ঘন কুয়াশা ও তীব্র ঠাণ্ডায় ঝুঁকিতে বোরো ধানের বীজতলা
আমন ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের রেশ কাটতে না কাটতেই খুলনায় বোরো ধানের বীজতলাও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
শীতের শুরু থেকেই ঘন কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডার কবলে পড়েছে বীজতলা। এ কারণে বীজতলার চারার গোড়া বা পাতা পঁচা রোগ এবং চারা হলুদ হয়ে দুর্বল হওয়াসহ মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে খুলনা অঞ্চলের কৃষকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
তবে, ঘন কুয়াশা ও অধিক শীতের ক্ষতি এড়াতে বোরোর চারা বৃদ্ধি এবং নিম্ন তাপমাত্রার প্রভাব কমিয়ে আনতে সাদা পলিথিন শিট দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখাসহ বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
পরামর্শ অনুযায়ী বীজতলার পরিচর্যা করা সম্ভব হলে ঝুঁকির আশঙ্কা কমে আসবে বলেও আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
খুলনা জেলা কৃষি দপ্তর সূত্র জানায়, এবার খুলনা জেলায় ৬০ হাজার ৯১৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দুই হাজার ৩৩৫ হেক্টর বেশি। জেলায় বার্ষিক খাদ্য চাহিদা রয়েছে ৪ লাখ ২৭ হাজার ১৯১ টন। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে জেলায় পাঁচ লাখ ৩৭ হাজার ১৬৯ টন খাদ্যশস্য (চাল ও গম) উৎপাদন হয়েছে।
এছাড়া ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে জেলায় বোরো আবাদ হয় ৫০ হাজার ৬৪৫ হেক্টর, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৫১ হাজার ১২০ হেক্টর, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৫২ হাজার ৩শ’ হেক্টর, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ৫৮ হাজার ৫৮০ হেক্টর এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৫৯ হাজার ৯৩০ হেক্টর।
অপরদিকে, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে দুই লাখ ১৫ হাজার ১৬০ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়। এছাড়া ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ২ লাখ ১৬ হাজার ১৭ টন, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ২ লাখ ১৯ হাজার ৯৬৭ টন, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ২ লাখ ৫৬ হাজার ১৮১ টন এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫৭ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়।
ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষক আতিয়ার রহমান জানান, এমনিতেই কারেন্ট পোকার আক্রমণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমন ধানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারপর আবার ঘন কুয়াশা এবং অতিরিক্ত শীতে বোরো বীজতলাও হুমকির মুখে রয়েছে। এ নিয়ে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষক রামকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ধান বিক্রি করতে গেলে, ধানের দাম নেই। কিন্তু বীজ কিনতে গেলে দাম আকাশ ছোঁয়া। তারপরও নতুন স্বপ্ন নিয়ে বোরো বীজতলা বুনেছি। এখন কুয়াশা ও শীতে কি হয় বুঝতে পারছি না।
রূপসা উপজেলার শ্রীফলতলা এলাকার কৃষক জাফর মল্লিক বলেন, আমনতো গেলো কারেন্ট পোকার পেটে। ধান পাইনি। আবার বোরো বীজ বুনেছি। এখন পিছিয়ে আসার পথ নেই, আশায় বুক বেঁধে আছি।
এদিকে, ঘন কুয়াশা ও শীতের তীব্র ঠান্ডা থেকে বোরো বীজতলা রক্ষার লক্ষ্যে রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রহমান কৃষক ও জনসাধারণকে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি ঘন কুয়াশা ও বেশি শীতে বোরো ধানের বীজতলায় করণীয় সম্পর্কে বলেন, চারার বৃদ্ধিতে নিম্ন তাপমাত্রার প্রভাব কমিয়ে আনার জন্য ঘন কুয়াশা ও বেশি শীতের সময় বোরো ধানের বীজতলা সকাল ১০টা থেকে সাদা পলিথিন শিট দিয়ে ঢেকে রেখে সন্ধ্যার পূর্বে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। এছাড়া সন্ধ্যায় পানি সেচ দিয়ে বীজতলার চারা ডুবিয়ে দিতে হবে। সকালে সেই পানি বের করে দিতে হবে এবং প্রতিদিন সকালে দড়ি টেনে দিয়ে বীজতলার চারায় জমাকৃত শিশির ঝরিয়ে দিতে হবে।
এছাড়া বীজতলায় প্রতি শতকে ২০০ গ্রাম টিএসপি, ১৫০ গ্রাম এমওপি ও ৪০০ গ্রাম জিপসাম সার উপরিভাগে প্রয়োগ করতে হবে। শৈত্য প্রবাহের কারণে বোরো ধানের বীজতলার চারা হলদে হয়ে গেলে প্রতি শতক জমিতে ২৮০ গ্রাম হারে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া ১০ লিটার পানিতে ৬০ গ্রাম পটাশ ও ৬০ গ্রাম জিপসাম সার মিশিয়ে বীজতলায় স্প্রে করতে হবে। তাছাড়া অতিরিক্ত ঠান্ডা বা শীতে বীজতলার চারার গোড়া বা পাতা পঁচা রোগ দেখা গেলে ব্যাভিস্টিন বা মেনকোজেব গ্রুপের যেকোনো একটি ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। যতদিন শৈত্য প্রবাহ থাকে ততদিন এ পদ্ধতি চালিয়ে যেতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ পঙ্কজ কান্তি মজুমদার বলেন, ঘন কুয়াশা ও অতিরিক্ত শীত থেকে বোরো বীজতলা রক্ষা করতে হলে প্রথমত পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে এবং ছত্রাকনাশক প্রয়োগ, ভোরের সেচের উষ্ণ গরম পানি ছিটানো এবং রাতে ঠাণ্ডা পানি নামিয়ে দিতে হবে। এসব পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই। বড় ধরনের কোনো বিপর্যয় না হলে এবারও বোরোর বাম্পার ফলন হবে বলেও আশা করছেন তিনি।