রহস্যময় তালেবান মুখপাত্রকে অবশেষে দেখলেন সবাই
আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ দখলে নেওয়ার পর গত মঙ্গলবার তালেবানের প্রথম সম্মেলনে বেশিরভাগ সময় কথা বলতে দেখা যায় মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদকে।
ঐতিহাসিক এ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন মুজাহিদ। 'ইসলামী আইনের কাঠামোর মধ্যে' রেখে নারী অধিকারকে যথাযথ সম্মান দেওয়া হবে বলে এ সময় জানান তিনি।
তবে বেশিরভাগ সাংবাদিকের জন্য মুজাহিদকে প্রথমবার দেখার বিষয়টি ছিলো তাৎপর্যপূর্ণ। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে যার কেবল কণ্ঠস্বরই শোনা যেত, সে মুজাহিদ বছরের পর বছর ধরে আড়ালে থেকেই তার কাজ পরিচালনা করে আসছিলেন।
এদিকে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কথা বলা একজন লোকের চেহারা দেখে তিনি 'হতবাক' হয়ে গিয়েছেন বলে জানান বিবিসির ইয়ালদা হাকিম। সর্বপ্রথমে তার প্রশ্নেরই উত্তর দিচ্ছিলেন মুজাহিদ।
তালেবান মুখপাত্র সমঝোতার সুরে অন্যান্য প্রতিবেদককে বলেছিলেন, 'আমরা অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক কোনো শত্রু চাই না।' কিন্তু হাকিম বলেন যে, এরকম ভাষ্য তার কাছ থেকে পাওয়া পূর্বের কিছু বার্তা থেকে বেশ আলাদা। তিনি বলেন, "তার লিখিত বার্তাগুলোর মধ্যে কিছু ছিলো কট্টর ইসলামপন্থী লেখা। সেগুলোর মধ্যে কিছু বার্তা পড়ে আপনার মনে হতে পারে যে 'এই লোকটি আমেরিকানদের জন্য রক্তপিপাসু বা আফগান সরকারের যে কারো জন্য রক্তপিপাসু।' এসবের পর আজ তিনি বলছেন যে কোনো প্রতিশোধ নেয়া হবে না। বহু বছর ধরে এ ধরণের রক্তপিপাসু বিবৃতি পাঠানোর পর এখন হঠাৎই তিনি শান্তিপ্রিয়? এ তথ্যের সাথে একমত হওয়া কঠিন।"
এদিকে, মুজাহিদ যে আসনে বসে সংবাদ সম্মেলন চালাচ্ছিলেন সেটি কিছুদিন আগেও আফগানিস্তানের মিডিয়া ও তথ্য কেন্দ্রের পরিচালক দাওয়া খান মেনাপালের অধীনে ছিলো, যিনি এই মাসের শুরুতে তালেবান জঙ্গীদের হাতেই নিহত হন। মুজাহিদ এ ঘটনার দায় স্বীকার করে বলেছেন, মেনাপাল 'একটি বিশেষ আক্রমণে নিহত হয়েছেন।'
তবে, বিবিসির প্রবীণ সাংবাদিক জন সিম্পসন সহ অন্যান্য অনেক সাংবাদিক মুজাহিদের প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ার বিষয়ে টুইট করছেন। তাকে 'অপেক্ষাকৃত মধ্যপন্থী, হাসিখুশি মানুষ' বলে উল্লেখ করেছেন সিম্পসন।
কিন্তু কয়েক বছর ধরেই এটি অনুমান করা হচ্ছিলো যে, পরিচয়হীন এ মুখপাত্র একাধিক ব্যক্তি হতে পারে কিনা। বিবিসির প্রধান আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা লাইস ডুসেট বলেন, সামাজিক মাধ্যম আসারও অনেক আগে থেকে এসকল আলোচনা চলছিলো। তখন মুখপাত্রের সাথে কথা বলার জন্য ল্যান্ডলাইনের মাধ্যমে কল করতে হতো সাংবাদিকদের। কেউ কেউ এটিও ধারণা করছেন যে, মঙ্গলবার ক্যামেরার সামনে বসে থাকা লোকটিকে এত বছর ধরে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আসা লোক হিসেবে দেখতে খুব কম বয়সী মনে হয়েছে।
ডুসেট বলেন, "বহু বছর ধরেই অনুমান করা হচ্ছে যে এটি একটি বানোয়াট নাম ছিলো, এবং অনেক 'জাবিউল্লাহ' এতে পালাক্রমে অংশ নিয়েছেন। অবশ্যই এখন আমরা সবাই তাকে জাবিউল্লাহ মুজাহিদ হিসেবে মেনে নিচ্ছি, কিন্তু হয়তো তিনি তা নন?"
এদিকে হাকিম বলেন, তালেবান প্লেবুকের অংশই হলো রহস্য। "তালেবানরা এরকমই, তারা সংগঠিত এবং আদর্শিক- দুর্ঘটনাক্রমে তারা কোনো কিছু করে না। একজন ব্যক্তিকে নিয়ে রহস্য তৈরির জন্য হঠাৎ করেই তিনি পর্দায় হাজির হন- এর থেকে ভালোভাবে আপনি এ স্ক্রিপ্ট লিখতে পারতেন না," বলে যোগ করেন তিনি।
মুজাহিদ একজন ব্যক্তি হন কিংবা না হন, গত মঙ্গলবার তিনি জনসম্মুখে সুবিবেচিত হিসেবে উপস্থিত থাকার চেষ্টার পরেও হাকিম তার কথার প্রতি সতর্ক ছিলেন বলে জানান তিনি।
তবে, শরীয়া আইন কেমন হবে সে বিষয়ে তালেবান কিছু জানায়নি উল্লেখ করে হাকিম বলেন, 'মূল সতর্কবাণী ছিলো শরীয়া আইন- যা আমার জন্য ভীতকর।' তিনি উল্লেখ করেন, "এটি তালেবানদের বৈশিষ্ট্য- তারা প্রতারণামূলক, তারা মোহনীয়, তারা জানে কিভাবে সঠিকভাবে ভাষা ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু তাদেরকে বিশ্বাস করা উচিত কি না সে বিষয়ে আপনি কখনই নিশ্চিত থাকবেন না। এখানে অনেক রহস্য রয়েছে , কিন্তু আমরা কি সত্যিই জানি তারা কারা?"
সূত্র: বিবিসি