সালমার হাত ধরে বাংলাদেশ ফুটবলে ইতিহাস
বাংলাদেশের ফুটবলের ঐতিহাসিক দিনই বলতে হবে। পুরুষদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের টুর্নামেন্টে দায়িত্ব পালন করলেন নারী রেফারি। যা বাংলাদেশের ফুটবলে প্রথম ঘটনা। সোমবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে কমলাপুর শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ ও উত্তর বারিধারা ক্লাব। এই ম্যাচে ম্যাচে সহকারী রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন সালমা আক্তার।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবলে তিনিই যে প্রথম নারী রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেন, সেটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেফারিজ ডেপুটি কমিটির চেয়ারম্যান নেসার ইব্রাহিম। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'এর আগে এমনটা কখনই হয়নি। আজই প্রথম ছেলেদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের লিগ প্রিমিয়ার লিগে কোনা নারী রেফারি দায়িত্ব পালন করলো।'
ফিফার সহকারী রেফারি সালমাকে এলিট প্যানেলে জায়গা করে দিতে রেফারিজ ডেপুটি কমিটির এই সিদ্ধান্ত। ফিফা সালমার ম্যাচ পরিচালনার ভিডিও চেয়েছে। এখানে দায়িত্ব পালন করিয়ে সেই ভিডিও ফিফাতে পাঠানো হবে।
নেসার ইব্রাহিম বলেন, 'সে ফিফার সহকারী রেফারি। এলিট প্যানেলে অন্তর্ভুক্তির জন্য সালমার নাম আমরা পাঠিয়েছি। ফিফা বলেছে তার ম্যাচ পরিচালনার ভিডিও দিতে। মেয়েদের খেলা না থাকায় তাকে ছেলেদের এখানে দায়িত্ব পালনে কাজে লাগানো হয়েছে। এই ভিডিও পাঠানো হবে। এ ছাড়া এই পর্যায়ের ম্যাচে দায়িত্ব পালনে সে যথেষ্ট সামর্থ্যবান। সে আজ খুবই ভালো করেছে।'
কেবল সালমাই নন, আরও নারী রেফারিদের পুরুষদের ফুটবলে দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দেওয়া হবে বলে জানান নেসার ইব্রাহিম। তিনি বলেন, 'আমাদের দেশে বছরে দুই-একটা সময় ছাড়া মেয়েদের ফুটবলই নেই। মেয়েদের নিয়ে সেভাবে কাজই করতে পারি না। উন্নত মানের খেলাও হয় না। তাই আমরা চিন্তা করেছি দ্বিতীয় বিভাগ, প্রথম বিভাগ; এভাবে আরও মেয়েদের সুযোগ করে দিবো। তাতে তাদের মানের উন্নয়ন ঘটবে।'
ছেলেদের ফুটবলে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পেরে উচ্ছ্বসিত সালমা। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'এমন দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি বলে খুবই ভালো লাগছে। আমি যদিও এতোটা আশাবাদী ছিলাম না যে সুযোগ পাব। সুযোগ পেয়ে দারুণ অনুভূতি কাজ করছে। ম্যাচটা ভালো ছিল, আমিও দায়িত্বটা ভালোভাবে করতে পেরেছি বলে তৃপ্তি কাজ করছে।'
অনেক দিন ধরেই ফুটবল ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছেন ২৩ বছর বয়সী সালমা। তবে কখনও এমন পর্যায়ে ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ হয়নি তার। ফিফার সহকারী রেফারির পরীক্ষায় পাস করাতেই যেন তার সামনে খুলে গেল সর্বোচ্চ পর্যায়ে রেফারির দায়িত্ব পালন করার দুয়ার।
জীবন যুদ্ধের লড়াকু সৈনিক সালমা ফুটবল মাঠের রোমাঞ্চ নেওয়ার পাশাপাশি চালিয়ে আসছেন লেখাপড়াও। ইডেন মহিলা কলেজে স্নাতক করছেন তিনি। পাশাপাশি স্বপ্ন দেখে আসছিলেন ফিফার রেফারি হওয়ার। যা পূরণও হয়েছে তার। গত বছর ফিফার সহকারী রেফারি পরীক্ষায় পাস করেন সালমা। ২০২১ সালের জন্য ফিফার সহকারী হিসেবে মনোনিত হয়েছেন তিনি।