চিনির মিথ, চিনির মিষ্টতা
চিনিমুখ করানো হোক কি পান-চিনি হোক, চিনি তো থাকবেই। এমন কোনো সুসংবাদ নেই যা মিষ্টিমুখ না করে বা করিয়ে উদযাপন করা যায়। টাঙ্গাইলের চমচম হোক কি নাটোরের কাচা গোল্লা, মেলার বাতাসা হোক কি সুপার মার্কেটের প্যাকেটজাত চিনি সবই আসলে দ্রবণীয় কার্বোহাইড্রেট কিংবা শর্করা। শর্করা হচ্ছে কার্বন হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনের একটি মিষ্টিমধুর সম্মিলন। চিনি নিয়ে সমীক্ষা সুইট সার্ভেতে ২০১৮ সালের হিসেবে চিনিখোরদের শীর্ষে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। চিনি খাওয়ার শীর্ষে যে দশটি দেশ:
১। সংযুক্ত আরব আমিরাত: ২১৪ কিলোগ্রাম (বছরে মাথাপিছু)
২। জিবুতি: ১৯৩ কিলোগ্রাম
৩। বেলিজ: ১০৬ কিলোগ্রাম
৪। বাহরাইন: ৯৩ কিলোগ্রাম
৫। মৌরিতানিয়া: ৮৭ কিলোগ্রাম
৬। কিউবা: ৬৮ কিলোগ্রাম
৭। বেলারুস: ৬২ কিলোগ্রাম
৮। গায়না: ৬০ কিলোগ্রাম
৯। মালয়েশিয়া: ৫৭ কিলোগ্রাম
১০। ইসরাইয়েল: ৫৩ কিলোগ্রাম
সবচেয়ে কম চিনিখোর দেশ উত্তর কোরিয়া, মাথা পিছু ০.১৯ কিলোগ্রাম। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্থানে আফগানিস্তান: ১ কিলোগ্রাম। স্বাভাবিক খাবারে যে চিনি থাকে এই হিসেব তার অতিরিক্ত।
১. চিনি নেশাকারক
হতে পারে। প্রাণীর উপর চালানো সমীক্ষায় এর সমর্থন মিলেছে। তবে মানুষের বেলায় এখনো সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। পৃথিবীর কোনো দেশেই চিনি এখনো নেশার দ্রব্যের তালিকায় আসেনি তবে মাদকসেবীদের মিষ্টির প্রতি আগ্রহ লক্ষ করা যায়।
২. চিনি শিশুদের অতিসক্রিয় বা হাইপারঅ্যাকটিভ করে।
শৈশবে শ্রী কৃষ্ণ চিনি খেতেন। এ কালের শিশুদেরও প্রিয় ক্যান্ডি। চিনি খেয়ে শিশুরা অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে এমন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাও এই চিনি নিয়ে এই পুরান বা মিথটি এ কালের নয়, চিকিৎসা বিজ্ঞান বিকাশের প্রথম দিককার।
৩. চিনি ডায়াবেটিস সৃষ্টি করে।
প্রাচীন মিথগুলো একটি হচ্ছে বেশি চিনি খেলে মধুমেহ বা ডায়াবেটিস রোগ হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই দুইয়ের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।
বেশি ওজন ও স্থূলতা আক্রান্ত ব্যক্তির টাইপ ২ ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা থাকে। আর চিনি স্থূলতা বৃদ্ধির জন্য দায়ি। আর টাইপ-১ ডায়াবেটিসের বেলায় খাবারদাবার কিংবা জীবনাধারনের কোনো ভূমিকা নেই।
৪. বাঁচতে হলে চিনি ছাড়ুন।
