পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে পোস্টমাস্টার উইলিয়াম ফকনার
নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ঔপন্যাসিক উইলিয়াম ফকনার সম্পর্কে আগে জানা তথ্যগুলোর কয়েকটি তথ্য জেনে নেই।
১. উইলিয়াম ফকনারসহ কয়েকজন নোবেলবিজয়ীকে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ও জ্যাকুলিন কেনেডি হোয়াইট হাউজে ডিনারে আমন্ত্রণ জানালেন। আমন্ত্রণ যখন পেলেন ফকনার ভার্জিনিয়ার রিচমন্ড শহরে। তিনি ডিনারে এলেন না। কারণ জিজ্ঞেস করা হলে বললেন, ষাট মাইল দূরে গিয়ে এক বেলার খাবার খাওয়া আমার পোষাবে না।
২. হলিউডে তখন উইলিয়াম ফকনারের উপন্যাস চলচ্চিত্রোয়িত হচ্ছে। সেখানে বিশ্বসেরা সুদর্শন নায়ক ক্লার্ক গ্যাবলের সাথে তার দেখা।
ক্লার্ক গ্যাবল তাকে সেরা পাঁচজন লেখকের নাম বলতে বললেন। ফকনার বললেন 'আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, উইলা ক্যাথার, টমাস মান, জন ডস প্যাসোজ এবং আমি।
ক্লার্ক গ্যাবল তার দিকে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, তার মানে আপনি লেখেন?'
ফকনার বললেন, 'হ্যা মিস্টার গ্যাবল। কিন্তু আপনি কি করেন?'
৩. ফকনারের দাদার বাবা কর্নেল উইলিয়াম ফকনার (১৮২৫-১৮৮৯) একজন বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন- সেনাবাহিনীর কর্নেল, উকিল, রাজনীতিবিদ এবং কয়েকটি গ্রন্থের লেখক। এর মধ্যে উপন্যাস কবিতা, ভ্রমণ কাহিনী এবং একটি নাটক রয়েছে। ফকনার বহুগুণের অধিকারী এই মানুষটির একটি গুণকে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং নিজেই সেই গুণের অধিকারী হতে চেয়েছেন। তা হচ্ছে লেখালেখি, শৈশবে তিনি বলতেন আমি 'বড় দাদার মতো লেখকই হবো।'
৪. ফকনার প্রথম মহাযুদ্ধের সময় আর্মি এভিয়েশন কোরে যোগ দিতে চেষ্টা করেছেন, খাটো হবার কারণে (তিনি পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি) বাদ পড়ে যান। কোন যুদ্ধে তার যোগদানের সুযোগই ছিল না। কিন্তু যুদ্ধ করেছেন এটা বলতে ভালোবাসতেন এবং যুদ্ধে আহত হয়েছেন প্রমাণ করতে কখনো কখনো খুঁড়িয়ে হাঁটতেন। অবশ্য বাঙ্গালি হলে সার্টিফিকেট বাগিয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যেতেন। ফকনার কাছাকাছি একটা কাজ করেছে। তিনি কল্পিত এক এডওয়ার্ড টিম্বার্লি থর্নডাইক নামক একজন ধর্মযাজকের সুপারিশপত্র নিয়ে ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ আর্মিতে যোগ দেন।
৫. ফকনার স্কুল পাশ করেননি তবুও ম্যাচুরড স্টুডেন্ট হিসেবে মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কোনো রকমে ৩ সেমিস্টার পর্যন্ত চালিয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। তিনি ইংরেজিতে 'D' পেয়েছিলেন। গ্রেড নেমে যাবার একটি বড় কারণ ছিল অভ্যাসজনিত অনুপস্থিতি।
৬. ফকনারের অ্যাজ আই লে ডায়িং উপন্যাসে একটি বাক্যেই তার ১৯তম অধ্যায়: মাই মাদার ইজ অ্যা ফিশ।
৭. লেডিস ম্যান হিসেবে তার পরিচিতি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। তার দুই শয্যাসঙ্গীর একজন মেটা উয়াইল্ড তার সাথে ফকনারের সম্পর্ক নিয়ে লিখেছেন 'অ্যা লাভিং জেন্টলম্যান' আর জোয়ান উইলিয়ামস লিখেছেন উপন্যাস 'দ্য উইন্টারিং'। ফকনারের জীবনের প্রথম দিককার প্রেমিকা এস্টেল ওল্ডহ্যাম এক সময় তাকে প্রত্যাখ্যান করে কর্নেল ফ্রাঙ্কলিনকে বিয়ে করেন। তার সাথে দশ বছরের দাম্পত্য সম্পর্ক শেষ করে দুই সন্তানসহ আবার উইলিয়াম ফকনারের কাছে চলে আসেন, তারা বিয়ে করেন এবং তাদের একটি কন্যা সন্তান জিল জন্মগ্রহণ করে।
৮. মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয় পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার উইলিয়াম ফকনার কাজে অমনোযোগী ছিলেন। ১৯২৪ সালে তিনি চাকরিচ্যুত হন।
৯. উইলিয়াম ফকনার ১৯৪৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান, কিন্তু পুরস্কার ঘোষিত হতে দেরি হয়ে যাওয়ায় পুরস্কার পেতে পেতে ১৯৫০ এসে যায়। সে বছর বেশ ক'জন প্রথিতযশা প্রার্থী থাকায় সুইডিশ একাডেমি সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে। অন্য প্রার্থীরা হলেন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, আলবেয়র কামু এবং জন স্টাইনবেক। এই তিনজনই যথাক্রমে ১৯৫৪, ১৯৫৭ এবং ১৯৬২ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
১০. উইলিয়াম ফকনারের জন্ম ২৫ সেপ্টেম্বর ১৮৯৭ যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যে, মৃত্যু ৬ জুলাই ১৯৬২। মৃত্যুর উনিশ দিন আগে ঘোড়া চালনার সময় পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত হন- তাতে থ্রম্বসিস হয়ে যায়। ৬ জুলাই ঘটে প্রাণনাশী হার্ট অ্যাটাক।
এমিলি টেম্পলের লেখা অনুসরণ করে উইলিয়াম ফকনারের ডাকঘর জীবন:
১৯২১ সাল। ১০০ বছর আগের কথা। উইলিয়াম ফকনার দ্বিতীয়বারের মতো মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপড আউট হলেন। থাকতেন গ্রিনিচ ভিলেজে। একটি বইয়ের দোকানে কাজ করতেন, কিন্তু খুব অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। এ সময় আবির্ভূত হন তার জীবনের অন্যতম প্রধান মেন্টর ফিল স্টোন। তিনি অক্সফোর্ডের অ্যাটর্নি। তার বয়স ফকনারের চেয়ে তেমন বেশি বড় কিছু নয়। যে বিশ্ববিদ্যালয় ফকনার ছেড়ে এসেছেন তারই পোস্ট অফিসে তিনি ফকনারের জন্য পোস্টমাষ্টারের চাকরি জোগাড় করলেন। ১৯১১ সালের জন্য তার বার্ষিক বেতন নির্ধারিত হলে ১৭০০ ডলার, ১৯১২ সালে ১৮০০ ডলার। কিন্তু বেতনটা কেমন করে বাড়ল তা অনেকের কাছেই বিস্ময়ের ব্যাপার। কারণ যে কোনো বিবেচনায় পোস্টমাষ্টার হিসেবে তার কাজ অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। তার বেতন কমা ছাড়া বাড়ার কোনো কারণ নেই।
