নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে বিপাকে দুই ব্যাংক
নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে বিপাকে পড়েছে দুই ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংক দু'টির এখন ৫২ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে। ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত বন্ধকী সম্পত্তি না থাকায় পাওনা আদায়ে শঙ্কিত ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের শীতলপুর এলাকার বাসিন্দা মো. সেকান্দার মিয়া। দীর্ঘদিন ধরে শিপ ব্রেকিং খাতে স্ক্র্যাপ, প্লেটসহ জাহাজের মালামাল অকশনে কিনে বিক্রি করতেন। সামিয়া শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ নামে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির ব্যবসা শুরু করেন ২০১০ সালে। প্রতিষ্ঠানের সহযোগী হিসেবে রাখেন নিজের শ্যালক ও উত্তর কাট্টলী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ মনজুর আলমকে।
২০১৫ থেকে ২০১৬ সালে এবি ব্যাংক পাহাড়তলী শাখা থেকে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির জন্য ঋণ সুবিধা নেয় সামিয়া শিপ রিসাইক্লিং। ঋণে শর্ত ছিল জাহাজ আমদানির পর তা স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি শেষে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করবেন। কিন্তু প্রথম দিকে জাহাজ আমদানি শেষে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করলেও ২০১৬ সালে জাহাজ আমদানির পর ব্যাংকের টাকা শোধ করে নি।
ঋণের টাকা শোধ করতে ব্যাংক বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠান মালিকদের চিঠি প্রদান করে। কিন্তু এলসির শর্তানুযায়ী প্রতিষ্ঠান মালিকরা ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করে নি।
বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও ঋণের টাকা শোধ না করায় ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সামিয়া শিপ রিসাইক্লিংয়ের কর্ণধারদের লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করে ব্যাংক।
এরপরও ঋণ পরিশোধ না করায় অর্থঋণ আদালত ২০০৩ এর ১২ (৩) ধারা মোতাবেক প্রতিষ্ঠানটির বন্ধক রাখা ২৩ শতক সম্পত্তি নিলামে তুলে ব্যাংক। কিন্তু নিলামে কোন দরদাতা পাওয়া যায় নি।
এরপর প্রতিষ্ঠান কর্ণধারদের বিরুদ্ধে গত ৩১ মার্চ চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে ব্যাংক। মামলায় সামিয়া শিপ রিসাইক্লিংয়ের কাছে এবি ব্যাংকের পাওনা উল্লেখ করা হয়েছে ৪১ কোটি ৮৯ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৪ টাকা। মামলায় সামিয়া শিপ রিসাইক্লিংয়ের ম্যানেজিং পার্টনার মো. সেকান্দার মিয়া, পার্টনার মোহাম্মদ মনজুর আলম, মো. সেকান্দারের স্ত্রী গোলজার বেগম এবং মনজুর আলমের স্ত্রী ফারজানা নূরকে বিবাদী করা হয়েছে।
এবি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট এন্ড রিলেশনশিপ ম্যানেজার (পাহাড়তলী শাখা) এইচ এম আলী মোরশেদ খান বলেন, শিপ ব্রেকিং খাতের সুদিনে সহজে ঋণ সুবিধা পেয়েছে সামিয়া শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ। কিন্তু ঋণের শর্ত অনুযায়ী ব্যাংকের টাকা শোধ করে নি। প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ঋণের টাকা উদ্ধারে আমরা ইতোমধ্যে এন আই অ্যাক্টে চারটি চেক ডিজনার মামলা ও অর্থঋণ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছি। আশা করছি মামলার রায়ের মাধ্যমে ঋণের টাকা উদ্ধার সম্ভব হবে।
ব্যবসার শুরু থেকে অর্থাৎ ২০১০ সাল থেকে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিতে ব্যাংক এশিয়া ভাটিয়ারি শাখা থেকে ঋণ সুবিধা নেয় সামিয়া শিপ রিসাইক্লিং। ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ব্যাংকের সাথে ভালো লেনদেন করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার সেকান্দার মিয়া। পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ঋণ সুবিধা নিলেও তা যথাযথভাবে শোধ করে নি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংক এশিয়ার প্রায় ১০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। যা ইতোমধ্যে শ্রেণিকৃত হয়ে পড়েছে।
এই বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জোনাল হেড (চট্টগ্রাম) এ কে এম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অনেক চেষ্টার পরও ঋণের টাকা শোধ না করায় ইতোমধ্যে ঋণটি শ্রেণিকৃত হয়ে পড়েছে। এরপর আমরা চেষ্টা করছি ঋণটি উদ্ধারে। সর্বশেষ চেষ্টা করেও ঋণের টাকা পাওয়া না গেলে আমাদেরও আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে।
এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মো. সেকান্দার মিয়ার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিক বার ফোন করে ও ক্ষুদেবার্তা পাঠানোর পরও তিনি কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন নি।