ঘড়িকথন ও দাদাঘড়ি
ঘড়ি তো মাত্র সেদিনের আবিষ্কার। খ্রিষ্টজন্মের হাজার চারেক বছর আগে। ঘড়ি আবিষ্কার হয়েছে বলেই কি আমাদের সময়জ্ঞান হয়েছে, নাকি আগেও ছিল? সময়ের শুরুটা? যখন মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে 'বিগ ব্যাঙ' মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে, ১৫ বিলিয়ন বছর আগে। তখন থেকেই তো সময়। কিন্তু মহাবিশ্বের বিলয় ঘটলে সময়েরও কি সমাপ্তি ঘটবে? স্মার্টওয়াচ, গ্র্যান্ডফাদার ক্লক সব কি অর্থহীন হয়ে পড়বে?
সূর্যের বয়স ৫ বিলিয়ন বছর। পৃথিবী সূর্যের চেয়ে কিছুটা কম বয়সী। এখন পৃথিবীর বয়স ৪,৫৪০,০০০,০০০ বছর।
অবশ্য এই হিসাবের কাজটা সহজ করে দিতে চেয়েছিলেন আর্চবিশপ জেমস আগার। একেবারে দিন-তারিখ ঠিক করে তিনি বলেছেন খ্রিষ্টজন্মের ৪০০৪ বছর আগে অক্টোবরের ২২ তারিখ শনিবার পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বাইবেলের বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে গবেষণা করে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। তাঁর অনুসারীরা ২২ অক্টোবর পৃথিবীর জন্মদিন পালন করেন। ঘড়ি সময় আবিষ্কার করেনি, সময়ই তার হিসাবনিকাশের জন্য ঘড়ি-ক্যালেন্ডার ইত্যাদি আবিষ্কার করিয়ে নিয়েছে।
বছরে ৩৬৫ দিন, লিপইয়ারে ৩৬৬। এ হিসাব প্রাইমারি স্কুলেই মুখস্থ করতে হয়েছে। আমাদের নিত্যব্যবহার্য ঘড়িতে সময়ের ক্ষুদ্রতম একক সেকেন্ড। এক বছরে ৩১,৫৫৬,৯২৬ সেকেন্ড। পৃথিবীর ঘূর্ণণকাল শ্লথ হয়ে আসছে। শ্লথগতির কারণে সৃষ্ট ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে বাড়তি সেকেন্ড বছরের হিসাবে যোগ করতে হচ্ছে। এই বাড়তি সেকেন্ডের নাম লিপ সেকেন্ড (লম্ফ মুহূর্ত); সর্বশেষ লিপ সেকেন্ড যোগ হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬।
দূরের নক্ষত্রপুঞ্জ কাছের নক্ষত্রপুঞ্জের চেয়ে দ্রুতগতিতে ঘুরছে, মহাবিশে^র ত্বরণ বাড়ছে। দূরের নক্ষত্রপুঞ্জের দ্রæতগতির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পদার্থবিজ্ঞান বলছে, আগে সময় আরও দ্রুতগতির ছিল, গতি কমে যাচ্ছে বলেই দূরের নক্ষত্রপুঞ্জের আবর্তন আরও দ্রুততর বলে মনে হচ্ছে। সময়ের গতি কমতে কমতে কোথায় গিয়ে ঠেকবে? সময়ও 'ফ্রিজড' হয়ে যাবে। এসব ঘড়ি তখন অচল হয়ে যাবে।
গমং সংকট: ঘড়ির সময় দ্রুত যাচ্ছেই না
এর জন্য বড় গবেষক হওয়ার প্রয়োজন নেই, এই অভিজ্ঞতা আপনারও হয়েছে। তবুও গবেষকেরা সময়-সংকটের একটি তালিকা দিয়েছেন, মিলিয়ে দেখুন কতটা সঠিক।
১. যখন আপনার সামনে অনিশ্চয়তা, সময় খুব ধীরে যায়:
(ভাবুন কোনো নারী, প্রেগন্যান্ট হতে চাননি কিংবা চেয়েছেন। যদি না চেয়ে থাকেন, তাহলে প্রেগন্যান্সি টেস্টের ফলাফল পজিটিভ হলে কী যে সমস্যা হতে পারে বুঝতেই পারছেন। আর তিনি যদি চেয়ে থাকেন, আর যদি ফলাফল নেগেটিভ হয়ে থাকে, তাহলে তাঁর হতাশা কতটা ভাবতে পারেন!)