ভালো পরামর্শ, কিন্তু না মানলেই মৃত্যু ঘটবে মনে করার কারণ নেই। চিনি যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা উত্তম। বেশি চিনিতে মৃত্যুঝুঁকি দেখা দেবার মতো রোগ প্ররোচিত হয়ে উঠবে। বেশি চিনি ক্যান্সারের মতো রোগ প্ররোটিত করার সাথে সম্পর্কিত।
৫. মিষ্টি খেলে মেধা বিকশিত হয়
সাফল্য উদযাপন মিষ্টির একটা ভূমিকা রয়েছে। মেধাবীরা সাফল্য লাভ করে। সাফল্য লাভের পর মিষ্টিখাবার বা খাওয়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়। তবে মিষ্টিতে মেধার বিকাশ ঘটাবার বিষয়টি সত্য হলে মা বাবারা শিশুদের সাধ্যমত চিনি-গুড় মিছরি খাওয়াতেন। খাওয়াবার জন্য রীতিমত নির্যাতন করতেন।
পুরানে যাই থাকুক, এ কালের বিজ্ঞানে ও চিকিৎসা গবেষণায় চিনির অনিষ্টকর দিকটিই বেশি ধরা পড়েছে।
শরীরের যতটুকু চিনি দরকার ঠিক ততটুকুই নিন। বেশিতেই বিপত্তি। রসগোল্লা-পানতোয়া-জিলিপি, চমচম-রসমালাই-ছানামুখী, চিনি-গুড়-মিছরি জিহ্বায় যত রসের সঞ্চারই করুক না কেন, শেষ পর্যন্ত ক্ষতিটাই বেশি করে। বাড়তি চিনি ঝামেলা বাড়ায়, আয়ু কমায়। ডায়াবেটিস হলে তে কথাই নেই। চিনি থেকে তো বটেই সুমিষ্ট ল্যাংড়া আম থেকেও নিরাপদ দূরত্ব থাকতে হবে। ডায়াবেটিক মানে মধুমেহ রোগগ্রস্তদের মিষ্টি খাবারের আকুতি থাকে প্রবল। আমার একজন শ্রদ্ধাভাজন স্বজনের ডায়াবেটিসের যেমন বাড়াবাড়ি ছিল, মিষ্টির জন্য তেমনি ছিল মাত্রাছাড়া টান। কোনও এক রাতদুপুরে স্ত্রীকে ঘুমে রেখেই অন্ধকারে হাজির হলেন ফ্রিজের সামনে। আগেই হয়তো খেয়াল করেছেন ফ্রিজে রয়েছে বাক্সভর্তি চমচম। অনুমান করে সঠিক বাক্সটি ধরলেন। গপাগপ খেতে শুরু করলেন রাতের অন্ধকারে।
আলো জ্বালেননি, পাছে স্ত্রী ঘুম ভেঙে যায়। খেতে খেতে একপর্যায়ে একটু বেসামাল হলে হাত থেকে বাক্স পড়ে যায়। মিষ্টিও ছিটকে পড়ে। তিনি হামাগুড়ি দিয়ে মিষ্টি কুড়াতে শুরু করেন। গায়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডাইনিংয়ের চেয়ার নড়েচড়ে ওঠে। শব্দ শুনে গিন্নির ঘুম ভেঙে যায়। সুইচ অন করে দেখেন স্বামী মিষ্টি কুড়াচ্ছে। ধমকে উঠলেন, কী করছ?
আধ খাওয়া একটি মিষ্টি আতঙ্কিত স্বামীর মুখ থেকে পড়ে যায়। এই ঘটনার কয়েক দিন পর ভদ্রলোক মৃত্যুবরণ করেন। মিষ্টির কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন বলা ঠিক হবে না, বরং মিষ্টি অন্য উপসর্গগুলোকে আরও সক্রিয় করে দিয়েছে। সব মিলিয়ে মৃত্যু। আমি তার স্ত্রীকে আক্ষেপ করতে দেখেছি-'আমার কারণেই মুখের গ্রাস-আধ খাওয়া মিষ্টিটা তাকে ফেলে দিতে হয়েছে।'
ন্যান্সি এপলটন বিভিন্ন ধরনের গবেষণার সারাংশ ছেঁকে চিনির ঘাতক-গুণ তালিকাবদ্ধ করেছেন। মিষ্টিপ্রিয় বয়সীরা পড়ে দেখতে পারেন-এতে মিষ্টিমুখীনতা যদি কিছুটা কমে!
