সোহেল রানা: ‘মিলিয়নিয়ার’ পুলিশ ইন্সপেক্টর
চারটি ফ্ল্যাট, ৯ কোটি টাকা মূল্যের একটি বাণিজ্যিক ভবন, বেশ কিছু জমির প্লট, এলিট ক্লাবের সদস্যপদ, চারটি ভিন্ন দেশে সম্পত্তি এবং শত-শত কোটি টাকার সম্পদ।
দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া রাজধানীর বনানী থানার প্রাক্তন পুলিশ ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শেখ সোহেল রানার জীবন এমনই।
গোয়েন্দা সূত্র আরও জানিয়েছে, তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির বেশ কিছু ডিলারশিপও রয়েছে এই পুলিশ কর্মকর্তার।
তার চারটি ফ্ল্যাটের মধ্যে দুটি রাজধানীর নিকেতনে। শেখ সোহেল রানার মালিকানাধীন টিঅ্যান্ডজি নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটি শাখা গুলশানের ডিসিসি মার্কেটে এবং আরেকটি রয়েছে উত্তরার গরিব-ই-নেওয়াজ অ্যাভিনিউতে।
রিয়েল এস্টেটের প্রতি বিশেষ ঝোঁক থেকে পুর্বাচলের সেক্টর-৩-এ একটি প্লট, কুড়িল বিশ্বরোড লাগোয়া একটি আবাসিক এলাকার ই ও আই ব্লকে দুটি প্লট এবং খাগড়াছড়িতে রিসোর্টের জন্য জমি কিনেছেন তিনি।
ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নেপালের কাঠমান্ডুতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন এই ইন্সপেক্টর।
১০ হাজার টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশি এক মানবপাচারকারীর সহযোগিতায় তিনি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পার হন বলে জানিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ)।
একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, শেখ সোহেল রানা আলোচিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ই-অরেঞ্জেও অর্থলগ্নি করেছেন।
এক সময়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি ডিভিশনের সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত থাকা শেখ সোহেল রানা মানবপাচারের সঙ্গেও জড়িত বলে এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জনপ্রতি ৮০০ ইউরোর বিনিময়ে তিনি ইউরোপে মানবপাচারের দায়ে অভিযুক্ত।
এর আগে, ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিউল ইসলাম জানান, সোহেল রানাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। তবে প্রক্রিয়াটি সহজ নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, সোহেল রানার ব্যাপারে গুলশান বিভাগ পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে; রিপোর্ট পেলে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে, অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে গত শুক্রবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত থেকে সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে বিএসএফ।
বলে রাখা ভালো, ১ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে অসৎ উপায়ে ১,১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গত জুলাইয়ে রাজধানীর গুলশান থানায় ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার মামলা করা হয়।
ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের স্বত্বাধিকারী সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমান-সহ তিনজন এখন কারাগারে। ব্যক্তিজীবনে সোনিয়া হলেন সোহেল রানার বোন। অন্যদিকে, মামলার অন্যতম আসামি বীথি আক্তার ওরফে নাজনীন নাহার বীথি পলাতক রয়েছেন। মামলার বাদী জানিয়েছেন, বীথি পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানার চতুর্থ স্ত্রী।
এদিকে, গত রোববার পুলিশ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, যেহেতু ভারতের সঙ্গে আসামি প্রত্যার্পণ চুক্তি রয়েছে, তাই সোহেল রানাকে আসামি হিসেবে দেশে ফেরত আনা যাবে।