সরকারের অনুগত থেকেও ১৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ হারালেন পোনি মা
বেইজিংয়ের বিরাগভাজন হয়ে কপাল পুড়েছে বেশ কয়েক জন চীনা ধনকুবেরের । নিয়ন্ত্রক সংস্থার নানান সিদ্ধান্ত ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় লোকসানের মুখ দেখেন বেফাঁস মন্তব্যকারী শত কোটিপতিরা। কিন্তু, কেউ কেউ সরকারের একান্ত অনুগত থাকার পরও কর্তৃপক্ষের বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় বিপুল ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
এমনকি চীনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমালোচনা করা জ্যাক মা'র চাইতেও- গত ৯ মাসে বেশি ক্ষতির মুখ দেখেছেন টেনসেট হোল্ডিং ইঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা ধনকুবের পোনি মা। এসময় তাঁর কোম্পানির শেয়ারমূল্যে ধস নামায়, পোনি মা ১৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদমূল্য হারান।
চলতি বছরের শুরুতে কোম্পানিটির বাজারদর যেখানে প্রায় এক লাখ কোটি ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল, সেখান থেকে দরপতনের পর বর্তমান বাজার মূল্যায়ন ৫৫ হাজার কোটি ডলারে নেমে এসেছে।
চীনের বিখ্যাত ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবা এবং ই-ফাইন্যান্স কোম্পানি অ্যান্ট গ্রুপের সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। গেল বছরের ৩ নভেম্বর প্রথমে অ্যান্ট গ্রুপের বাজার নিবন্ধনেই বাধা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসময় বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেছিলেন, জ্যাক মা'র ঠোঁট কাটা স্বভাবের কারণেই তাঁর ওপর নিয়ন্ত্রক সংস্থার রোষানল পড়ছে। কিন্তু, তারপর ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থা ও পুঁজিবাজার নিবন্ধনে একাধিক নীতিগত পরিবর্তন এনেছে বেইজিং, যা প্রায় সকল বড় তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানির বাজারদরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
পোনি মা'র সম্পদমূল্য হ্রাসও বেইজিংয়ের দমনমূলক নীতিকে তুলে ধরছে। তবে চীনা কর্তৃপক্ষের মতে, শীর্ষ ধনীদের অনিয়ন্ত্রিত সম্পদ বৃদ্ধির চাইতে তারা তথ্য নিরাপত্তা, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং বৈষম্য কমানোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
গত ৯ মাসে বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণের সরকারি কর্মসূচি চলাকালে টেনসেট তেমন একটা প্রভাবিত হয়নি বলেও মনে করা হচ্ছিল। পোনি মা'র চাপা স্বভাবের কারণেই তাঁর কোম্পানি রক্ষা পেয়েছে বলে ধারণা করেন অনেকেই।
আলিবাবার সঙ্গে টেনসেটের বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বীতাও বেশ পুরনো। চীনা কর্তৃপক্ষ আলিবাবাকে বাজার প্রতিযোগিতার আইনভঙ্গ করায় ২৮০ কোটি ডলার জরিমানা দিতে বাধ্য করেন। সে তুলনায় এর আগে কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণের পূর্বে যথাযথ অনুমতি না নেওয়ায় টেনসেটের ওপর মামুলি কিছু জরিমানা আরোপ করা হয়।
সম্প্রতি টেনসেটের মিউজিক স্ট্রিমিং সার্ভিসের সংরক্ষিত প্রচারসত্ত্ব ত্যাগ করার জন্যও চাপ দেয় কর্তৃপক্ষ। কোম্পানিটিকে আলাদা করে ব্যবসার এই মহাবিপত্তি এড়ায় টেনসেন্ট।
তবে সম্প্রতি বার্তা সংস্থা শিনহুয়া'র মালিকানাধীন একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে, টেনসেটের গেমিং ব্যবসা নিয়ে সমালোচনা করা হয়; ফলে বিনিয়োগকারীরা ধরে নেন এরপর কোম্পানিটির এই মূল ব্যবসার ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারে বেইজিং। সেই আতঙ্কেই শেয়ার বেচার হিড়িক পড়ে গেলে ব্যাপক দরপতনের শিকার হয় টেনসেট।
- সূত্র: দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড