আমেরিকার ক্যাপসিকাম এখন চুয়াডাঙ্গায়
চুয়াডাঙ্গায় বাণিজ্যিকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ শুরু হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া এবং উর্বর মাটি ক্যাপসিকাম চাষের উপযোগী হওয়ায় ফলনও হচ্ছে ভাল। কম পরিশ্রম এবং অল্প দিনে ফলন আসায় কৃষকরাও ক্যাপসিকাম চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাঠানো হচ্ছে চুয়াডাঙ্গার ক্যাপসিকাম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের এ সবজি চাষে তাদের পক্ষ থেকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায় ক্যাপসিকামের উৎপত্তি। নতুন আবিষ্কার করা আমেরিকা থেকে ইউরোপ ফিরে আসার সময় এটিকে ইউরোপ নিয়ে আসেন নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস। তবে এখন এটি বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তেও চাষ করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ শুরু হয়েছে। ১২ বিঘা জমিতে হচ্ছে সবজিটির চাষ। অনুকূল আবহাওয়া ও মাটি উর্বর হওয়ায় ক্যাপসিকাম চাষ ভাল হচ্ছে। ক্যাপসিকাম চাষের উপযুক্ত সময় হল অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে।
ক্যাপসিকামের বীজ বপন করার এক মাস পর চারা তৈরি হয়। চারা উপযুক্ত হওয়ার পর জমি তৈরি করতে হয়। চারা রোপনের আগে পলিথিন দিয়ে বেড তৈরি করে নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রেখে গাছের চারা বপন করতে হয়। ১২ বিঘা জমিতে প্রায় ৬ হাজার গাছ রয়েছে। প্রতি বিঘা জমি থেকে ৩ টন ক্যাপসিকাম ফল পাওয়া সম্ভব।
বপনের পর গাছগুলো নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। গাছ লাগানোর ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফুল আসতে শুরু করে। ফুল আসার ২০ দিনের মধ্যে ফল বিক্রির উপযুক্ত হয়। কয়েক মাস পর্যন্ত ফল পাওয়া যায় এ গাছ থেকে। প্রথম পর্যায়ে ফলের রং সবুজ হয়। পাকলে ক্যাপসিকামের রং হয় লাল।
চুয়াডাঙ্গার বাজারে এর চাহিদা কম থাকায় বেপারিদের মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্রি করা হয়। বেপারিরা চুয়াডাঙ্গা থেকে ক্যাসপিকাম কিনে নিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্রি করেন। ওখানে এর চাহিদা অনেক বেশি।
এ পর্যন্ত ১৫ মণের বেশি ক্যাপসিকাম বিক্রি করা হয়েছে। যার বাজার মূল্যে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের এগ্রিকনসান ফার্মের ম্যানেজার খাইরুল ইসলাম বলেন, আমাদের ফার্মে গত তিন বছর ধরে ক্যাপসিকাম চাষ করছি। ২০১৮ সালে ১০ কাঠা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু হয়। প্রথম বছর আশানুরুপ ফল পাইনি।
তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে এক বিঘা জমিতে চাষ করলে ফলন যথেষ্ট ভাল হয়। সেবার অল্প পরিসরে বিক্রিও করেছিলাম। কিন্তু এ মৌসুমে শতভাগ সফলতা পেয়েছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিটি ফলের ওজনও ভাল হয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকায় দামও ভাল।
চুয়াডাঙ্গা খন্দকার ফুড গার্ডেনের ম্যানেজার ইয়াছিন আলি বলেন, ‘‘চায়নিজ খাবার তৈরির জন্য আগে ঢাকা থেকে ক্যাপসিকাম কিনে আনতাম। খরচও পড়তো অনেক বেশি। কিন্তু এখন চুয়াডাঙ্গাতেই ক্যাপসিকাম পাওয়া যাচ্ছে। দামও হাতের নাগালে।’’
এগ্রিকনসান ফার্মের মালিক আবদুল কাদের বলেন, ‘‘আমি চাষে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করি। সব ধরনের ফল ও ফসল উৎপাদনের চেষ্টা করি। ক্যাপসিকাম লাভজনক একটি সবজি।’’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলী হাসান জানান, চুয়াডাঙ্গায় বাণিজ্যিকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ শুরু হয়েছে। এটি লাভজনক ব্যবসা। চাহিদাও রয়েছে বাজারে। জেলাব্যাপী ক্যাপসিকাম চাষ ছড়িয়ে দিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, ক্যাপসিকামের মাঠ ঘুরে দেখেছি। গাছগুলো ভাল হওয়ায় ফলনও ভাল হয়েছে। এটি সবজি হিসেবে যে কোনো খাবারের সঙ্গে খাওয়া যায়। ক্যাপসিক্যামে মরিচের মত গন্ধ থাকলেও খাওয়ার সময় ঝাল লাগে না।