ডেভিড মিন্টার ফকনারের জীবনী লেখার সময় ফিল স্টোনের সাক্ষাৎকার নেন। তিনি বলেন, এই কাজের জন্য তার এতোটুকু আগ্রহ ছিল না বরং আমিই তাকে চাকরিটা নিতে বাধ্য করি। তিনি বলেন, 'পৃথিবী সম্ভবত তার চেয়ে বাজে পোস্টমাস্টার আর দেখেনি। তার অফিসের ধরাবাধা সময় তিনি মানেননি। যখন ইচ্ছে হতো অফিস খুলতেন যখন ইচ্ছে হতো তালা মেরে চলে যেতেন। পত্রপ্রাপকদের কাছে পাঠানো ম্যাগাজিন তিনি খুলে পড়তেন। যে সব চিঠি তার কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হতো ফেলে দিতেন। পোস্ট অফিসের ভেতর বন্ধুদের নিয়ে তাস খেলতেন। লোকজনকে অপেক্ষায় রেখে পেছনের রুমে গিয়ে লিখতে বসে যেতেন।
ছাত্রছাত্রীদের একটি কমিক প্রকাশনা 'ওলে মিস'-এ ফকনার ও তার পোস্ট অফিসের ছবি আঁকা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে 'পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট ক্লাব: বেলা সাড়ে এগারটা থেকে সাড়ে বারটা প্রতি বুধবার।' আদর্শ: যথাসময়ে মেইল পাঠানোর দরকার নেই। লক্ষ্য: প্রতি পঞ্চাশ জনে একজন পোস্টমাষ্টার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করুক।
কিংবা শতকের অন্যতম প্রধান নারী লেখক মিসিসিপির ইউডোরা উয়েল্টি পোস্ট অফিসে ফকনারের দায়িত্ব পালনের একটি নমুনা হাজির করেছেন :
'আসুন আমরা ভাবি আমরা কুড়ির দশকে ফিরে গেছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আমরা পুরোনো পোস্ট অফিসে। ২ সেন্ট দামের একটি ডাকটিকেট কিনতে আমরা স্ট্যাম্প উইন্ডোর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ভেতরে কোনো মানুষের চিহ্ন নেই। প্রথমে টোকা দিতে থাকি, তারপর ঘা। একটার পর একটা ঘা দিয়ে যাবার পরও ভেতর থেকে কারো সাড়া নেই।
তারপর নাম ধরে চিৎকার ডাকাডাকির পর বেরিয়ে এলেন তিনি। পোস্টমাস্টার উইলিয়াম ফকনার। আমরা আসলে তার কাজে ব্যাঘাত ঘটালাম। সে সময়টাতে তার স্ট্যাম্প উইন্ডোতে লাইন ধরে দাঁড়ানো খদ্দেরের কাছে স্ট্যাম্প বিক্রি করার কথা, তাদের হাত থেকে চিঠি নিয়ে সিল মারার কথা, তিনি তা না করে লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে গীতিকবিতা লিখে চলেছেন।
পোস্টমাস্টারের দায়িত্বের প্রতি যতটা সম্ভব কম মনোযোগ দিয়ে তিনি তিন বছর খদ্দেরদের অসন্তুষ্টি অর্জন করেও চাকরিটা ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছেন। কিন্তু ১৯২৪ সালের সেপ্টেম্বরে মিসিসিপির কোরিন্থ থেকে পোস্ট অফিস ইন্সপেক্টর রিভিও করতে এলেন। আগেই পর্যাপ্ত অভিযোগ পেয়েছেন বলে তার সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার প্রয়োজন হয়নি। সাধারণ পরিদর্শন ও দু'চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তৈরি করা প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে উইলিয়াম ফকনারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলো:
