কোভিড নেগেটিভ হয়েও জটিলতায় ভুগছেন তারা
কোভিড-১৯ নেগেটিভ হওয়ার ১৭ মাসেও অসুস্থতা পিছু ছাড়েনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মীনাক্ষী রানি দাশের। গত বছরের ২৩ মার্চ বাংলাদেশে নার্সদের মধ্যে প্রথম কোভিড পজিটিভ হন তিনি।
কোভিড পজিটিভ হওয়ার পর আটদিন কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ৩১ মার্চ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান তিনি। এরপর কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে কোভিড নেগেটিভ হওয়ার ১৭ মাসেও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেননি তিনি। ভোকাল কর্ডে সিস্টের কারণে এখনো কথা বলতে কষ্ট হয় তার।
মীনাক্ষী রানি দাশ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পর এখনো ভুগতে হচ্ছে। আমার ভোকাল কর্ডে সিস্ট হয়েছে, বেশিক্ষণ কথা বললে কষ্ট হয়। এখনো সিঁড়ি ভাঙতে বা একটু কাজ করতে হাঁপিয়ে যাই। এছাড়া রাতে ঠিকমত ঘুম হয় না।"
মীনাক্ষী রানির গুরুতর উপসর্গ থাকলেও সাংবাদিক মাহমুদ কমলের মৃদু উপসর্গ ছিল। তারপরেও কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পর ডায়াবেটিসে ভুগছেন তিনি।
২২ দিন পজিটিভ থাকার পর ২০২০ সালের ২৭ জুন কোভিড নেগেটিভ হন সাংবাদিক মাহমুদ কমল (৩৩)। কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পর ফুসফুসের এক্স-রে, হার্টের ইকোকার্ডিওগ্রাম ও ডায়াবেটিস টেস্ট করানোর পর ডায়বেটিস শনাক্ত হয় তার।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে মাহমুদ কমল বলেন, "কোভিড পজিটিভ হওয়ার এক মাস আগে এক সংগঠনের পক্ষ থেকে ফ্রি ডায়াবেটিস টেস্ট করাচ্ছিল, সেখানে আমিও ডায়াবেটিস টেস্ট করি। তখন সব স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু করোনার পর করা ওজিটিটি (ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট) টেস্টের রেজাল্ট দেখে অবাক হই, খালি পেটে ১৮। কোভিডের কারণে এই অল্প বয়সে নতুন করে আরেকটা টেনশন যোগ হলো।"
মাহমুদ কমলকে এখন নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। দুই একদিন ওষুধ মিস হলেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
শুধু মীনাক্ষী রানি বা মাহমুদ কমল নয়, কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পর অনেকেই শ্বাসকষ্ট, ঘুম না হওয়া, ডায়াবেটিস, হার্টের প্রবলেমসহ বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় ভুগছেন। এখন কোভিড পরবর্তী জটিলতাকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
চলতি বছরের ১ এপ্রিল কোভিড পজিটিভ হন ইন্টারন্যাশনাল হেলথ রিসারচ্চ অর্গানাইজেশনের একজন কর্মকর্তা। গন্ধ না পাওয়া ছাড়া তার কোনো সমস্যা ছিল না। সাতদিন পর কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পর গন্ধ ফিরে পেতে দুই সপ্তাহ সময় লেগেছে।
কিন্তু, মে মাস থেকে হঠাৎ বুকে চাপ অনুভব করেন তিনি। জুলাই মাসে বুকে ব্যথা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে ইসিজি, ইকোসহ বিভিন্ন টেস্ট করার পর তার পালপিটিশন বেড়ে যাওয়া ও মাইট্রাল ভালভ রিগারজিটেশন ডায়াগনোসিস হয়। যদিও কোভিড পজিটিভ হওয়ার তিন মাস আগে করা ইসিজিতে সব স্বাভাবিক ছিল।
৪৩ বছর বয়সী ওই কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ডাক্তার বলেছেন কোভিড পরবর্তী জটিলতার কারণে এ সমস্যা হয়েছে। এখন নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, না হলে সমস্যা হয়। এছাড়া কোভিডের পর আমার কোলেস্টেরল বেড়ে গেছে।"
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহকারী অধ্যাপক ড. ফজলে রাব্বি চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, "যেসব রোগীর মৃদু উপসর্গ থাকছে তাদের কোভিড পরবর্তী জটিলতা কম হলেও যেসব রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকে বা যাদের অক্সিজেন বেশি প্রয়োজন হয় তাদের কোভিড পরবর্তী জটিলতায় ভোগার হার বেশি। কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পর নতুন করে ডায়াবেটিস, ফুসফুসের সমস্যা, ঘুমের সমস্যা, থাইরয়েড জটিলতা, ভুলে যাওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিয়ে আসছেন রোগীরা।"
বিএসএমএমইউতে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার পোস্ট কোভিড ক্লিনিকে গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন রোগী কোভিড পরবর্তী সমস্যা নিয়ে আসেন বলে জানান ড. ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, "যেসব রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তাদের কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পর ছয় মাস থেকে দুই বছর ডাক্তারের ফলোআপে থাকা উচিত। কোভিড-১৯ যেহেতু একটি নতুন রোগ, তাই পোস্ট কোভিড কমপ্লিকেশন ঠিক কতদিন থাকবে তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।"
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৯৪ জন কোভিড থেকে সেরে উঠেছেন। তবে, এর মধ্যে কতজন কোভিড পরবর্তী জটিলতায় ভুগছেন তার কোনো সঠিক তথ্য নেই। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, কোভিড থেকে সুস্থ হওয়া প্রায় ১৫ শতাংশ রোগী বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় ভুগছেন। তাদের নিয়মিত চিকিৎসকের ফলোআপে থাকা প্রয়োজন।