প্যাথলজিক্যাল ক্লিনিক বলেছে, ২০ মিনিটের মধ্যেই রিপোর্ট দেবে। ৫/৬ মিনিটের মাথায় গিয়ে জিজ্ঞেস করবেন, রিপোর্টটা কি হয়েছে? ৫ মিনিট কাটতে মনে হয় আধঘণ্টা লেগে গেছে। এটাই হয়, সময় ধীরে যায়।
২. ব্যাপারটা যখন আপনার জন্য একঘেয়েমির সময়টা লম্বা হয়ে যায়, তখন মনে হয়, ১৬০ সেকেন্ডে ১ মিনিট, ১৬০ মিনিটে ঘণ্টা।
৩. বারবার ঘড়ি দেখলে সময় বরফজমাট হয়ে যায়। কাঁটা ঘোরে না। (আর মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আপনার প্রেমিকা এসে হাজির হবেন। আপনি ঘড়ি দেখছেন, ঘড়ির কাঁটা কি ঘুরছে না? এর নাম 'স্টপড ক্লক ইল্যুশন')
৪. নিজের সম্পর্কে সচেতন থাকলেও সময় ধীরে যায়।
৫. আতঙ্কিত থাকলে সময়ের ব্যাপ্তি বেড়ে যেতে থাকে। (উড়োজাহাজে চড়তে যার ভয়, তার দুই ঘণ্টার আকাশ ভ্রমণ আর দুই ঘণ্টার বাস ভ্রমণ মোটেও এককথা নয়। বাসের দুই ঘণ্টা দেখতে দেখতে কেটে যাবে, কিন্তু আকাশের দুই ঘণ্টা হয়ে উঠবে আদিগন্তবিস্তৃত অনন্ত গগনে অনিঃশেষ আতঙ্কগ্রস্ত ভ্রমণ।
৬. অপেক্ষার সময় দীর্ঘ হয়।
(কাজটা শেষ করার জন্য এক সপ্তাহ সময় পেলেন, এটা কখনোই পর্যাপ্ত নয়। দেখতে দেখতে সময়টা ফুরিয়ে যায়, কাজ রয়ে যায় অসমাপ্ত। কিন্তু আপনার ছুটির আর এক সপ্তাহ বাকি। এক সপ্তাহ? কত দিনে এক সপ্তাহ? আপনার দিন কাটে না।)
৭. নতুন কিছু ধারণ করতে হলে সময়টা দীর্ঘ মনে হয়। (একেবারে অপরিচিত একটি রাস্তার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ১০ মিনিট লাগল। একই গতিতে কিছুটা পরিচিত এই রাস্তার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত একই সময় লাগার কথা। কিন্তু আপনার মনে হবে কম লেগেছে। কয়েক দিন পর সম্পূর্ণ পরিচিত এই রাস্তায় একই গতিতে যখন এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছালেন, মনে হলো, সময় অনেক কম লেগেছে। কিন্তু ঘড়ি ধরে পরীক্ষা করলে দেখবেন, প্রতিবারই লেগেছে ১০ মিনিট। প্রথমবার বেশি মনে হওয়ার এবং ক্রমান্বয়ে কম মনে হওয়ার কারণ হচ্ছে স্মৃতিধারণ। প্রথমবার আপনার জীবনে প্রথম আসা এই রাস্তার দুই পাশের অনেক স্মৃতি ধারণ করে মজুত করতে হয়েছে বলে সময় বেশি লেগেছে মনে হয়েছে।)
৮. যখন আপনার তাড়াহুড়া, ঘড়িও দ্রুত ছোটে।
