গাঁজার পূর্বপুরুষ চীনের বুনো উদ্ভিদ
এশিয়ার অধিকাংশ দেশে মাদক হিসেবে পরিচিত হলেও পশ্চিমা বিশ্ব চিকিৎসা, বিনোদন ইত্যাদি প্রয়োজনে গাঁজা ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে দিন দিন। কোনো সমাজে মাদক হিসেবে কুখ্যাতি আবার কোথাওবা নিরাময়ী গুণের সমাদর- গাঁজার সঙ্গে মানুষের এই সম্পর্ক হাজার হাজার বছরের। তবে এই খ্যাতি-কুখ্যাতির অধুনা বিড়ম্বনায় জংলী উদ্ভিদ থেকে গাঁজার বৈধ/ অবৈধ অর্থকরী ফসল হয়ে ওঠার ইতিহাস আমরা প্রায় ভুলেই গেছি।
বাস্তবতা হলো; বৈধতা পাওয়া অঞ্চলে গাঁজার চাষ এখন শত শত কোটি ডলারের বাণিজ্যে রূপ নিয়েছে। গবেষণাগারে জিন পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে এর নিত্যনতুন ধরন।
তবে বিজ্ঞানীরা এ উদ্ভিদের আদি জন্মস্থান সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা করছেন। সম্প্রতি তারা একশ'র বেশি গাঁজা গাছের জিন সিকোয়েন্স ও বিশ্লেষণ করে ধারণা করছেন আধুনিক চীনের ভূখণ্ডই ছিল আদি জাতগুলোর বাস্তুসংস্থান। ১২ হাজার আগে পূর্ব এশিয়ার এ অঞ্চল থেকেই পরবর্তীতে দুনিয়াজুরে ছড়ায় গাঁজার অজস্র নতুন প্রজাতি।
গত ১৬ জুলাই বিজ্ঞানীদের নিবন্ধটি সায়েন্স অ্যাডভান্সেস- জার্নালে প্রকাশিত হয়। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে, চীনের গাঁজা প্রজাতিগুলোর সঙ্গে বিশ্বের নানান অঞ্চলের বুনো প্রজাতিগুলোর জেনেটিক স্ট্রেইনের অধিক মিল পাওয়া যায়, যার ভিত্তিতে এ উপসংহার টানেন গবেষকরা।
নতুন এ আবিষ্কারের ফলে গবেষকরা আধুনিক জেনেটিক প্রক্রিয়ায় চীনা জাতের সাহায্য নিয়ে রোগ প্রতিরোধী ও অধিক উৎপাদনশীল গাঁজার জাত তৈরি করতে পারবেন- এমন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক এ গবেষণার আগে মধ্য এশিয়াকে গাঁজার আদি নিবাস বলে মনে করা হতো। সেখানেই উদ্ভিদটি প্রথম চাষবাসের ধারণাও ছিল।
ধারণাটির কারণ ব্যাখ্যা করে সুজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব লুসানের অভিযোজন বিষয়ক জীববিজ্ঞানী লুকা ফুমাগ্যালি বলেন, "মধ্য এশিয়ায় গাঁজার অনেক প্রজাতিকে নিজে থেকেই জন্মাতে দেখা যায়। ফাঁকা জমি বা সড়কের ধারে সবখানেই জন্মায় এগুলো। তাই অনুমানের ওপর ভর করে এতদিন মধ্য এশিয়াকে গাঁজার আদিনিবাস মনে করা হতো।"
লুকা জানান, "এ অনুমান আরও দৃঢ় হয়, পর্যবেক্ষণ এবং ঐতিহাসিক প্রমাণের ভিত্তিতে। তবে জিন বিশ্লেষণের মাধ্যমে এটি যে ভুল তা প্রমাণিত হলো।"
- সূত্র: স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন