস আউটফিট লি:, কোল্ড প্লে লি., উইন্ক কোম্পানি লি., পেনিনসুলা গার্মেন্টমস লি., মিঠুন নিটিং এন্ড ডাইং
চট্টগ্রাম ইপিজেডে বন্ধ হয়ে যাওয়া এন্ডএন্ডবি আউটওয়্যার, নর্মস আউটফিট লি: এবং কোল্ড প্লে লি: কারখানা তিনটির মালিক বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত যুক্তরাজ্যের নাগরিক নাজমুল আবেদিন। এই তিনটি কারখানায় কাজ করতো ১ হাজার ৮০০ শ্রমিক।
করোনার শুরুতে শ্রমিকদের বেতন দিতে না পারা এবং বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে তিনটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন তিনি। তিনটি কারখানার মধ্যে নর্মস আউটফিটের বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দেখানো হলেও বাকি দুটি কারখানার বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে ডেনমার্কের নাম উল্লেখ করা হয়েছে বেপজার ওয়েবসাইটে। এর মধ্যে এএন্ডবি আউটওয়্যার এবং নর্মস আউটফিট কারখানা ২৫ কোটি টাকায় নিলামে তুলেছে চট্টগ্রাম ইপিজেড। এছাড়া চট্টগ্রাম ইপিজেডে বন্ধ হয়ে যাওয়া বাকি তিনটি কারখানার বিনিয়োগকারী বাংলাদেশী মালিকানাধীন।
বেপজার তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম ইপিজেডে ৬ কারখানা বন্ধ হওয়ার তথ্য দেওয়া হলেও এই ইপিজেডে সম্প্রতি পদ্মা ওয়্যারস নামে আরো একটি কারখানা বন্ধ হয়েছে। কারখানা শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে না পারায় বাংলাদেশী বিনিয়োকারীর প্রতিষ্ঠানটির নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করেছে চট্টগ্রাম ইপিজেড কর্তৃপক্ষ।
কর্ণফুলী ইপিজেডে বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা দুটি হলো ভারতীয় বিনিয়োগকারী কারখানা পিআরএম ফ্যাশন লি এবং যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারী কারখানা ভেলটেক্স লি.।
দুই ইপিজেডের একাধিক বিনিয়োগকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, করোনার কারণে কারখানার আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য ধরে রাখা যাচ্ছেনা। তাছাড়া শ্রমিকদের বেতনের পাশাপাশি গ্র্যাচুয়িটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পরিশোধ করতে গিয়ে এই খাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। এসব কারণে আর্থিক সংকটে ভুগছে বিনিয়োগকারীরা।
বেপজিয়ার জোনাল এক্সিকিউটিভ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজিজুল বারী চৌধুরী জিন্নাহ বলেন, ইপিজেডের বাইরে যে পরিমান কারখানা বন্ধ হয়েছে সেই তুলনায় ইপিজেডে বন্ধ হওয়া কারখানার সংখ্যা খুবই কম। এসব প্রতিষ্ঠান মালিকানা পরিবর্তন করে পুণরায় চালু করার সুযোগ রয়েছে।
করোনার প্রভাবে চট্টগ্রাম ও কর্ণফুলী ইপিজেডের বাইরে চট্টগ্রামে ৪৭ টি গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়েছে। এতে কাজ হারিয়েছে প্রায় ২২ হাজার শ্রমিক।