১. চিনির বিশেষ প্রভাব শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতার ওপর। বস্তুটি শরীরের ইমমিউন সিস্টেমকে অবদমিত করে রাখে।
২. বিভিন্ন খনিজ উপাদান এবং লবণ শরীরে একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করে। চিনি এই ভারসাম্যের সমীকরণটি নষ্ট করে ফেলে শরীরকে বেসামাল করে তোলে।
৩. অতিসক্রিয়তা সৃষ্টি করে (এটি সুপ্রমানিত বলা যায় না), উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়, অভিনিবেশ ক্ষমতা হ্রাস করে, মেজাজে এনে দেয় খিটিমিটিপনা।
৪. ট্রাই-গ্লিসারাইড উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়ে শরীরে বাড়তি স্নেহ উৎপাদন করে ভারসাম্য নষ্ট করে।
৫. ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে শরীরের যে স্বাভাবিক প্রতিরোধ কৌশল তা অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
৬. শরীরের টিস্যুর স্থিতিস্থাপকতা কমিয়ে আনে। যত চিনি খাবেন টিস্যুর ইলাস্টিসিটি বা স্থিতিস্থাপকতা তত কমবে।
৭. অধিক দ্রবণীয় (হাই ডেনসিটি) লাইপোপ্রোটিন কমিয়ে আনে। অল্প দ্রবণীয় লাইপোপ্রোটিনের ভাগ বাড়তে থাকে-রক্তচাপ বৃদ্ধিসহ হৃদরোগের আশঙ্কাও তত বেড়ে যায়।
৮. দাঁতের ক্ষয় বাড়ায়। চকোলেট ও মিষ্টির হাত থেকে দাঁতকে রক্ষার আবেদন সর্বজনীন।
৯. স্তন ক্যান্সার, গর্ভাশয় ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং মলদ্বারে ক্যান্স্যার সৃষ্টিতে বেশ সহয়তা করে।
১০. শরীরে কপারের ঘাটতি ঘটায়। শরীর যে প্রক্রিয়ায় ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আত্মস্থ করে থাকে বাড়তি চিনি সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
১১. দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে আনতে ভূমিকা রাখে।
১২. ডোপামিন, সেরোটোনিন, নোরপাইনফ্রিন-এসব নিউরোট্রান্সমিটারের স্তর উঁচু করে দেহের ভারসাম্য নষ্ট করে।
১৩. অকাল বার্ধক্য টেনে আনতে খুব সাহায্য করে। বেশি খেলে অল্প বয়সেই বুড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
১৪. বেশি খেলে এক সময় তা অ্যালকোহল আসক্তির দিকেও টেনে নিয়ে যেতে পারে।
১৫. শরীরে ক্রোমিয়াম ঘাটতি দেখা দেয়।
১৬. স্থূলকায় হতে বেশ সাহায্য করে থাকে।
১৭. গ্যাসট্রিক এবং ডিউডেনাল আলসার বাড়তে থাকে।
১৮. আর্থরাইটিস রোগকে প্রণোদিত করে।
১৯. অ্যাজমা সৃষ্টিতে ও বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
২০. গলব্লাডারে পাথর সৃষ্টি করে।
২১. হৃদরোগ সৃষ্টি করে, সৃষ্ট হৃদরোগের তীব্রতা বাড়ায়।
২২. অ্যাপেনডিসাইটিস উসকে দেয়।
২৩. মাল্টিপল স্কেরোসিস সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
২৪. অস্টিওপোরোসিস বাড়ায়।
২৫. মুখের লালার অম্লতা বাড়িয়ে দেয়, খাদ্য পরিপাকে বিঘ্ন ঘটায়।
২৬. ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমিয়ে দেয়। ইনসুলিন গ্রহণ করেও কাম্য ফল লাভ করা যায় না।
২৭. রক্তে ভিটামিন ই-এর মাত্রা কমিয়ে দেয়।
২৮. শারীরিক বৃদ্ধির জন্য আবশ্যকীয় গ্রোথ হরমোন সৃষ্টি কমিয়ে দেয়।
২৯. বয়স্কদের ঝিমুনি ধরায়, শিশুদের স্বাভাবিক নড়াচড়া হ্রাস করে।
৩০. খাদ্যের প্রোটিন শোষণে বাধার সৃষ্টি করে।
৩১. বিভিন্ন খাদ্যদ্রেব্যের প্রতি এলার্জি সৃষ্টি করে।
৩২. শিশুদের একজিমা সৃষ্টি করে এবং সৃষ্ট একজিমা বাড়িয়ে দেয়।
৩৩. শরীরের জন্য আবশ্যকীয় প্রোটিনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে প্রোটিনের সাংগঠনিক কাঠামো বদলে দেয়।
৩৪. ডিএনএ কাঠামোকে বিকৃত করে।
৩৫. কোলাজেন কাঠামোতে পরিবর্তন এনে শরীরের চামড়ায় দ্রুত বার্ধক্য এনে দেয়।
৩৬. চোখের ছানি পড়া ত্বরান্বিত করে।
৩৭. বিভিন্ন এনজাইমের পরিপাক ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
৩৮. পারকিনসন্স রোগীদের চিনি খাবার প্রবণতা বাড়ে এবং বাড়তি চিনি পারকিনসন্স রোগের প্রকোপ বাড়িয়ে সদেয়।
৩৯. কিডনির আকার বাড়িয়ে দিতে পারে। এর অভ্যন্তরে প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন এনে দিয়ে কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম নষ্ট করে দেয়।
৪০. লিভারের কোষ বিভাজন বাড়িয়ে লিভারের আকৃতি বড় করে দেয়।
৪১. লিভার ফ্যাট (যকৃত স্নেহ) বাড়িয়ে শরীরের ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটায়।
৪২. অগ্ন্যাশয়ের বিশেষ ক্ষতিসাধন করতে পারে।
৪৩. মায়োপিয়া (নিকট-অন্ধত্ব) সৃষ্টি হয়।
৪৪. নিয়মিত বেশি চিনিতে মাথাব্যথা হতে পারে এমনকি তীব্র ব্যথার মাইগ্রেনও হতে পারে।
৪৫. মহিলাদের বেলায় অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।
৪৬. মানসিক ডিপ্রেশন সৃষ্টি করে, ডিপ্রেশন বাড়িয়ে দেয়।
৪৭. বদহজম হয়।
৪৮. গ্যাসট্রিক আলসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৪৯. কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করে।
৫০. বাড়তি চিনি বাচ্চাদের বেলায় পড়াশোনায় মনোনিবেশ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং লার্নিং ডিজঅর্ডার সৃষ্টি করে।
৫১. মস্তিষ্কে আলফা ডেল্টা ও থেটা ব্রেইন ওয়েভ বাড়িয়ে দিয়ে স্নায়বিক ভারসাম্য নষ্ট করে।
৫২. রক্ত সংবহন নালীর ভেতরকার লাইনিং ক্ষতিগ্রস্থ করে। এতে ক্যাপিলারিজ দুর্বল হয়ে গেলে রক্ত সংবহনে এর প্রভাব পড়ে।
৫৩. দাঁতের ও দাঁতের মাড়ির রোগ দেখা দেয়।
৫৪. অস্থি সন্ধিস্থলের টেন্ডন দুর্বল ও ভঙ্গুর করে তোলে।
৫৫. শরীরের তরল ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে অতিরিক্ত তরল সঞ্চিত রাখতে বাধ্য করে।
৫৬. প্রোটিন যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শরীরকে সাহায্য করে থাকে বাড়তি চিনি সে প্রক্রিয়াকে বাধা দেয় এবং প্রোটিনের কর্মকৌশল পরিবর্তন করতে বাধ্য করে।
৫৭. বাতরোগ হয় এবং বাতরোগগ্রস্তদের বাতের প্রকোপ বাড়িয়ে দেয়।
৫৮. অ্যালজাইমার ডিজিজ হতে এবং এ রোগের প্রকোপ বাড়াতে সাহায্য করে।
৫৯. রক্তের প্ল্যাটিলেটের (অনুচক্রিকা) রক্ত জমাট বাঁধানোর শক্তি বাড়িয়ে দেয়। এটি বিপজ্জনক। রক্তনালীতে জমাট রক্তের কারণে জীবনাশঙ্কা দেখা দিতে পারে।
৬০. বিভিন্ন কার্ডিওভাস্কুলার রোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
৬১. ফুসফুসে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৬২. গর্ভকালীন সময়ে টক্সেমিয়া হতে পারে।
৬৩. ফুসফুসে এম্পেসিমা সৃষ্টি করতে পারে।
৬৪. রক্তনালীতে কোলেস্টেরোল জমিয়ে এথেরোস্কোরোসিস ঘটাতে পারে।
৬৫. লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল) বাড়িয়ে দেয়। এই প্রবণতা দ্রুত হৃদরোগের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
৬৫. শারীরিক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের হোমোস্ট্যাসিস বাধাগ্রস্ত করে।
৬৬. হেমোরোয়েডের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।
৬৭. পায়ের কাফ মাসলে ভেরিকোজ ভেইন হতে পারে।
৬৮. ওরাল কনট্রাসেপটিভ ব্যবহারকারীদের বেলায় গ্লুকোজ এবং ইনসুলিনের সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
