ফুল রপ্তানি বাড়াতে তৈরি হচ্ছে আধুনিক সংরক্ষণাগার
ফুলের গুণগত মান বজায় রেখে সংরক্ষণ এবং রপ্তানি বাজার ধরার লক্ষ্যে গাবতলীতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সংরক্ষণাগার তথা মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পকে বলা হচ্ছে, বাজার অবকাঠামো, সংরক্ষণ এবং পরিবহন সুবিধার মাধ্যমে ফুল বিপণন শক্তিশালী করা।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে সংস্থাটি। নির্মাণ কাজ দেখভালের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরকে (পিডব্লিইডি) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) এর মাধ্যমে এই কাজের ঠিকাদার নিয়োগের জন্য ট্রেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।
মার্কেটটি নির্মাণ হলে রাজধানীর ফুল ব্যবসায়ীরা অবিক্রিত ফুল কোল্ড চেইন প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণের সুযোগ পাবেন। এতে করে ক্ষেত্রভেদে ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত ফুলের পচন রোধ সম্ভব হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
তাতে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে গুণগত মানসম্পন্ন ফুল সরবরাহের পাশপাশি রপ্তানি বাজারের জন্য ফুল প্রক্রিয়াজাতের সুযোগ বাড়বে বলে প্রত্যাশা সরকারের।
এ বিষয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এবং এই প্রকল্পের পরিচালক দেওয়ান আশরাফুল ইসলাম বলেন, "এখানে ফুল প্রক্রিয়াজাত ছাড়াও আমরা চেষ্টা করব ফ্রিজিং ভ্যান রাখার জন্য। যাতে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ফুলের মান বজায় রেখে, দাগমুক্ত অবস্থায় সরবরাহ করা সম্ভব হয়।"
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ফুল প্রক্রিয়াজাত এবং ফ্রিজিং ট্রান্সপোর্ট-এক্সপোর্ট মার্কেটের জন্য মানসম্পন্ন ফুল সরবরাহ নিশ্চিত করবে। তাতে দেশীয় বাজারের পাশাপাশি বিদেশের বাজারে আমাদের ফুলের কদর বাড়বে বলে আমার বিশ্বাস"।
পিডব্লিইডি নয় মাসের মধ্যে মার্কেটটির নির্মাণ কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিস্ট সূত্র।
অধিদপ্তর বলছে, তিনতলা বিশিষ্ট এই মার্কেট নির্মাণের জন্য মোট খরচ হবে ২৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এখানে অন্তত ৩৫০ জন পাইকারি ফুল ব্যবসায়ীকে জায়গা দেয়া সম্ভব হবে।
অত্যাধুনিক এই মার্কেট নির্মাণ হলে শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তাদের এই পেশায় কর্মসংস্থানের আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জহির উদ্দিন মোঃ বাবর।
তিনি বলেন, "এখন খড়ের গাদার মতো ফুল সংরক্ষণ করা হয়। এই মার্কেট হলে সেই অবস্থার পরিবর্তন আসবে। পুরো প্রক্রিয়ায় কোল্ড চেইন নিয়ন্ত্রণ করার ফলে রপ্তানি বাজার ধরার সুযোগ তৈরি হবে।"
"এর জন্য ২০১৪ সাল থেকে আমরা সরকারকে বলে আসছিলাম। নানা কারণে এতোদিন কাজটি হয়নি। এবার আলোর মুখ দেখায় কোভিড পরবর্তী সময়ে ফুল ব্যবসায় আশার আলো দেখছে ব্যবসায়ীরা।"
তাছাড়া এই মার্কেট নির্মাণ হলে শাহবাগ ও শেরে বাংলা নগরের মতো জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ব্যবসায়ীরা আলাদা সামাজিক মর্যাদা পাবেন। এতে করে এখানে বড় ধরনের বিনিয়োগ আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
নতুন ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে বসবে প্রসেসিং মেশিন। ফুল প্রক্রিয়াজাতকরণে গুণগত মান নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে অত্যাধুনিক সেই মেশিন দেশে চলে এসেছে বলে নিশ্চিত করেছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।
রাজধানীর গাবতলী এলাকায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পুরনো একটি মার্কেট রয়েছে। এর পাশেই নতুন এই মার্কেটির অবস্থান হবে। দুটি ভবন মিলে জায়গা থাকবে ৫৫ হাজার বর্গফুট। যার পুরোটা এখন ব্যবহৃত হবে পাইকারি ফুল বেচাকেনার কাজে।
বিষয়টি নিয়ে শেরে বাংলা নগর ফুল চাষী ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মোঃ খোরশেদ আলম বলেন, "করোনাকালে আমাদের ব্যবসা একেবারে পড়ে গেছে। কোথাও কোন অনুষ্ঠান না থাকায় কোনমতে টিকে আছে সমিতিভুক্ত ১৭০ ব্যবসায়ী"।
"এরমধ্যে সরকারের এই উদ্যোগ করোনা পরবর্তী সময়ে ফুল চাষীদের জন্য বড় ধরনের আশীর্বাদ। আমার ধারণা শুধু শেরে বাংলা নগরের ব্যবসায়ীরা না, এই মার্কেট চালু হলে সারা দেশের অবহেলিত ফুল ব্যবসায়ীরা আজীবন লাভবান হবেন"।
শুধু রাজধানীর বাসিন্দারা না, এমন উদ্যোগের ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে চাষীরাও উপকৃত হবে বলে জানান যশোরের লাবনী নার্সারির মালিক গাজী লিয়াকত আলী। এতে করে ফুলের পচন রোধ করে উৎকৃষ্ট মানের ফুল তাজা অবস্থায় গ্রাহকের হাতে পৌঁছাবে বলে বিশ্বাস এই ফুলচাষীর।
প্রসঙ্গত, ঈদুল ফিতরের আগে সৌদি আরবে এক লট ফুল পাঠানোর মাধ্যমে নতুন করে রপ্তানি বাজারে প্রবেশ করেছে ফুল। তবে প্রক্রিয়াজাতকরণে সমস্যার কারণে ফুল গ্রহণে আপত্তি করেছিল সেখানকার ব্যবসায়ীরা।
এর আগে অস্ট্রেলিয়াতে ফুলের নমুনা পাঠানোর পর ট্রায়াল লটে প্যাকেজিং সমস্যা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ দুর্বলতার কারণে তা গ্রহণ করেনি সেখানকার কর্তৃপক্ষ। এ সরকারের এই উদ্যোগ রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।