দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে গবেষকদের সতর্কতা
করোনা ভাইরাসের আলফা, বিটা এবং গামাসহ বিভিন্ন স্ট্রেইনের বৈশিষ্ট্য বহনকারী নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন গবেষকরা। ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আফ্রিকা, এশিয়া ও প্রশান্তমহাসাগরীর অঞ্চলের সাতটি দেশে সি.১.২ নামের নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ দেখা গেছে।
অসংখ্যবার মিউটেশন ঘটা এই ভ্যারিয়েন্ট আরও বিপজ্জনক প্রমাণিত হবে কি না, তা নিয়ে এখনো নিশ্চিত নন গবেষকরা। তবে, এই ভ্যারিয়েন্টে অন্যান্য অতি সংক্রামক ভ্যারিয়েন্টের পরিবর্তনসমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে।
গবেষকদের মতে, মিউটেশনের সংখ্যা বাড়লেই তা আরও বেশি বিপজ্জনক প্রমাণিত হবে, এমন কোনো কথা নেই। অনেক মিউটেশনের ফলেই ভাইরাস আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। মাত্র একটি বাড়তি মিউটেশনে আগের যেকোনো মিউটেশনের প্রভাব বাতিল হতে পারে।
ফলে, সামগ্রিকভাবেই ভাইরাসটি নতুন কোনো বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজের ভাইরোলজিস্ট পেনি মুর জানান, তারা নতুন এই ভ্যারিয়েন্টে নজর রাখছেন।
"বর্তমানে আমরা এই ভ্যারিয়েন্ট নিষ্ক্রিয় করতে দক্ষিণ আফ্রিকায় সার্স-কোভ-২ সংক্রমণ পরবর্তী বা ভ্যাকসিনেশন থেকে প্রাপ্ত অ্যান্টিবডির প্রভাব মূল্যায়ন করছি," অনলাইনে প্রি-প্রিন্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানান গবেষকরা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, "২০২১ সালের মে মাস থেকে দক্ষিণ আফ্রিকাজুড়ে তৃতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণের সময় এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা ও ওশেনিয়ার সাত দেশেও এই ভাইরাসের দেখা মিলেছে। সার্স-কোভ-২ এর ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তকরণ মূলত সংক্রমণের নতুন ঢেউ সংশ্লিষ্ট।"
তবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভ্যারিয়েন্টকে 'ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট' না কি 'ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন' হিসেবে মনোনীত করবে তা জানতে আরও সময় অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করছেন গবেষকরা। আর তাই কোনো গ্রিক হরফে এর নামকরণ করা হয়নি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বর্তমানে অধিক সংক্রামক ও বিপজ্জনক চারটি ভ্যারিয়েন্টকে 'ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন' হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই চার ভ্যারিয়েন্ট হলো, আলফা বা বি.১.১.৭, বিটা বা বি.১.৩৫১, গামা বা পি.১ এবং ডেল্টা বা বি.১.৬১৭.২।
'ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট' হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি ভ্যারিয়েন্টকে মনোনীত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইটা বা বি.১.৫২৫, লোটা বা বি.১.৫২৬, কাপ্পা বা বি.১.৬১৭.১ এবং ল্যামডা বা সি.৩৭।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-৯ বিষয়ক টেকনিক্যাল প্রধান মারিয়া ভ্যান কারখোভ বলেন, করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া খুব কম মানুষের দেহেই সি.১.২ ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
টুইট বার্তায় তিনি জানান, "দক্ষিণ আফ্রিকায় ২১ মে প্রথম চিহ্নিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত বিশ্বে সি.১.২ শনাক্ত হওয়া প্রায় ১০০টি সিকুয়েন্সের কথা জানা গেছে।"
"সি.১.২ কে এখন অবধি খুব বেশি সংক্রামক হিসেবে আবির্ভূত হতে দেখা যায়নি," বলেন তিনি।
তবে, নতুন কোনো বিষয় সামনে আসলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের ওয়েবসাইট এবং সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করবে।
"বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন কাজ এখনো চলমান। ভাইরাসের অভিযোজন বুঝতে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সে অনুযায়ী আমাদের কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কৌশলগত ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে," বলেন ভ্যান কারখোভ।
এখন পর্যন্ত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কর্তৃত্ব চলছে বলেও জানান তিনি।
আলফা এবং ডেল্টার মতো ভ্যারিয়েন্টগুলো বিশ্বে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় প্রভাববিস্তারকারী ভ্যারিয়েন্ট রূপে আবির্ভূত হয়েছে। বিটা এবং গামার মতো অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টগুলো মূলত অঞ্চলভেদে বেশি শনাক্ত হতে দেখা গেছে।
- সূত্র: সিএনএন