আপনি আপনার দায়িত্ব অবহেলা করেছেন কাজের সময় বই ও ম্যাগাজিন পড়া আপনার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আপনি আপনার পোস্ট অফিসের মূল্যবান খদ্দের ও প্যাট্রনদের দীর্ঘ সময় দাঁড় করিয়ে রেখে নিজের কাজ করেছেন।
এ সময় আপনার যে একটি গ্রন্থ মুদ্রিত হতে যাচ্ছে তার অধিকাংশ পোস্ট অফিসে দায়িত্বরত অবস্থায় আপনি রচনা করেছেন।
এই পোস্ট অফিসের প্যাট্রনদের কেউ কেউ তাদের চিঠির দায়িত্ব আপনাকে দিয়ে আপনার উপর বিশ্বাস রাখতে পারছে না। আপনার আগের দায়িত্বজ্ঞানহীনতাই তার কারণ। ভ্যাকেশনের সময় প্যাট্রনরা যে সব চিঠিপত্র পাঠিয়েছেন তা যথাস্থানে পৌঁছাতে আপনি ব্যর্থ হয়েছেন।
জন স্যাভেজ এবং আরো কয়েকজন তাদের পোস্ট বক্স সার্ভিস অব্যাহত রাখার জন্য আপনাকে নির্ধারিত টাকা দিয়েছেন এবং আপনি তাদের মানি রিসিটও দিয়েছেন। তারপর আপনি তাদের পোস্ট বক্স সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছেন।
হিজ এক্সিলেন্সি রে জুনিয়রকে নিউ ইয়র্ক সিটির মেন সুজ এর জন ওয়ার্ডের পাঠানো ক্যাশ অন ডেলিভারি পার্সেল নম্বর ডব্লিউ ২২৭০৫ আপনি ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন। এই পার্সেলটি মিসিসিপির কোরিন্থ শহরের ৯২৯ নম্বর ফিলমোর স্ট্রিট-এর ফরোয়ার্ড করার জন্য তিনি নিজে এসে আপনার সাথে কথা বলেছেন এবং রিডাইরেক্ট করার ডাকমাশুল ১০ সেন্ট আপনার হাতে দিয়ে গেছেন। তারপরও প্রয়োজনীয় ডাকটিকেট পাঠানোর জন্য আপনি তাকে নোটিশ দেন। একবার আপনার হাতে দেওয়ার পরও পুনরায় তিনি ডাকটিকেট পাঠান। এতোকিছুর পরও পার্সেলের উপর 'আনক্লেইমড' সিল মেরে আপনি তা প্রেরকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
ইন্সপেক্টর তার প্রতিবেদনে চিঠি বিতরণে ব্যর্থতা, সব ধরনের ডাকের প্রতি যথাযথ আচরনের বদলে বাজে আচরণ করা, প্যাট্রনদের সাথে নিস্পৃই থাকা, কদাচিৎ কথা বলা, তাদের উপেক্ষা ও অসম্মান করা; পোস্ট অফিসের ভেতরে অনাকাঙ্খিত লোকজনকে ঢুকতে দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যর্থতার উল্লেখ করেন।
তিনি আরও লিখেন, আপনি আপনার নিজের সুবিধে অনুযায়ী পোস্ট অফিস খুলেছেন ও বন্ধ করেছেন খদ্দেরের (এখানে প্যাট্রন) প্রয়োজনের কথা কখনো বিবেচনা করেননি; দরজার কাছে ময়লার ঝুড়িতে ডাক ছুড়ে ফেলেছেন। এই পোস্ট অফিসের প্যাট্রনদের কেউ ময়লার ঝুড়ি থেকে তাদের চিঠি উদ্ধার করেছেন। এটি নিত্যকার ঘটনা হয়ে দঁড়িয়েছে; তাদের কেউ কেউ তাদের পোস্ট বক্সে পাঠানো ম্যাগাজিন সেখানে পাননি- আপনি কখনো এসবের সদুত্তরও দেননি। আপনি অফিসের সময় গলফ খেলতে গিয়েছেন।
