পোশাক শিল্পের আমদানি পণ্যের চালান বন্দর থেকেই ডেলিভারি নিতে চায় বিজিএমইএ
পোশাক শিল্পের আমদানিকৃত চালান চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস এবং ডেলিভারি অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
আগামী ১ জুলাই থেকে লকডাউনকালীন সময়ে বন্দরের ইয়ার্ডের পরিবর্তে গত বছরের ন্যায় বেসরকারি আইসিডি (ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো) থেকে ডেলিভারি দেওয়ার উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এই প্রেক্ষিতে বিজিএমইএ'র ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন।
ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রাইভেট আইসিডি সমূহে পর্যাপ্ত স্থান, ইক্যুইপমেন্ট ও শ্রমিক স্বল্পতায় মালামাল খালাসে দীর্ঘসূত্রতাসহ প্রচুর সময়ক্ষেপন হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ড থেকে আমদানি পণ্যের কন্টেইনার ডেলিভারি নিতে সময় লাগে ২ দিন। অন্যদিকে আইসিডি থেকে ডেলিভারি নিতে লেগে যায় ৬ থেকে ৭ দিন। তাছাড়া আইসিডির মাশুল চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে অনেক বেশি। অতিরিক্ত চার্জ প্রদান করে প্রাইভেট আইসিডি থেকে মালামাল খালাস করা বর্তমান সংকটময় মুহূর্তে সম্ভব নয়।
বিজিএমইএ'র ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, 'করোনা পরিস্থিতিতে এ পর্যন্ত ৩.৭৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রপ্তানি আদেশ বাতিল এবং স্থগিত হয়েছে। যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে আইসিডি থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে গেলে খরচ এবং সময় দুটোই বাড়বে। যেটি পোশাক শিল্প খাতকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলবে। তাই বন্দরের ইয়ার্ড থেকে বিজিএমইএ'র আমদানি পণ্য চালান খালাস এবং ডেলিভারি অব্যাহত রাখতে আমরা বন্দর চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। আশা করছি বন্দর কর্তৃপক্ষ পোশাক শিল্পের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের দাবি বিবেচনা করবেন'।
তবে বিজিএমইএ'র এমন দাবিকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেছেন বেসরকারি আইসিডি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান।
তিনি বলেন, '১৯টি বেসরকারী আইসিডিতে ৬৫ হাজার টিইইউস'এ (টুয়েন্টি ফিট ইকুয়েভিলেন্ট ইউনিট) কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতার মধ্যে বর্তমানে ২০ হাজার কন্টেইনার রাখার স্থান খালি আছে। তাই স্থান সংকুলান না হওয়ার অভিযোগ তোলা ভিত্তিহীন। আইসিডিগুলোতে ৩৮টি আমদানি পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ের তালিকায় বর্তমানে বিজিএমইএ'র কোন পণ্য নেই। তাছাড়া আইসিডি মালিকরাও চায়না বিজিএমইএ'র কোন আমদানি পণ্য হ্যান্ডেল করতে। এরপরও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদের যে নির্দেশনা দেবে দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে আমরা সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবো'।
দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে ২০২০ সালে বন্দরের ভেতর কন্টেইনার জটের চাপ কমাতে সাময়িক সময়ের জন্য বন্দরের বদলে বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে নিয়ে খালাসের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ওই সময়ে বন্দরে কন্টেইনার ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত কন্টেইনার জমে যায়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক বলেন, ১ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া লকডাউনে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম সচল রাখতে মঙ্গলবার (২৯ জুন) বন্দর সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠানের সাথে বৈঠক করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ওই সভায় অবহিত করা হয় লকডাউনককালীন সময়ে বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার জট এড়াতে আমদানি পণ্যের কন্টেইনার বেসরকারি আইসিডিগুলোতে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে বন্দর কর্তৃপক্ষের এমন প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিজিএমইএ, সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দ। তৈরী পোশাক শিল্পের বর্তমান নাজুক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তৈরী পোশাক শিল্পের চালান ডেলিভারি বন্দরের ইয়ার্ড থেকে অব্যাহত রাখার দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের ফার্স্ট জয়েন্ট সেক্রেটারি কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, 'বর্তমানে পণ্যবাহী জাহাজ বন্দরে নোঙ্গর করার আগেই পণ্য খালাসের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট শুল্ক বিভাগে জমা দেওয়া হচ্ছে। বন্দর থেকে অল্প সময়েই পণ্য ডেলিভারি নিতে পারছে আমদানিকারকরা। তাই বন্দরের ইয়ার্ড থেকে আমদানি পণ্য আইসিডিতে পাঠানোর যৌক্তিকতা দেখছি না'।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার ধারন ক্ষমতা ৪৯০১৮ টিইইউ'স। ২৯ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার ছিলো ৩৬৪৯৪ টিইইউ'স।