২৭ শতাংশ ‘সুচনা’ সুবিধাভোগীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে: আইসিডিডিআর,বি
সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলায় তিন বছরে ১৪ শতাংশ থেকে বেড়ে সর্বমোট ২৭ শতাংশ সুবিধাভোগীকে খাদ্য নিরাপত্তায় পৌঁছাতে সাহায্য করেছে সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ পরিচালিত 'সুচনা' প্রকল্প। আইসিডিডিআর,বি'র এক জরিপে উঠে এসেছে এই তথ্য।
বুধবার সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ ও আইসিডিডিআর,বি'র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সুচনা প্রকল্পের ফলাফল ও প্রভাব মূল্যায়নে আইসিডিডিআর,বি'র জরিপের ফলাফল পরিকল্পনা মন্ত্রী, প্রকল্পের মূল অংশীদার এবং নীতিনির্ধারকদের সামনে তুলে ধরা হয়। সেমিনারটি সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ফেসবুক পেইজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।
ইউএসএইডের সংজ্ঞানুযায়ী, খাদ্য নিরাপত্তা হলো উৎপাদনশীল এবং স্বাস্থ্যকর জীবন নিশ্চিত করতে সুষম খাদ্য তালিকার চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে শারীরিক ও অর্থনৈতিক উভয়ভাবে সক্ষমতা অর্জন করা। একটি পরিবারকে খাদ্য নিরাপদ তখনই বলা যাবে যখন এর সদস্যরা খাদ্যাভাবে কিংবা ক্ষুধার ভয়ে থাকবে না।
সেমিনারে আরও জানানো হয় যে, এই ১৪ থেকে ২৭ শতাংশের প্রধান গৃহস্থালি ক্রয় সম্পর্কে তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে পারে এমন নারীদের সংখ্যা ২৪.৮ শতাংশ থেকে ৪৮.৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, নিজ সিদ্ধান্তে খাদ্য ক্রয় করতে পারে এমন নারীর সংখ্যা ৪৪ শতাংশ থেকে ৬৯.৩ শতাংশে, নিজ সিদ্ধান্তে খাদ্য প্রস্তুত করতে পারে এমন নারীর সংখ্যা ৭৭.০ শতাংশ থেকে ৮৩ শতাংশে; নিজস্ব স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা করতে পারে এমন নারীর সংখ্যা ৫১ শতাংশ থেকে ৭২.৩ শতাংশে; তাদের শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা করতে পারে এমন নারীর সংখ্যা ৫৭.৬ শতাংশ থেকে ৭৫.৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
আইসিডিডিআর,বি পরিচালিত এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন আইসিডিডিআর,বির নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল বিভাগের ইমেরিটাস বিজ্ঞানী ড. এএসজি ফারুক। জরিপে প্রাপ্ত ফলাফলের উপর ভিত্তি করে নীতিগত ও কার্যক্রমগত সুপারিশসহ একটি প্রেজেন্টেশন দেন আইসিডিডিআরবি'র নির্বাহী পরিচালক ডঃ তাহমিদ আহমেদ।
সেমিনারটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান এমপি। তিনি বলেন, "আমরা বর্তমানে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি তা কাটিয়ে ওঠায় দেশকে সাহায্য করতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় আমাদের অনেক কর্মসূচি আছে এবং সহযোগী প্রচেষ্টার ফলে আমরা অনেক সাফল্য অর্জন করেছি। কিন্তু আমাদের অনেক দূর যেতে হবে, এবং সহযোগিতাই এর চাবিকাঠি। বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি এবং দারিদ্র্য খাতে পরিবর্তন আনতে চায়।"
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের হেড অফ কো- অপারেশন, মরিজিও সিয়ান বলেন, "বাংলাদেশে খর্বকায়তা এবং অপুষ্টির হার এখনো অনেক বেশি। বহুখাত- ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা এবং এক্ষেত্রে বিনিয়োগ আরও বাড়ানো প্রয়োজন।"
সুচনা একটি বৃহৎ পরিসরের, বহু খাত ভিত্তিক পুষ্টি কর্মসূচি, যা ২,৩৫,৫০০ দরিদ্র এবং অতি দরিদ্র পরিবারকে লক্ষ্য করে, বাংলাদেশের সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার ১৪ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছেছে। এটি ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দ্বারা অর্থায়িত একটি কর্মসূচি যার লক্ষ্য দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে খর্বকায়তা হ্রাস করা এবং জাতীয়ভাবে অপুষ্টি রোধে একটি সমন্বিত, বহু-খাত ভিত্তিক পদ্ধতির জন্য সরকার এবং অন্যান্য অংশীদারদের সাথে কাজ করা।