আইসিসিবি হেরিটেজ: যেখানে খেতে পারবেন মোগলের মতো
একটি রেস্তোরাঁ মানে শুধুই এর খাবার নয়; এর পরিবেশও যে খাদ্যের রুচি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এ কথা অনেকেই স্বীকার করবেন। খাওয়ার মধ্য দিয়ে গ্রাহককে সেরা অনুভূতি দিতে রেস্তোরাঁর অন্দরসজ্জার দিকে মনোযোগ দেওয়াটা এখন বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে আমাদের দেশে।
আর রেস্তোরাঁর পরিবেশ যদি হয় ইতিহাসের বিখ্যাত মোগল সম্রাটদের মহলের আদলে, তাহলে খাওয়ার আনন্দ নিঃসন্দেহে কয়েক গুণ বেড়ে যায়। কারণ, রাজকীয় ভাবভঙ্গিতে আয়েশ করে বসে খেতে কে না পছন্দ করে!
দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সবচেয়ে প্রভাবশালী কোনো সাম্রাজ্যের নাম যদি নেওয়া হয়, তাহলে সবার আগে থাকবে মোগলদের নাম। বহু যুগ হলো মোগল সাম্রাজ্য হারিয়ে গেছে; কিন্তু পেছনে ফেলে রেখে গেছে তাদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, যা আজও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।
কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে এমন কোনো স্থান নেই যেখানে মোগল সংস্কৃতি চর্চা করা হয়।
তাই 'ফিল দ্য মোগল' ট্যাগলাইন নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি) নিয়ে এসেছে 'আইসিসিবি হেরিটেজ'; যেখানে আপনি পাবেন সত্যিকারের মোগলাই খাবারের স্বাদ।
পূর্বাচল এক্সপ্রেস হাইওয়েতে ৩০০ ফিট রাস্তার পাশেই কুড়িল বিশ্বরোডে অবস্থিত আইসিসিবি। আইসিসিবি প্রাঙ্গণের ভেতরে গেলেই পাওয়া যাবে 'আইসিসিবি হেরিটেজ রেস্টুরেন্ট'।
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও, এখানকার পরিবেশ বেশ শান্ত ও ছিমছাম। চারদিকে সবুজ গাছপালা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য শোভিত এই এলাকায় প্রবেশ করলেই আপনি শহুরে যান্ত্রিক জীবনকে ক্ষণিকের জন্য হলেও ভুলে যাবেন।
আইসিসিবি হেরিটেজের প্রতিটি কোণায়, প্রতিটি বস্তুতেই আছে মোগল সংস্কৃতির ছোঁয়া। আসল মোগলাই রন্ধনশালার পাশাপাশি, এই রেস্টুরেন্টের অন্দরসজ্জাও মোগলদের অন্দরমহলের মতোই চোখ-ধাঁধানো।
রেস্তরাঁয় প্রবেশের সময়ই আপনি দেখতে পাবেন, মোগল পোশাকে সজ্জিত এক দারোয়ান আপনাকে সালাম ঠুকে দরজা খুলে দিচ্ছে। একদম প্রথম অভিবাদনের মুহূর্ত থেকেই আপনি অন্যান্য রেস্টুরেন্টের তুলনায় আইসিসিবি'র ভিন্নতা বুঝতে পারবেন।
রেস্টুরেন্টে ঢুকলেই চোখে পড়বে এর পুরো আয়োজন; যা ঠিক মোগলদের খাবার ঘরের মতো করেই সাজানো।
সম্ভবত এখানে এসেই আপনি প্রথম অ্যাক্রিলিকে হাতে আঁকা চিত্র ও নকশা করা পর্দা দেখতে পাবেন; যেগুলোর মধ্যে মোগলদের নানা গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ছাদের পুরোটাই নকশি কাঁথা দিয়ে সাজানো, যা রেস্টুরেন্টটিকে আরও অদ্বিতীয় করে তুলেছে।
আধুনিক কালে দেশে খুব কম মানুষই পিতলের বাসন-কোসনে খাবার খান। কিন্তু আইসিসিবি হেরিটেজ-এ আপনাকে খাবার দেওয়া হবে পিতলের থালিতে করে; যেভাবে একসময় মোগল রাজা-বাদশারা খেতেন!