(পরীক্ষার নোটিশ পেলেন, হাতে মাত্র তিন দিন। বলতে গেলে খাওয়াদাওয়া ভুলেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে বসে গেলেন, অনেক কিছু পড়ার বাকি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলেন, দুই দিন চলে গেছে। অথচ আপনি ২৪ ঘণ্টা আগে পড়তে বসেছেন। আপনার যখন তাড়াহুড়া, ঘড়িও ঘূর্ণকের তার স্পিড বাড়িয়ে দেয় বলে মনে হয়।)
৯. জুয়ার টেবিলেও সময় দ্রুত যায়।
(আপনি হারুন বা জিতুন জুয়া আপনাকে এতটা বশীভূত করে ফেলে যে আপনার সময়জ্ঞান লোপ পায়। হঠাৎ ঘড়ির ওপর চোখ পড়াতে দেখলেন, রাত ১২টা বেজে গেছে। এত রাতে বাড়ি ফিরলে স্ত্রী লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে দেবে; সুতরাং খেলা চালিয়ে গেলেন। যখন প্রথম হাই উঠল, বাইরে তাকিয়ে দেখলেন সূর্য উঠে গেছে, ঘড়ি এত দ্রুত চলে!)
১০. সময়ের আপেক্ষিকতা ঘড়ির কাঁটার ওপর নির্ভর করে না।
৩০ বছর আগে যে নারীর সাথে কিছু সময় কাটানোর পর দেখলেন ঘড়িতে ৩ ঘণ্টা কেটে গেছে, এখন ৩০ মিনিট না যেতেই আপনার মনে হচ্ছে, ৩ ঘণ্টা হয়ে গেল, আর কত? নারী-সান্নিধ্যের আপেক্ষিকতার একটি ব্যাখ্যা অ্যালবার্ট আইনস্টাইনও দিয়েছেন।
যদি ঘড়ি না থাকত
কবজিঘড়ি, পকেটঘড়ি, টেবিলঘড়ি, দেয়ালঘড়ি, স্টপওয়াচসহ সময় মাপার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ঘড়ি যদি না থাকত, তা হলে কেমন করে জানতেন যে-
১. একজন গড়পড়তা স্বাস্থ্যবান মানুষ তার জীবনের পুরো বছর ঘুমিয়েই কাটান।
২. সারা দিন যতবার আপনার চোখের পাতা পড়ে, সব যদি যোগ করতেন তাহলে দেখতেন, শুধু এ কারণে দিনে ৩০ মিনিট আপনার চোখ বন্ধ থাকে।
৩. এমনিতে আইনস্টাইনের স্কুল রেকর্ড খারাপ, এমনকি বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক হওয়ার পরও প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা ঘুমাতেন।
৪. গরিলারা আইনস্টাইনের চেয়ে গড়পড়তা ৪ ঘণ্টা বেশি ঘুমায়, তাদের ঘুম ১৪ ঘণ্টা। আর বেজি আইনস্টাইনের চেয়ে ১ ঘণ্টা কম ঘুমায়, গড়ে ৯ ঘণ্টা।
৫. সদ্যোজাত সজারুর ছানার জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এর গায়ে কাঁটা গজাতে শুরু করে।
৬. চিতা ৩ সেকেন্ডে গতিশূন্য থেকে ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার ওঠাতে পারে।
৭. আফ্রিকান বড় পাইথন না খেয়ে ৭৩০ দিন বেঁচে থাকতে পারে।
৮. ভোমরা সেকেন্ডে ১৬০ বার পাখা ঝাপটায়।
৯. সোনালি দাড়ি কালো দাড়ির চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
১০. ৩১,৫৬৬,০০০ সেকেন্ডে এক বছর।
