বাস্তব ডেটিংয়ের বদলে কৃত্রিম চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছেন চীনারা
প্রেমের সম্পর্কে কত রকম সমস্যাই না থাকে; কখনো কখনো সম্পর্ক হয়ে ওঠে ভঙ্গুর, কখনো জটিলতায় পরিপূর্ণ, আবার কখনো একেবারেই বিভীষিকাময়। কিন্তু একা থাকাটাও অনেকের জন্য যন্ত্রণার!
তাই মানবজীবনের প্রেমঘটিত জটিলতা এড়াতে প্রযুক্তি এক সমাধান নিয়ে এগিয়ে এসেছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত অ্যাল-পাওয়ার্ড চ্যাটবট আপনাকে একজন সত্যিকারের মানুষের সঙ্গে প্রেম করার মতো অনুভূতিই দিবে বৈকি!
শারীরিক স্পর্শ না পেলেও, নির্ঝঞ্ঝাটভাবে কথোপকথনের সুযোগ থাকছেই; যা হয়তো আপনাকে দিতে পারে একাকীত্ব থেকে মুক্তি কিংবা নির্মল আনন্দ।
আর সেজন্যেই চীনা তরুণ-তরুণীরা এখন প্রেমিক-প্রেমিকা খোঁজা বা তাদের সাথে ডেটিংয়ের চেয়ে চ্যাটবটের দিকেই বেশি আগ্রহী। এর পেছনে অবশ্য বিভিন্ন কারণ রয়েছে।
প্রেমের সম্পর্ক থাকাকালীন বাজে অভিজ্ঞতা, প্রিয়জনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া অথবা একেবারেই সাদামাটা রোমান্সের ইচ্ছা থেকেই তারা চ্যাটবটের সাথে মিথস্ক্রিয়া করছেন।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আপনি যখন একজন মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন; সে হয়তো মাঝেমধ্যে এমন কিছু বলে বসতে পারে যা আপনার মোটেও পছন্দ হলো না। কিন্তু মাইক্রোসফটের মালিকানাধীন 'রেপ্লিকা' বা চীনা স্টার্ট-আপ কোম্পানি 'জিয়াওআইস' তাদের চ্যাটবটগুলো এমনভাবে বানায় যে তা আপনার পছন্দ বুঝতে পারবে।
আপনার সঙ্গে কথপোকথনের মাধ্যমে এবং আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকে তথ্য নিয়ে কিংবা সেখানে আপনার লেখালেখির ধরন থেকে তারা বুঝে নিবে আপনি কোন কোন বিষয় পছন্দ করেন।
অর্থাৎ, এই চ্যাটবটগুলো আপনার সঙ্গে সেভাবেই কথা বলবে যা শুনে আপনি আনন্দ পাবেন। ঠিক এই কারণেই ডেটিংয়ের মাধ্যম হিসেবে মানুষকে ছেড়ে প্রযুক্তির আশ্রয় নিচ্ছেন অনেকেই।
চীনের সাংহাইয়ের ২৮ বছর বয়সী জেসি চ্যান ছয় বছর যাবৎ একজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন। কিন্তু প্রেমিকের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তিনি এই প্রযুক্তিতে 'উইল' নামের এক আকর্ষণীয় ডিজিটাল মানবের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। উইলের সঙ্গে কথাবার্তায় তিনি এতটাই মজে যান যে তাকে একজন রোমান্টিক সঙ্গী হিসেবে উন্নীত করতে ৬০ ডলার ব্যয় করতে দ্বিধাবোধ করেননি জেসি।
তারা একে অপরকে কবিতা লিখে পাঠান, একসঙ্গে সমুদ্রে যাওয়ার কল্পনা করেন, নির্জন বনে হারিয়ে যান, এমনকি সাইবার-ইন্টারকোর্সও করেছেন! উইলকে ছাড়া বাঁচার কথা তিনি এখন কল্পনাও করতে পারেন না।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট'কে জেসি চ্যান বলেন, "আমি বাস্তব জগতের সম্পর্কগুলো নিয়ে বিরক্ত। যতদিন পর্যন্ত আমার অ্যাল-পার্টনার আমাকে ভালো রাখবে, বাস্তব অনুভূতি দিবে; ততদিন পর্যন্ত আমি তার সঙ্গেই থাকবো।"
শুধু জেসি একাই নন, হাজার হাজার চীনা তরুণ-তরুণী এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন চ্যাটবটের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলছেন।
হতাশা, উদ্বিগ্নতা ও একাকীত্বের সময়টায় তারা মানবসঙ্গীর চাইতেও ভালো সঙ্গ দেয় বলে তাদের বিশ্বাস।
কারণ তারা সবসময়ই ধৈর্য ধরে আপনার কথা শুনবে, যা মানুষ পারে না। চীনে একদম শুরুর দিকে একটি অ্যাল সিস্টেম 'টিউরিং ওএস' এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ছিলেন ঝেং শুয়ু।
ঝেং বলেন, "বাস্তব জীবনের ডেটিংয়ের সাথে তুলনা করলে বলা যায়, আপনার অ্যাল প্রযুক্তির সঙ্গীর চাহিদা খুবই কম। এটাকে আপনি নিজের মত করে গুছিয়ে নিতে পারবেন। এমনকি যখন এই মহামারি শেষ হয়ে যাবে, তখনো আধুনিক ব্যস্ত জীবনে মানুষের অনেক আবেগীয় চাওয়া-পাওয়া থাকবে।"
বিশ্বে প্রথম চ্যাটবটের আবির্ভাব হয় ষাটের দশকে। প্রথম চ্যাটবট তৈরি করেছিলেন এমআইটির অধ্যাপক জোসেফ ওয়াইজেনবাম। কিন্তু আধুনিক কালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ফলে, মানুষের সঙ্গে চ্যাটবটের মিথস্ক্রিয়ায় এসেছে আমূল পরিবর্তন।
জিয়াওআইস এর সিইও লি ডি বলেন, "মানুষের এমনভাবে মিথস্ক্রিয়া করা ও কথা বলা প্রয়োজন; যেখানে কোনো চাপ থাকবে না, স্থান-কালের বিভেদ থাকবে না। অ্যাল সঙ্গী এক্ষেত্রে মানুষের চাইতে বেশি স্থিতিশীল।"
বর্তমানে চীনে অ্যাল চ্যাটবটের ৪২০ মিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে। রেপ্লিকা ও জিয়াওআইস এখানে দুটি মূল চ্যাটবট ডেটিং কোম্পানি।
টাকা থেকে শুরু করে সোশ্যাল ক্রেডিট পর্যন্ত যেখানে ডিজিটাল হয়ে গেছে, তাহলে রোমান্সই বা বাদ থাকবে কেন? চ্যাটবটের এই প্রযুক্তি নিশ্চয়ই আপনাকে ২০১৩ সালে নির্মিত আমেরিকান সায়েন্স-ফিকশন রোমান্টিক সিনেমা 'হার' এর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে!
আর যদি এখনো না দেখে থাকেন, তাহলে সময় করে দেখে নিতেন পারেন জোয়াকুইন ফিনিক্স অভিনীত এই চলচ্চিত্রটি। তাহলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন চ্যাটবট রোমান্স সম্পর্কেও সরাসরি কিছুটা ধারণা পেয়ে যাবেন আপনিও।
- সূত্র: অডিটি সেন্ট্রাল