এবার ঘাম ঝরিয়ে জিততে হলো
উইকেট বিবেচনায় সংগ্রহটা একেবারে ছোট ছিল না। বল হাতে বাংলাদেশের শুরুটাও হয় দারুণ। এরপরও নিউজিল্যান্ড এদিন চোখ রাঙাল। দলের দুঃসময়ে হাল ধরে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিতে থাকলেন অধিনায়ক টম ল্যাথাম। যদিও নখ কামড়ানো ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছে বাংলাদেশই। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে কিউইদের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উত্তেজনা ছড়ানো ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ঘরের মাঠের দলটি। সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ৫ সেপ্টেম্বর মিরপুরে অনুষ্ঠিত হবে।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য ২০ রান দরকার ছিল নিউজিল্যান্ডের। এই ওভারটি করতে মুস্তাফিজুর রহমানের ওপর ভরসা রাখেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথম চার বলে ৭ রান খরচা করা মুস্তাফিজ পঞ্চম বলটি 'বিমার' করেন। নো বলসহ ৪ রান, ৫ রান পেয়ে জয়ের পথে আরেকটু এগিয়ে যায় কিউইরা। কিন্তু শেষ ২ বলে ৮ রান দরকার পড়লে ৩ রানের বেশি তুলতে পারেনি তারা।
মিরপুরের উইকেট আজ খুব একটা বাধা হয়নি। টি-টোয়েন্টির মতো ব্যাটিং না হলেও মাঝারি পূঁজি গড়ে বাংলাদেশ। লিটন দাস, নাঈম ও ম্যাচ সেরা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের তিরিশোর্ধ ইনিংসে ৬ উইকেটে ১৪১ রান তোলে বাংলাদেশ। দারুণ শুরুর পর বড় সংগ্রহই মিলতে পারতো। কিন্তু উদ্বোধনী জুটির রান কাজে লাগিয়ে ইনিংস বড় করতে পারেনি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
জবাবে খারাপ শুরুর পরও দলকে জয়ের পথে রাখেন দারুণ ব্যাটিং করা টম ল্যাথাম। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু তার হার না মানা ৬৫ রানও দলের হার রুখতে পারেনি। সফরকারীদের ইনিংস শেষ হয় ৫ উইকেটে ১৩৭ রানে।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। দলীয় ১৬ রানে ওপেনার রাচিন রবীন্দ্রকে ফিরিয়ে দেন সাকিব আল হাসান। ২ রান পরই টম ব্লান্ডেলকে ফেরান শেখ মেহেদী হাসান। দ্রুতই দুই উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়া দলকে পথ দেখাতে শুরু করেন টম ল্যাথাম ও উইল ইয়ং। এই জুটিতে ১১ ওভারে ৬১ রানে পৌঁছে যায় কিউইরা।
হুমকি হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙেন সাকিব। ২৮ বলে ৩টি চারে ২২ রান করা ইয়ংকে ফেরান বাঁহাতি এই স্পিনার। এরপর কলিন ডি গ্রান্ডহোমকে নিয়ে এগোতে থাকেন ল্যাথাম। তবে এই জুটিকে দীর্ঘ হতে দেননি নাসুম আহমেদ। ৮ রান করা গ্রান্ডহোমকে সাজঘর দেখিয়ে দেন বাঁহাতি এই স্পিনার।
কিছুক্ষণ পর ৬ রান করা হেনরি নিকোলসকে নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন শেখ মেহেদী। বাকিটা সময় কোল ম্যাকনকিকে নিয়ে লড়েন ল্যাথাম। কিউই অধিনায়ক ৪৯ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় ৬৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। ম্যাকনকি ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন। সাকিব আল হাসান ও শেখ মেহেদী ২টি করে উইকেট নেন। বাকি উইকেটটি নেন নাসুম আহমেদ।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা দারুণ হয়। উদ্বোধনী জুটিতে ৫৯ রান যোগ করেন লিটন কুমার দাস ও নাঈম শেখ। তখন মনে হয়েছিল বড় সংগ্রহই গড়তে যাচ্ছে ঘরের মাঠের দলটি। কিন্তু দশম ওভারে সব হিসেব পাল্টে দেন রাচিন রবীন্দ্র। কিউই বাঁহাতি এই পেসার দুই বলে দুই উইকেট তুলে নেন।
রবীন্দ্রর অনেক বাইরের বলে টেনে এনে বোল্ড হন ২৯ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৩ রান করা লিটন। অন্যান্য সময়ে তিনে সাকিব নামলেও আজ এই জায়গায় নামেন মুশফিকুর রহিম। তাকে দাঁড়াতেই দেননি আগের ম্যাচেই জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া রবীন্দ্র। পরের বলেই মুশফিককে ফিরিয়ে তিনি। প্রথম বলেই আউট হয়ে থামেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার।
দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। চাপ কাটিয়ে তুলতে শুরু থেকেই দ্রুত ব্যাট চালাতে শুরু করেন সাকিব আল হাসান। ব্যাটে-বলেও হচ্ছিল তার। কিন্তু বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ইনিংস লম্বা হয়নি। ৭ বলে ২টি চারে ১২ রান করে থামেন সাকিব।
এরপর দ্রুতই ফিরে যান আফিফ হোসেন ধ্রুব। বাকিটা সময় দলের রানচাকা ঘুরিয়েছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ও নুরুল হাসান হোসান। এ সময় মূলত ব্যাট চালিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ একাই। ৩২ বলে ৫টি চারে ৩৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সোহান ১৩ রান করেন। রবীন্দ্র সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট নেন এজাজ প্যাটেল, কোল ম্যাকনকি ও হামিশ বেনেট।