স্বাস্থ্যকর উপায়ে সকাল শুরু করতে ১০ অভ্যাস
আমরা হরহামেশাই বলে থাকি, সকালটা যদি সুন্দরভাবে শুরু না করা যায়; তাহলে পুরো দিনটাই মাটি! সত্যিই তাই। আপনার দিনের শুরুটা কিভাবে হচ্ছে, তার উপর সারাদিনের বাকি কার্যক্রম নির্ভর করে। হয়তো দেখা গেল কোনো কারণে সকাল থেকেই মন-মেজাজ খারাপ কিংবা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন; তাহলে সারাদিনই তা আপনার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই, সকালের রুটিনটা স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
অধিকাংশ মানুষেরই সকাল শুরু হয় নানা রকম দায়িত্ব পালনের চিন্তা মাথায় নিয়ে। বাচ্চার জন্য খাবার তৈরি করা কিংবা পোষা প্রাণীটির দেখাশোনা করা; নাহয় সকালে উঠে নাস্তা বানানো, নিজে তৈরি হয়ে কর্মস্থলে যাওয়া ইত্যাদি। দায়িত্ব-কর্তব্য থেকে পালিয়ে বাঁচার সুযোগ যেহেতু নেই; তাই আমাদের প্রয়োজন একটি স্বাস্থ্যসম্মত সকালের রুটিন। এই রুটিন মেনে চললে সব কাজ সমাধা করেও মুক্ত নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ থাকবে। একই সাথে তা আমাদেরকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করে তুলবে এবং নিজের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, সকালের জন্য কিভাবে একটি স্বাস্থ্যসম্মত রুটিন শুরু করবেন। তবে মনে রাখতে হবে, সুস্থ থাকতে চাইলে একদিন-দুদিন রুটিন অনুসরণ করলেই চলবে না; প্রতিদিনই এর ধারা বজায় রাখতে হবে। নিজের লাইফস্টাইল এবং স্বাস্থ্য অর্জনের লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আপনি এই রুটিনকে আরও কার্যকরী করে তুলতে পারেন।
১। অ্যালার্ম ঠিক করা
সকালবেলা নিজের যত্ন নিতে সময় চাইলে, আপনাকে সকালে একটু জলদিই ঘুম থেকে উঠতে হবে। কিন্তু তার জন্যে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।
দিনের প্রথম কাজটাই হলো- সঠিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠা। এর জন্য অ্যালার্ম সেট করুন এমনভাবে, যেন আপনার দায়িত্ব পালনের জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়। আপনার বাচ্চারা যদি সাড়ে ছয়টায় উঠে; তার মানে আপনাকে তারও আগে উঠতে হবে। তাছাড়া, সন্তান না থাকলেও; সকাল সাতটায় ঘুম ভেঙে সাড়ে সাতটার মধ্যে দিনের কাজের জন্য তৈরি হয়ে যাওয়াটাও সুবিধাজনক।
তবে রাতের ঘুমও পর্যাপ্ত পরিমাণে হতে হবে। তাই রাতে ঘুমের সময়টাকেও এগিয়ে নিয়ে আসুন। কারণ ঘুমের পেছনে যথেষ্ট সময় না দেওয়া মোটেও স্বাস্থ্যকর কিছু নয়।
২। দিনের আরম্ভ হোক মুক্ত নিঃশ্বাসে
অনেকেই সকালে ঘুম ভেঙে প্রথম যে কাজটি করেন, তা হলো নিজের মোবাইল ফোন হাতে নেওয়া। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, সকাল সকাল ভার্চুয়াল দুনিয়ার বিচিত্র সব খবর বা মেসেজ চোখে পড়ায় আপনার মধ্যে এক ধরনের দুশ্চিন্তা ভাব জন্ম নিচ্ছে কিনা? ঠিক কতটা সময় আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় করে ফেলছেন?
কিন্তু যদি এমন হয়, আপনি প্রতিজ্ঞা করলেন- মোবাইলের পরিবর্তে দিনের শুরুটা করবেন ছয়বার লম্বা-গভীর শ্বাস নিয়ে? এটি আপনার মধ্যে কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়িয়ে দিবে। আপনি তখন নিজের মধ্যে এক ধরনের ক্ষমতা অনুভব করবেন; মনে হবে, হ্যা, আমি তৈরি!
গভীরভাবে নিঃশ্বাস নেওয়া শুধু যে আপনার মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করবে, তা ই নয়; এটি আপনার দেহের অঙ্গবিন্যাসও ঠিক রাখে।
৩। কফি নয়, আগে পানি
গবেষণায় দেখা গেছে, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই এক গ্লাস পানি খেলে মেটাবলিজম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
কারণ ঘুমের মধ্যে আমরা নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় এবং ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। যেহেতু একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে পানির পরিমাণ ৬০ শতাংশ; তাই পানি পান করা অবশ্যই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
৪। অঙ্গসঞ্চালন করা
সকালে ঘুম থেকে উঠে সহজাতভাবেই যে আমরা আড়মোড়া ভাঙি; এর পেছনে একটি কারণ আছে। সারা রাত একই অবস্থানে শুয়ে থাকার পর আমাদের দেহ আড়ষ্ট হয়ে থাকে। তখন শরীরের নড়াচড়ার প্রয়োজন হয়। তাহলে এই সহজাত প্রবৃত্তিকেই রুটিন বানানো যাক?
ঘুম ভাঙার সাথেসাথেই কাজ করতে চলে না গিয়ে, কিছুক্ষণ এদিক সেদিন হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নড়াচড়া নিশ্চিত করতে হবে এসময়। চটজলদি একটু যোগব্যায়ামও করে নিতে পারেন চাইলে।
৫। ব্যায়ামের জন্য সময় বের করা
আমাদের অনেকের পক্ষেই সকালবেলা পুরোদমে ব্যায়াম করার সময় মেলে না। কিন্তু তাতে কোনো অসুবিধা নেই। আপনার দৈনন্দিন কিছু অভ্যাসের মধ্য দিয়েই শরীরচর্চার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এই যেমন, সকালে গোসলে যাওয়ার আগে কিছুক্ষণ পুশ-আপ দেওয়া।
এই পদ্ধতিকে বলা হয় 'হ্যাবিট স্ট্যাকিং'। অর্থাৎ একবার ব্যায়াম করার ব্যাপারটা আপনার অভ্যাস হিসেবে বদ্ধমূল হয়ে গেলে, আপনি আর তা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইবেন না।
৬। সঠিকভাবে মনস্থির করা
সকালে ঘুম ভাঙার পর কয়েক মিনিটের মেডিটেশন বা 'ধ্যান' করার মাধ্যমে আপনি সারাদিনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মনস্থির করতে পারেন। এর ফলে দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয় এবং মন থেকে বিক্ষিপ্ত ভাব দূর হয়ে যায়।
ইন্টারনেটে অসংখ্য অ্যাপ রয়েছে, যেগুলো মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে মেডিটেশন করার উপায় জানিয়ে দিবে আপনাকে। অথবা আপনি নিজেই টাইমার সেট করে বসে যেতে পারেন। ধ্যানের সময় যেকোনো মন্ত্র উচ্চারণ করতে পারেন যা আপনাকে দিনের বাকি কাজ সম্পর্কে মনস্থির করতে সাহায্য করবে।
৭। কৃতজ্ঞতা স্বীকার
গবেষণায় দেখা গেছে, নিজের মধ্যে কৃতজ্ঞতাবোধ স্বীকারের চর্চা করলে অনেক কষ্ট কমে যায়; সমানুভূতি বাড়ে এবং আগ্রাসী মনোভাব কমে যায়। এই তিনটি বিষয়ই আপনাকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে বেশ কার্যকরী।
প্রতিদিন সকালে ঘুম ভেঙে, সূর্যোদয় দেখার জন্য হেঁটে যেতে পারেন; অথবা জীবনে যা যা পেয়ে আপনি কৃতজ্ঞ, সেগুলো লিখে রাখতে পারেন। ধ্যানের সময়ও নিজের এই জীবনের জন্য কৃতজ্ঞতা বোধ স্বীকার করতে পারেন।
৮। নিজের বিছানা গুছানো
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর নিজের এলোমেলো বিছানা নিজেই গুছানোর চেষ্টা করুন। এর ফলে আপনার মধ্যে দায়িত্ববোধ চলে আসবে। সেই সাথে নিজের ব্যক্তিগত জায়গাটুকু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নও থাকবে।
৯। রুটিনের পুনরাবৃত্তি
সবচেয়ে কঠিন কাজটি হলো রুটিন 'প্রতিষ্ঠা করা।' অর্থাৎ, একবার রুটিন অনুসরণ করতে শুরু করার পর আপনি যেন আর পিছিয়ে না যান। কখনো কখনো যদি রুটিনের কিছু অংশ বাদ পড়ে যায়, তা নিয়ে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। পরদিন সকালে আবার নতুন উদ্যমে শুরু করুন।
১০। সফলতার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষকে রুটিন মাফিক চলার দিকে ধাবিত করে যে মনোভাবটি, তা হলো- আমাকে সফল হতেই হবে।
সকালে নিজের জন্য সময় বের করতে চাইলে, রাতের রুটিনটাও সেভাবেই মেনে চলতে হবে। কাজের চাপ কমিয়ে ফেলার জন্য রাতেই কিছু পরিকল্পনা করুন। এই যেমন- পরদিন সকালে তৈরি হওয়ার জন্য কাপড় গুছিয়ে রাখা অথবা সকালের নাস্তার আয়োজন এগিয়ে রাখা। সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা নিঃসন্দেহে একটি কঠিন কাজ, কিন্তু অসাধ্য নয়!
প্রতিটি মুহূর্তই আমাদের জীবনে মূল্যবান। তাই আপনি যদি একটি স্বাস্থ্যকর সকালের রুটিন মেনে চলতে চান; তাহলে দেরি কেন? আগামীকাল থেকেই শুরু করে দিন!
- সূত্র- সিএনএন