ঘড়ি না থাকলে এ রকম শত শত তথ্য অজানা থেকে যেত। কোয়ান্টাম তত্ত্বে ক্ষুদ্রতম মুহূর্তকে বলা হয় প্ল্যাঙ্ক টাইম, আর তা হচ্ছে ০.০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০৯ সেকেন্ড। দশমিক এবং ৯-এর মাঝখানে ৪২টি শূন্য। সময় তো সব সময়ই ছিল কিন্তু সময় মাপার এবং সময়ের ঠিক কোন জায়গাটায় আমাদের অবস্থান তা জানার যে যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, সেটাই ঘড়ি।
গ্র্যান্ডফাদার ক্লক
পিকচার ঘড়ি বা দাদাঘড়ি যাই বলি না কেন, গ্র্যান্ডফাদার ক্লকের আভিজাত্য ও কৌলিন্য কখনও ম্লান হয়ে আসে না।
১৮৭৬ সালে গীতিকার ও কবি হেনরি ক্লে ওয়ার্কের বিখ্যাত 'মাই গ্র্যান্ডফাদার ক্লক' গানটিই ঘড়িটির নাম গ্র্যান্ডফাদার ক্লক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এর পেছনে একটি কাহিনিও আছে। ইংল্যান্ডের নর্থ ইয়র্কশায়ারে পিয়ার্স ব্রিজে গ্রামীণ পরিবেশে একটি মনোরম হোটেল রয়েছে, নাম দ্য জর্জ হোটেল, দুজন অবিবাহিত ভাই হোটেলটি চালাতেন। তাঁরা ইংল্যান্ডের অধিবাসী, নামের সাথে রয়েছে জেনিংস।
হোটেলের লবিতে মেঝের ওপর বেশ লম্বা ও ভারী একটি পেন্ডুলাম ঘড়ি ফ্লোর ক্লক (তখন এ ধরনের ঘড়িকে ফ্লোর ক্লক বলা হতো) হিসেবে দণ্ডায়মান ছিল। এ ধরনের ঘড়ি অনেক সময়ই সময় নিয়ে হেরফের করত। কদিন পরপর কাঁটা ঘুরিয়ে সময় সমন্বয় করা হতো। কিন্তু জর্জ হোটেলের ঘড়িটি একেবারে যথাযথ সময় দিয়ে যাচ্ছিল। এটা একটা অবাক করা ব্যাপার। এর মধ্যে দুই ভাইয়ের একজনের মৃত্যু ঘটতে ঘড়িটি প্রতিদিন ১৫ মিনিট করে স্লো হতে থাকে। ঘড়ির মিস্ত্রি ডেকে আনা হলো। তাঁরা একাধিকবার মেরামতও করলেন। কিন্তু স্লো হওয়ার মাত্রা আরও বাড়তে থাকল। একসময় প্রতিদিন ঘড়িতে ১ ঘণ্টা করে পিছিয়ে যেতে থাকল। ঘড়ির এই আচরণের কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। এদিকে কোনো উপায় না পেয়ে একসময় মিস্ত্রিরাও হাল ছেড়ে দিয়ে বললেন, এটা আর মেরামত হওয়ার নয়।
অন্য জেনিংস ভাইয়ের বয়স ৯০ বছর হলে তিনিও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন একদিন। এবারও ঘড়ি অদ্ভুত আচরণ করল: এত দিন স্লো হলেও ঘড়িটি দিনরাত চলছিল, এবার জেনিংস ভাইটির মৃত্যুর সাথে পুরো ঘড়ির চলাই থেমে গেল। বন্ধ হয়ে গেল ঘড়ির টিক টিক। চাবি দেওয়া হলো বারবার। তারপরও কাঁটা নড়ল না। দুই জেনিংসের সবশেষ জেনিংসের মৃত্যুই কি ঘড়িটির বন্ধ হয়ে যাওয়ার সাথে কারণ, নাকি পুরো ব্যাপারটি কাকতালীয়?
