চরম ভোগান্তির পর অবশেষে ডিসেম্বরে চালু হবে বিআরটি
বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের অব্যস্থাপনা ও কিছু গাফলতির কারণে জনভোগান্তির কথা স্বীকার করেছেন বিআরটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সফিকুল ইসলাম। তার দাবি, বিষয়টি ইতোমধ্যে সমাধান হয়ে গেছে।
তিনি জানান, এ বছরের ডিসেম্বরেই প্রকল্প এলাকার সড়কগুলো চার লেন করে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এতে যানজট ও ভোগান্তি একেবারেই কমে যাবে।
বৃহস্পতিবার প্রকল্পটির কাজের অগ্রগতি, সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দ্য বিজনেজ স্টান্ডার্ডের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
২০১২ সালে প্রকল্প নেওয়ার পর ২০১৮ সালে ফিজিক্যাল ওয়ার্ক শুরু হয় প্রকল্পটির। তখন থেকেই গাজীপুর থেকে আবদুল্লাহপুর এলাকায় চলাফেরার ক্ষেত্রে মানুষের চরম ভোগান্তি শুরু হয়।
ঢাকার সন্নিকটে গাজীপুরের শিল্প এলাকায় প্রায় সাড়ে চার হাজার শিল্প কারখানার জন্য চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই প্রকল্প। কারখানার পণ্য পরিবহনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ছাড়াও যাত্রীদের চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়।
কিন্তু, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় কয়েক বছরেও হাইওয়েতে সৃষ্ট এই ট্রাফিক জটের কোনো সুরাহা সম্ভব হয়নি।
মহাখালী থেকে গাজীপুর যেতে যাত্রীদের তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হতো। পরিবহন চালক ও মালিকরাও এই দুর্ভোগের শিকার। যানজটের কারণে যাত্রার সময় বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রভাব তাদের আয়ের ওপরেও এসে চাপত।
বাড়তি এই সময় অপচয়ের কারণে প্রতি যাত্রায় বাসগুলোকে জ্বালানির জন্য অতিরিক্ত ৫০০টাকা ব্যয় করতে হতো। রক্ষণাবেক্ষণ খরচও দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে সফিকুল ইসলাম বলেন, "বিভিন্ন সময় মানুষের ভোগান্তি ও কাজের অগ্রগতি নিয়ে কথা হয়েছে। অনেকে আবার ভুল ধারণা পোষণ করেন। যার ফলে আমাদের ওপর একটা কাজ করার চাপ তৈরি হয়ছে। এর সুফল পাবে জনগণ।"
"অনেকের প্রশ্ন ২০১২ সালে নেওয়া প্রকল্প কেন এত দেরি হচ্ছে। আসলে আমাদের দেশে এমন এক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে যে, আমাদের বাস্তবায়ন কমিটি তিন থেকে চার বছরের বেশি সময় নিয়ে প্রকল্প অনুমোদন করে না। তারা জানে যে, পরে বাড়ানো হবে। আর আমরা জানি যে, পরে বাড়াতে হবে। সব বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রেই এটা হয়ে থাকে।"
"প্রকল্পের সম্ভাব্য সময় ২০১৯ পর্যন্ত ছিল। কিন্তু ২০১৩ সালে শুরু হয়ে ২০১৫ পর্যন্ত সময় ডিজাইন ও পরিকল্পনা করতেই ব্যায় হয়েছে। তারপরে ২০১৭ পর্যন্ত সময় গিয়েছে ঠিকাদার নিয়োগ ও সেবা ক্রয় করতে। আমরা কাজ শুরু করতে পেরেছি ২০১৮ সালে," বলেন তিনি।
"তবে আশা করি আর সময় বাড়াতে হবে না। ২০২২ এর ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা কাজ শেষ করতে পারব। এর মধ্যে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ পার করতে হয়েছে। কোভিড আমাদের কাজকে অনেক মন্থর করে দিয়েছে। তবে, আমাদের কাজ একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি," মন্তব্য করেন সফিকুল ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, "আমরা পুরো প্রজেক্ট এলাকায় চার লেন সড়ক নির্মাণ করছি। কিছু জায়গায় সেটা ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো এলাকার রাস্তা তৈরি সম্পন্ন হবে। তখন এখানে কোনো যানজট ও দুর্ভোগ থাকবে না।"
বিআরটির এমডি সংবাদ সম্মেলনে জানান, "জুলাই ২০২১ পর্যন্ত সওজ পার্টের ৬১.৭০ শতাংশ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে, বিবিএ তাদের ৫৩.৭০ শতাংশ কাজ শেষ করেছে। সব মিলিয়ে জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৩.২৭ শতাংশ। এ ছাড়া বাস ডিপো নির্মাণ এবং যাত্রীদের হাঁটার জন্য ফুটপাথ তৈরির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। উভয়পার্শ্বে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেইনেজ ব্যবস্থার নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে। যাত্রীরা যেন কোন সমস্যা ছাড়াই ঘর থেকে স্টেশনে আসতে পারে সেজন্য ৬৫ টি সংযোগ সড়ক নির্মাণও সম্পন্ন করেছে বি আর টি কর্তৃপক্ষ।"
কেমন বাস চলবে?
এমডি আরও বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই ১০০টি ১২মিটার স্ট্যান্ডার্ড এসি বাস কেনার বাজেট করা হবে। তিনি ধারণা দেন যে, এরকম একেকটি বাসের বর্তমান মূল্য দুই কোটি টাকা।
তিনি বলেন, "আমরা আরেকটি বিআরটিসি বানাতে চাই না। মান সম্পন্ন বাস আনা হবে এবং তা যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। বাস কেনার জন্য এই বছরের ডিসেম্বরেই টেন্ডার দেওয়া হবে। আমাদের দরকার ১২৯টি বাস। এখন আমরা ১০০ বাস কেনার পরিকল্পনা করলেও, তহবিল পেলে সবগুলো বাস কেনা হবে।"
এমডি বলেন, "দুপাশের ফুটপাত সহ বিআরটি হবে ৮ লেন। দুই পাশের প্রথম লেন গুলোতে চলবে রেপিড ট্রানজিট বাস। পরের দুই লেন করে দুই পাশে চার লেনে মিক্সড মটরযান চলবে। এর পরের দুটো চলবে নন মটরাইজড ভেহিকল। এছাড়া দুই পাশেই থাকবে ফুটপাত।"
"ই-টিকেটিং ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া একটা টিকেট কেটে যাত্রী যেকোনো সময় তার সুবিধা মত বাসে উঠতে পারবে। আমরা চেষ্টা করছি যাত্রী যেন এক টিকেটে এমআরটিও ব্যবহার করতে পারেন। সেজন্য, আমরা উত্তরা (সেন্টার) এমআরটি স্টেশন পর্যন্ত সাটল সার্ভিস চালু করার পরিকল্পনা করছি। প্রজেক্টের দুই প্রান্তে দুটো টার্মিনাল থাকবে যেখানে গাড়ি রেখে ড্রাইভারদের রেস্ট নেওয়া ও ফ্রেশ হওয়ার ব্যবস্থা থাকবে," বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, "আমরা প্রাইভেট সেক্টরকে প্রমোট করতে চাই। তাই তাদেরকেই এই অপারেশনের দায়িত্ব দেয়া হবে। টেন্ডারের মাধ্যমে এটা দেওয়া হবে।"
ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, "আমরা চাই প্রাথমিক পর্যায়ে ভাড়া এখনকার অনুপাতে (১ টাকা ৭০ পয়সা প্রতি কিমি) থাকুক। অথবা এর ২৫ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে।"