৬৯. সিস্টোলিক ব্লাডপ্রেসার বাড়িয়ে দেয়।
৭০. হাইপারগ্লাইসেমিয়া ঘটাতে পারে।
৭১. খাদ্য পরিপাক প্রণালিতে অম্লীয় অবস্থা সৃষ্টি করে।
৭২. শিশুদের বেলায় এড্রেনাল গ্রন্থির নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়।
৭৩. অতিরিক্ত চিনি আলসারেটিভ কোলাইটিস এবং ক্রোনস ডিজিজের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
৭৪. পোলিও রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ঝুঁকি বাড়ায়।
৭৫. ক্যানডিডা এলবিকানস (ইস্ট ইনফেকশন)-এর নিয়ন্ত্রণহীন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৭৬. হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। কোনও কোনও হরমোন চিনির সহায়তায় অধিকতর সক্রিয় হয়, কতক হরমোন চিনির সঙ্গে বিক্রিয়া করে কর্মক্ষমতা হারাতে থাকে।
৭৭. খাদ্যনালীপথে খাদ্যের নিচে নেমে আসার যে স্বাভাবিক গতি তা হ্রাস করে।
৭৮. মূত্রের ইলেকট্রোলাইট গঠন প্রক্রিয়া ব্যহত করে দেয়। ফলে মূত্র ও কিডনিজনিত জটিলতা সৃষ্টি হয়।
৭৯. দুষ্ট শিশুদের অপরাধমূলক ও অসামাজিক কর্মকাণ্ড বাড়িয়ে দেয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে কম চিনিযুক্ত খাবার ক্রমাগত পরিবেশনার পর কিশোর পুনর্বাসন কেন্দ্রে অসামাজিক আচরণ ৪৪ ভাগ কমে গেছে।
৮০. এডিএইচডি (এটেনশন ডেফিসিট হাইপার এক্টিভিটি ডিজঅর্ডার) রোগগ্রস্ত শিশুদের বেলায় রোগের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়।
৮১. স্থুলকায় লোকদের বেলায় দ্রুত উচ্চরক্তচাপ সৃষ্টি করে।
৮২. মৃগীরোগীদের বেলায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ায়।
৮৩. শিশুদের বিশেষ ধরনের একজিমা সৃষ্টিতে এবং বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
৮৪. গ্যাস্ট্রিক ও ডিউডিনাল আলসার রোগীদের বেলায় বিভিন্ন ধরনের বিরূপ অবস্থা যোগ করে।
৮৫. রক্তনালীর মাধ্যমে চিনিযুক্ত পানীয় প্রবেশ করানোর সময় ক্ষেত্রবিশেষে মস্তিষ্কে অক্সিজন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে মৃত্যুর আশঙ্কা দেখা দেয়।
৮৬. অস্বাভাবিক বিপাক প্রক্রিয়া সৃষ্টির মাধ্যমে ক্রনিক ডিজানেরেটিভ ডিজিজ তৈরি করে।
৮৭. ইউরিনারি ইলেক্ট্রোলাইট গঠন কাঠামো নষ্ট করে দেয়।
৮৮. কোষের মৃত্যু ত্বরান্বিত করে।
৮৯. শর্করা থেকে যে পরিমাণ স্নেহ উৎপাদিত হয় চিনি থেকে তার ২ থেকে ৫ গুণ বেশি স্নেহ রক্তনালীতে উৎপাদিত হয়ে থাকে।
৯০. মানুষের আবেগময় স্থিতাবস্থা নষ্ট করে দেয়।
৯১. মেয়েদের প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম বাড়িয়ে দেয়।
৯২. প্রি-ম্যাচুর শিশুকে খাওয়ানো চিনি কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ভারসাম্য নষ্ট করে।
৯৩. নেশাকর খাবার। অ্যালকোহলের মতো এর মাদক প্রভাব রয়েছে (এটিও সুপ্রমানিত নয়)।
৯৪. অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টি ভক্ষণ পরিপাক প্রক্রিয়াকে অস্বাভাবিক দীর্ঘায়িত করে।
৯৫. গর্ভাবস্থায় বিশেষ করে কম বয়সী মায়েদের ক্ষেত্রে সন্তানের আকৃতি ছোট করে দেয়।
৯৬. হাইপোথালমাস সংবেদনশীলতা কমে যায়। ফলে উত্তেজকের উপস্থিতিতে শরীর ঠিকভাবে সাড়া দিতে পারে না।
৯৭. কোলেস্টোরোল বাড়ায়।
৯৮. ডায়াবেটিস বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
এ তালিকাটি আরও লম্বা করা যেত। মিথ যাই বলুক তালিকার প্রতিটি রোগেই ঘাতক। কাজেই মিষ্টি যত সুস্বাদুই হোক না কেন, মিষ্টি থেকে দূরে থাকাই উত্তম, হোক না পোড়াবাড়ির চমচম কিংবা কুমিল্লার রসমালাই।