মোল্লা বারাদারের মৃত্যুর গুঞ্জন, তালেবানের অস্বীকার
সম্প্রতি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তালেবান নেতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার নিহত হয়েছেন বলে গুঞ্জন শোনা গেছে। তবে এমন গুঞ্জনকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তালেবানের অন্য নেতারা।
সোমবার তালেবান জোর দিয়েই বলে, আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার জন্য বারাদার বর্তমানে কান্দাহার প্রদেশে দলটির শীর্ষ নেতা মৌলভী হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার সঙ্গে বৈঠক করছেন।
কিন্তু গত শুক্রবার কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে হাক্কানি পরিবাররে সঙ্গে এক বৈঠক চলাকালে বন্দুকযুদ্ধে তিনি নিহত হয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
বারাদের বেঁচে থাকার প্রমাণ হিসেবে তালেবান এখন পর্যন্ত একটি হাতে লেখা নোট ও একটি অডিও রেকর্ডিং প্রকাশ করেছে, যা জল্পনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তালেবান মুখপাত্র মোহাম্মদ নাঈম সোমবার অডিও রেকর্ডিংটি প্রকাশ করেন এতে নিজেকে বারাদার দাবি করে এক ব্যক্তি 'মিডিয়া প্রোপাগান্ডিস্টদের' বিরুদ্ধে তার মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে মিথ্যা গুজব ছড়ানোর অভিযোগ তুলে বলেন, 'আমি-সহ আমার সব সহকর্মী ঠিক আছি।'
অডিও ক্লিপটিতে বারাদার বলেন, 'আমার মৃত্যুর খবর মিডিয়ায় এসেছে। গত কয়েক রাত ধরে আমি সফরে ছিলাম। এই মুহূর্তে যেখানেই আছি, আমার সব ভাই ও বন্ধুসহ আমরা সবাই ভালো আছি।'
তিনি আরও বলেন, 'মিডিয়া সবসময় মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়ায়। অতএব, সাহসিকতার সঙ্গে সেইসব মিথ্যা প্রত্যাখ্যান করুন। আমি আপনাদের শতভাগ নিশ্চিত করছি, আমরা ভালো আছি এবং আমাদের মাঝে কোনো সমস্যা নেই।'
হাতে লেখা নোটটি প্রকাশ করার কয়েক ঘণ্টা পর টুইটারে অডিও রেকর্ডিংটি প্রকাশ করে বারাদারের বেঁচে থাকার জোর দাবি জানায় তালেবান।
নোটটিতে বারাদারের নয়, বরং স্বাক্ষর রয়েছে ডেপুটি মৌলভী মুসা কলিমের। তিনি নোটটিতে প্রাসাদে গোলাগুলির ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, বারাদার কান্দাহারে রয়েছেন।
কাবুলভিত্তিক দলের অন্যতম সিনিয়র মুখপাত্র মুহাম্মদ সুহাইল শাহীনও বারাদারের মৃত্যুসংবাদকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'মোল্লা বারাদার আখুন্দের আহত বা নিহত হওয়ার খবর ভিত্তিহীন এবং এটি একেবারেই সত্য নয়।'
এর আগে ধারণা করা হয়েছিল, তালেবানের নতুন সরকার কাঠামোতে মোল্লা বারাদার হবেন সরকার প্রধান। তবে গত সপ্তাহে দলটির নতুন সরকার ঘোষণায় তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ দেওয়ায় দলের মধ্যে কোন্দল এবং তার নিরাপত্তা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
জল্পনা শুরু হয়েছিল, তালেবানের এই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের মধ্যে লড়াইয়ের কারণে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। হাক্কানি নেটওয়ার্ক ও এর পরিবারের সদস্যরা একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী হিসেবে তালেবানের নতুন প্রশাসনে শীর্ষস্থানে অবস্থান করছেন।
রোববার কাবুলে তালেবান নেতাদের সঙ্গে কাতার থেকে আগত উর্ধ্বতন প্রতিনিধিদের বৈঠকে বারাদারের অনুপস্থিতি তার নিরাপত্তাজনিত সন্দেহের জন্ম দেয়।
বারাদার তালেবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সর্বোচ্চ নেতা মোল্লা ওমরের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন, যিনি ২০১৩ সালে যক্ষ্মায় মারা যান।
ওমরের মৃত্যুর পর বারাদার তালেবানের রাজনৈতিক শাখার প্রধান নেতা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তিনি এই দলের সবচেয়ে সিনিয়র ব্যক্তিদের একজন। কিন্তু ধারণা করা হয়, হাক্কানি পরিবারে সঙ্গে তার মতোবিরোধ রয়েছে।
অন্যদিকে, দুর্ধর্ষ হাক্কানি নেটওয়ার্কের সঙ্গে তালেবান দল বাদেও অন্যান্য ইসলামি চরমপন্থী দল, যেমন- আইএসআইএস-খোরাসানের সংযোগ রয়েছে বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক।
এই পরিবারের দুই সদস্যের একজন সিরাজউদ্দিন এখন নতুন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং খলিল শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
আন্না হাক্কানিও উচ্চ পর্যায়ের আলোচক হিসেবে ভূমিকা রাখছেন এবং তিনি কাতারের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকের সময়ও উপস্থিত ছিলেন।
আফগানিস্তান দখল করার আগে, তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাও কয়েক বছর আগে মারা গেছেন, এমন গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। তারপর থেকে ইসলামপন্থীরা দাবি করতে থাকেন, তিনি জীবিত আছেন এবং দেশের কান্দাহার প্রদেশে অবস্থান করছেন।
আখুন্দজাদা খুব কমই জনসম্মুখে উপস্থিত হন। তাই ধারণা করা হচ্ছে, সম্ভবত এ কারণেই তাদের দুজনের বৈঠকের ছবি তালেবানরা প্রকাশ করছে না।
-
সূত্র: দ্য ডেইলি মেইল