তীব্র তাপ প্রবাহে ১ বিলিয়ন সামুদ্রিক প্রাণি মারা পড়েছে, প্রকৃত অবস্থা আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের
বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে রেকর্ডসম তীব্র তাপ প্রবাহ চলছে, এরমধ্যেই কানাডার সাম্প্রতিক প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে তাপ প্রবাহের ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে সামুদ্রিক জীবনের ওপর। একজন গবেষক জানিয়েছেন, তীব্র তাপ প্রবাহের ফলে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার উপকূলে আনুমানিক ১০০ কোটি সামুদ্রিক জীব মারা গেছে।
তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার অধ্যাপক ক্রিস্টোফার হারলে।
"গত ২৫ বছর ধরে আমি উত্তর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কাজ করছি, এবং এমন ধরনের ঘটনা আমি আগে কখনো দেখিনি।
এমন একটি অঞ্চলের সামুদ্রিক জীব গণনার মাধ্যমে এই সংখ্যার ধারণা পেয়েছেন তারা, যেই অঞ্চলটি পুরো সৈকতের সামুদ্রিক জীবের প্রতিনিধিত্বকারী অঞ্চল, জানান অধ্যাপক হারলে। ওই পুরো অঞ্চলের বাস্তুসংস্থানের সম্পূর্ণ ধারণা পেতে পাথুরে সৈকত ও সাধারণ সৈকত সবই পর্যালোচনায় রেখেছেন তিনি।
"নির্ভরযোগ্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া এই সংখ্যা আমাদের প্রাথমিক অনুমান, তবে আমি সত্যিকার অর্থেই চিন্তিত যে এই সংখ্যাও বেশ কম," এনপিআরকে বলেন হারলে।
"আমি মৃত বার্নাকলও খুঁজে চলেছি। স্থানীয় মানুষের কাছে ঝিনুক, কাকড়া, সি স্টার ও অ্যানিমোনস মারা পড়ছে এমন তথ্যও পাচ্ছি,"
এর আগেও সামুদ্রিক জীবের ওপর তাপ প্রবাহের প্রভাব পড়েছে, তবে ওই অঞ্চলে গত সপ্তাহান্তের মতো তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছানোর মতো ঘটনা সচরাচর হয় না বলে জানান হারলে।
বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন থেকে প্রতি পাঁচ-১০ বছর অন্তর অন্তর এমন তাপ প্রবাহ দেখা যেতে পারে।
"এতো দ্রুত এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে প্রকৃতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সময়ও পাবে না," বলেন তিনি।
উপকূল ছাড়িয়ে ভয়াবহ প্রভাব
রাটগারস ইউনিভার্সিটির মেরিন বায়োলজির সহযোগী অধ্যাপক মেলিন পিনস্কি জানান, এই তীব্র তাপ প্রবাহের কারণে সামুদ্রিক জীবনের ওপর ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
"বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণি প্রতি দশকে ৬০ কি.মি. করে পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের দিকে সরে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়াতে সময় লাগে, ধীরে ধীরে হয় এটি। এ ধরনের গুরুতর সমস্যার ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটে, যেখানে ঝিনুক বা অন্য কোনো প্রাণির বিরাট জনগোষ্ঠী মারা পড়ে," বলেন পিনস্কি।
তবে এরচেয়েও গুরুতর সমস্যা হলো সামুদ্রিক জীবনের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিষয়টি এখনো গুরূত্ব সহকারে নেওয়া হয় না, আমাদের চোখের আড়ালেই রয়ে যায়- এমনটাই মত মেরিন বায়োলজিস্টদের। ১০০ কোটি প্রাণি মারা পড়ার অনুমিত সংখ্যা যে এরচেয়েও বেশি হতে পারে, বিজ্ঞানী হারলের এ আশঙ্কার সঙ্গে একমত পিনস্কিও।
"সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, এই পরিস্থিতি প্রকৃত অবস্থার অতি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। ঝিনুক উপকূলেই থাকায় আমরা ঝিনুকের অবস্থা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আরও বড় পরিসরে, সমুদ্রের যে বিশাল প্রাণিকূল, তারা আমাদের চোখের আড়ালেই রয়ে যায়। একারণে প্রকৃত পরিস্থিতি হয়তো আরও পরে সামনে আসবে," বলেন তিনি।
একইসঙ্গে এতো বিশাল সংখ্যক সামুদ্রিক জীব মারা যাওয়ার প্রভাব শুধু সামুদ্রিক জীবনের ওপরেই নয়, স্থলভাগের প্রাণিদের ওপরও এর প্রভাব পড়ছে। পাখি থেকে শুরু করে সামুদ্রিক জীবের ওপর বিভিন্নভাবে নির্ভরশীল মানুষের ওপরও এর প্রভাব পড়বে।
"বাস্তুসংস্থানের বড় অংশ ঝিনুকের ওপর নির্ভরশীল। একারণে এভাবে ঝিনুকের মৃত্যু অনেকটা একটি শহরের কেন্দ্রভাগের সব ভবন ধ্বংসের মতোই," বলেন হারলে।
এরইমধ্যে, এখনো তিনি উপকূলের মৃত ঝিনুকের সংখ্যার হিসাব করে চলেছেন। শুধু ভ্যাঙ্কুভারের উত্তরের পর্তু কোভেই মাত্র ১৬৩ ফুট সৈকতে আনুমানিক ৬ লাখ ঝিনুক মারা গেছে বলে অনুমান করছেন তিনি। এতোটুকু পথ এক মিনিটেই হেঁটে পাড়ি দেওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি, অর্থাৎ এতো ছোট পরিসরেই বিশাল সংখ্যক ঝিনুকের দল একসঙ্গে মারা পড়েছে।
"প্রত্যেক উপকূলের অবস্থা হয়তো এতোটা বাজে হবে না। তবে আমার ধারণার চেয়েও বাজে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে," বলেন তিনি।
- সূত্র: এনপিআর