জর্জ হোটেলে নতুন ম্যানেজার যোগ দিলেন, কিন্তু এই ম্যানেজার ঘড়িটি মেরামতের কোনো উদ্যোগ নিলেন না। তিনি লবিতে সূর্যের আলো পড়ে এমন এক কোণে মেঝের ওপর অচল ঘড়িটাকে শোপিস হিসেবে দাঁড় করিয়ে রাখলেন।
১৮৭৫ সালে মার্কিন গীতিকার হেনরি ক্লে ওয়ার্ক ইংল্যান্ড সফরে এসে জর্জ হোটেলে রাত্রিবাস করলেন। ঘড়িটা তাঁর চোখে পড়ল এবং রিসেপশনের কর্মচারীর কাছ থেকে ঘড়িটার অচল হয়ে যাওয়ার কাহিনি শুনলেন এবং সম্ভবত তখনই বুড়োর মৃত্যু ও ঘড়ির মৃত্যু সমান্তরাল টেনে একটি গান লেখার সিদ্ধান্ত নিলেন।
হেনরি ক্লে ওয়ার্ক (জন্ম: মিডলটাউন ১৮৩২, মৃত্যু হার্টফোর্ড ১৮৮৪) ঊনবিংশ শতকের অত্যন্ত জনপ্রিয় গীতিকার। 'কিংডম কামিং', 'সার্চিং থ্রু জর্জিস' এবং 'মাই গ্র্যান্ডফাদার্স ক্লক' গানের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। এর বাইওে তিনি ও তাঁর বাবা ক্রীতদাস প্রথা উচ্ছেদ আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। তাঁর বাবাকে এ জন্য কারাবরণও করতে হয়। মাই গ্র্যান্ডফাদার্স ক্লক রেকর্ড বের হওয়ার অল্পকালের মধ্যে বিক্রির লক্ষ্য ছাড়িয়ে যায়। কালক্রমে মিলিয়ন অতিক্রম করে।
অক্সফোর্ড অভিধান বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত, মেঝেতে দাঁড়ানো লম্বা কাঠের বাক্সে স্থাপন করা পেন্ডুলাম ঘড়ির 'গ্র্যান্ডফাদার ক্লক' এই গান থেকেই ওই নামের উৎপত্তি।
গ্র্যান্ডফাদার ক্লক সংগীত
গ্র্যান্ডফাদার ক্লক আমার এত বড় শেলফে ঢোকে না
কাজেই নব্বই বছর মেরুতেই দাঁড়িয়ে রইল
বুড়ো মানুষটার চেয়েও আধফুট লম্বা
কিন্তু ওজন তার চেয়ে এক মুদ্রাও বেশি নয়
যেদিন তার জন্ম হয়, সেদিন সকালেই আনা হয়
... ...
বুড়ো যখন মারা গেলেন
ঘড়িটা থেকে গেল, সংক্ষেপে বলা যায়, আর জাগেনি
না ঘুমিয়ে নব্বই বছর টিক টক টিক টক
তার জীবনের মুহূর্তগুলো গুনতে থাকে টিক টক টিক টক
একবার এদিক, একবার ওদিক, পেন্ডুলামের দোল থেকে
বালক বয়সে তিনি অনেক ঘণ্টা কাটিয়ে দিয়েছেন
শৈশব থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া ঘড়িটা তার সাথে
বেদনা ও আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছে
ঘড়ি যখন ২৪-এ ঠেকে, মানে ২৪ বছর
তিনি প্রস্ফুটিত সুন্দরী কনে নিয়ে ঘরে ঢোকেন
বুড়ো যখন মারা গেলেন
ঘড়িটা থেমে গেল, আর চলেনি কখনো।
... ...