এটা স্পষ্ট পোস্টমাস্টার উইলিয়াম ফকনারকে নিয়ে গবেষণা করে এসব তথ্য ডাক বিভাগের ইন্সপেক্টরকে বের করতে হয়নি। তার কাছে নিশ্চয়ই খদ্দেরদের কিংবা ডাক বিভাগের ভাষায় প্যাট্রনদের যথেষ্ট লিখিত অভিযোগ জমা হয়েছিল যার প্রায় সবই ছিল সত্য। কারণ একটি অভিযোগও তিনি খণ্ডাননি বা খণ্ডাতে চেষ্টা করেননি। সবশেষে ইন্সপেক্টর অভিযুক্ত পোস্টমাষ্টারকে লিখেন : আগামী পাঁচদিনের মধ্যে এই অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক সঠিক কিনা আপনি লিখিতভাবে আমাকে জানাবেন। আপনাকে কেন চাকুরিচ্যুত করা হবে না তার কারণ দর্শাবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনার জবাব দিতে ব্যর্থতা এটাই প্রমাণ করবে বলে ধরে নেওয়া হবে যে অভিযোগগুলো যথার্থ বলে আপনার প্রতিরক্ষার কোনো শক্তি নেই- তখন আইন অনুযায়ী আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঠিক পাঁচ দিনের মধ্যে না হলেও ১৯২৪-এর অক্টোবরে তিনি অভিযোগের সাথে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের উল্লেখ করে পদত্যাগ পত্র পাঠান:
আমি যতক্ষণ ধনতান্ত্রিক পদ্ধতির আওতায় বসবাস করব, ধনী লোকদের চাহিদা আমার জীবনকে প্রভাবিত করবে, সেটাই আমি প্রত্যাশা করতে পারি। ডাক টিকেটের উপর দুই সেন্ট বিনিয়োগ করার সামর্থ যাদের আছে যদি যাত্রাপথে তাদের সকলকে বদমাশ না বলে যদি তাদের আদেশ শোনার অপেক্ষায় থাকি তাহলে আমাকেই ধিক! মনে করুন এটাই আমার পদত্যাগপত্র।
যুক্তরাষ্ট্রের ডাক বিভাগ সম্ভবত পোস্টমাস্টার উইলিয়াম ফকনারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো তার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কারণে ক্ষমা করে দিয়েছে। আর সে জন্যই ডাক বিভাগ ১৯৮৭ সালে, তারা ২২ সেন্ট মূল্যমানের ফকনার স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত করেছে।
পাশাপাশি ফকনারের বিপরীত চরিত্রের তার স্বদেশী একজন পোস্টমাস্টারের কথা বলতেই হয়। তিনি পোস্টমাস্টার আব্রাহাম লিঙ্কন, পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ষোড়শ এবং সম্ভবত শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট। ২৪ বছর বয়সে তিনি নিজ অঙ্গরাজ্য ইলিনয়ের নিউ সালেম পোষ্ট অফিসের পোস্টমাস্টার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
তার দায়িত্বশীলতা ও নিষ্ঠা প্রবাদ প্রতীম। তিনি তার ডাক এলাকার সকলকে চিনতেন। ডাক ঘরে এসে চিঠি গ্রহণ করতে কেউ বিলম্ব করলে তিনি নিজে অফিস সময়ের পর সেই চিঠি নিয়ে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে যেতেন। তাদের পাঠানোর মতো কোনো চিঠি থাকলে তাও সাথে করে নিয়ে আসতেন।
খরচ কমাতে গিয়ে ডাকবিভাগ নিউ সালেম পোস্ট অফিসটি বন্ধ করে দেয়। ততদিনে পোস্টমাষ্টার আব্রাহাম লিঙ্কনের চাকরির তিন বছর হয়ে গেছে। সেদিন পোস্ট অফিস বন্ধ হয় নিঙ্কনের হাতে নগদ স্থিতি ১৬ ডলার। আর্থিক সংকটের মধ্যে তিনি জীবনযাপন করছিলেন। যতদিন পর্যন্ত না পোস্টাল এজেন্ট এসে টাকাটা তার কাছ থেকে নিয়ে যান, তিনি তা পৃথকভাবে সুরক্ষিত রেখেছিলেন। পোষ্টমাষ্টার আব্রাহাম লিঙ্কনের জায়গায় পোষ্টমাষ্টার উইলিয়াম ফকনার হলে কী হতো ভাবুন তো!