বছরপ্রতি বাণিজ্যিক পর্যায়ে নষ্ট হচ্ছে ১ বিলিয়ন টন খাদ্য, ডেকে আনছে জলবায়ু বিপর্যয়
বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর আড়াই কোটি মেট্রিক টন খাবার নষ্ট হয়, এরমধ্যে প্রায় অর্ধেক পরিমাণই নষ্ট হয় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের বাণিজ্যিক ফার্মগুলোতে। এর ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে জলবায়ুর ওপরও।
গত বুধবার (২১ জুলাই) ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড এবং ইউকে গ্রোসারি রিটেইলার টেসকোর (টিএসসিডিএফ) প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতি বছর বিশ্বে যে পরিমাণ খাবার নষ্ট হয় তার পরিমাণ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) পূর্বের অনুমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি। এফএও সর্বশেষ ২০১১ সালে এই হিসাব করেছিল।
বর্তমান হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ফার্মগুলোতে নষ্ট হওয়া খাদ্যের পরিমাণ প্রায় ১২০ কোটি মেট্রিক টন। আরও ৯৩ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন খাবার নষ্ট করে রিটেইলার ও ভোক্তারা। বাকি অংশ নষ্ট হয় খাবারের পরিবহন, সংরক্ষণ, উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সময়।
নতুন এই হিসাব অনুযায়ী জানা যায়, বিশ্বের মোট উৎপাদিত খাদ্যের ৪০ শতাংশই খাওয়া হয় না।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের পিট পিয়ারসন এক বিবৃতিতে বলেন, "আমরা সবাই বহু বছর ধরে জানি যে খাবার নষ্ট হওয়ার সমস্যাটি কমিয়ে আনা সম্ভব। ফলে প্রকৃতি ও জলবায়ুর ওপরও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া কমানো সম্ভব হবে। নতুন প্রকাশিত এই প্রতিবেদন দেখিয়েছে আমাদের ধারণার চেয়েও বড় এ সমস্যা,"
গবেষণাটির ফলাফল অনুযায়ী, ১০ শতাংশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী খাদ্য আবর্জনা। এ সংখ্যা আগে ৮ শতাংশ বলে ধারণা করা হতো। এ সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে গাড়ি চালানোর ফলে সৃষ্ট গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের নানা প্রান্তের দাবানল ও ভয়াবহ বন্যা আমাদের প্রতি মুহূর্তে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কী ভয়াবহ হতে পারে।
"খাদ্য উৎপাদনের জন্য বিশাল পরিমাণ জমি লাগে, পানি ও শক্তির খরচও আছে। অর্থাৎ খাদ্যের অপচয় জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর ভূমিকা রাখছে," বলা হয় গবেষণা প্রতিবেদনটিতে।
পরিবেশের ওপর এতো বিরাট মাত্রায় বিরূপ প্রভাব পড়া সত্ত্বেও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে মাত্র ১১টি জাতীয় কার্বন প্ল্যানে খাদ্য অপচয় ও নষ্টের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
এরমধ্যে বেশিরভাগই আবার আফ্রিকার দেশগুলো, যারা বর্তমানে ফসল তোলার পরবর্তী সময়ের ক্ষতির মুখে আছে। যদিও শিল্পোন্নত দেশগুলোর কৃষি ব্যবস্থা ও খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া এ সমস্যার জন্য বহুলাংশে দায়ী।
গবেষণা প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, বিশ্বজুড়ে মোট অপচয় হওয়া ফসলের ৫৮ শতাংশের জন্য দায়ী ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ার ধনী দেশগুলো, যদিও এসব দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৩৭ শতাংশ মাত্র। তারপরও দেশগুলোতে খাদ্য অপচয় কমিয়ে আনার পদক্ষেপ বিক্রি ও ভোক্তা পর্যায়েই সীমাবদ্ধ।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, "খামার পর্যায়ে খাদ্য অপচয় গুরুতর হলেও এড়িয়ে যাওয়া হয়, খাবার নষ্টের হটস্পট এই ক্ষেত্র,"। বাজার ও কৃষকদের মধ্যে যোগাযোগের অভাবের কারণে ফসল উৎপাদনের পরিমাণের অসামঞ্জস্যতা, কী ধরনের ফসল রোপণ করা হবে এবং ফসল রোপণের সময়- এসব কারণেই মূলত প্রতি বছর বিশাল পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য নষ্ট হয়।
অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে অন্যায্য বাণিজ্যিক নিয়ম, দেশি চাহিদার চেয়ে রপ্তানির ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া।
দেশগুলোর সরকার ও খাদ্য শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের খাদ্য অপচয় কমিয়ে আনতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার, সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম ও সাপ্লাই চেইনে নষ্ট হওয়া খাবারের পরিমাণ কমাতে পরিকল্পনা নির্ধারণের আহ্বান জানানো হয় প্রতিবেদনটিতে।
- সূত্র: সিএনএন