খাওয়ার সময়টায় ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকা কাওয়ালি গানের সুর এমন এক আবহ সৃষ্টি করবে যে, একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আপনি হারিয়ে যাবেন মোগল যুগে।
'থালি'
আইসিসিবি হেরিটেজে আপনি তিন ধরনের খাবারের থালি পাবেন-'আলম পানাহ-এ থালি', 'জাহান পানাহ-এ থালি' এবং 'আজম পানাহ-এ থালি'।
এখানে 'থালি' বলতে বুঝানো হয় হরেক রকমের খাবারে পরিপূর্ণ বিশাল বড় এক প্লেটকে। এখানকার তিনটি থালিই বেশ সুস্বাদু; তবে 'জাহান পানাহ-এ থালি' ই সবচেয়ে জনপ্রিয়।
জনপ্রতি হিসেব করে আপনি চাইলে নিজের মতো করে থালি সাজিয়ে নিতে পারবেন এখানে। দুজনের খাওয়ার জন্য একটি থালি'র খরচ পড়বে মাত্র ২১০০ টাকা। অন্যদিকে, তিনজনের জন্য নিতে চাইলে খরচ পড়বে ২৮০০ টাকা এবং পাঁচজনের জন্য ৪২৫০ টাকা।
জাহান পানাহ থালিতে আপনি পেয়ে যাবেন ২০ টি আলাদা আইটেম; যার মধ্যে থাকছে মাটন লেগ, গার্লিক বিফ, ডিপ ফ্রাইড পমফ্রে, দুজনের জন্য বিরিয়ানি, নান ও তরকারি, বিভিন্ন চাটনি ও মশলাসহ পাপড়। খাবারের পরিমাণটাও এমন যে, চাইলেই তিনজন মিলে খেতে পারবেন।
তবে এখানেই শেষ নয়; খাওয়া শেষে শাহী কায়দায় মিষ্টিমুখের জন্য এই থালিতে শাহী টুকরা, জর্দা ও ফিরনিও থাকবে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, থালিতে খাবারগুলো এমনভাবে সাজিয়ে দেওয়া হয় যে, তা দেখেই আপনার চোখ জুড়িয়ে যেতে বাধ্য!
অন্যদিকে, আলম পানাহ-এ থালি এবং আজম পানাহ-এ থালির মূল্য(দুজনের জন্য) যথাক্রমে ১৮০০ টাকা এবং ২৪০০ টাকা।
এর বাইরেও, 'দাওয়াত-এ আম' নামের আরেকটি আইটেমও এই রেস্টুরেন্টের মেনুতে আছে। সবগুলো থালির মূল্যের সাথেই ভ্যাট যুক্ত হবে আলাদাভাবে।
রাজকীয় অন্দরমহল:
আইসিসিবি হেরিটেজের ডাইনিং হলে রাজকীয় ভাব আনার জন্য বিভিন্ন কোণায় কৃত্রিম মণিমুক্তার বাক্স ও মালা ছড়িয়ে রাখা হয়েছে।
নিখুঁত কাজের ডাইনিং টেবিল ছাড়াও, কুশন দিয়ে সাজানো একটি ছো্ট বিছানাও আছে। অতিথিরা চাইলে মোগলদের মত সেখানে বসেও খেতে পারবেন।
রেস্তোরার খাবারের মান নিয়ে একজন ক্রেতাকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, "এখানের খাবারের মান খুবই ভাল। আমাদের কাছে বেশ ভালো লেগেছে। আমি মনে করি, এখানকার মোগল ঘরানার পরিবেশ আর খাবারের মান মিলিয়ে এমন দাম রাখাটা যৌক্তিক। যদি রেটিং করতে হয়, আমি তাদেরকে দশে নয় দিবো।"
আইসিসিবি হেরিটেজ প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। অর্থাৎ, আপনি সেখানে শুধু রাতের খাবারের জন্যই যেতে পারবেন।
খাবারের মান ভালো হওয়ায় রেস্টুরেন্টটি প্রায়ই হাউজফুল থাকে। তাই যাওয়ার আগে সিট রিজার্ভেশন দিয়ে যাওয়াই উত্তম। তবে রিজার্ভেশন ছাড়া চলে আসা ক্রেতাদের জন্যও এখানে খাওয়ার সুযোগ থাকে।