ভূমি জটিলতায় আটকে সিরাজগঞ্জের চার লেন সড়কের কাজ
অর্থাভাবে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সিরাজগঞ্জ শহরে চারলেন সড়ক নির্মাণ কাজ আটকে রয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের সময়সীমা শেষ হলেও দু'দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ অবস্থায় সড়কটির প্রায় দেড় কিলোমিটার নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পভুক্ত মহাসড়কের দুই দিকের কাজ শেষ হওয়ায় বিপুল সংখ্যক যানবাহন প্রতিনিয়ত শহরের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে তীব্র যানজট সৃষ্টি করছে। এতে শহরবাসী নিত্য দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মোবারক হোসেন বলেন, "২০১৭ সালে ভূমি অধিগ্রহণ আইনে তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ১৪৫ কোটি টাকা প্রয়োজন। সওজ অফিস ৬৭ কোটি টাকা দিয়েছে। এখনও ৭৮ কোটি টাকা বাকি রয়েছে। পুরো টাকা না দেওয়ায় আমরা জমি অধিগ্রহণ করতে পারছি না।"
সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার বলেন, "এই প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপিতে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ৭৩ কোটি টাকার সংস্থান রয়েছে। কিন্তু সরকারি নতুন প্রজ্ঞাপণ অনুযায়ী তিন গুণ হিসাবে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ১৪৫ কোটি টাকার প্রাক্কলন দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয়ের বিষয়ে সংশোধিত ডিপিপি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেটা অনুমোদন হলে পুরো টাকা দিতে পারব এবং প্রকল্পের বাকি কাজ করা সম্ভব হবে।"
চলতি অর্থ বছরেই সংশোধিত ডিপিপি পাশ হবে বলে উভয় কর্মকর্তাই আশাবাদী। আর এটি পাশ হলে ভূমি অধিগ্রহন জটিলতা কেটে গিয়ে দ্রুত রাস্তাটির নির্মাণকাজ শেষ হবে বলেও আশা ব্যক্ত করেছেন তারা।
সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পের দুই পাশের কাজ শেষ হলেও মালশাপাড়া কাটাওয়াবদা মোড় থেকে শহরের অভ্যন্তরের সার্কিট হাউস পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার চারলেনের কাজ বন্ধ রয়েছে। এ অংশে শুধু একটি লেন নির্মাণ করা হয়েছে। এই লেন দিয়ে পার্শ্ববর্তী রুটের যানবাহনগুলো চলাচল করছে। কিন্তু শহরে প্রবেশ করে নানা বিড়ম্বনায় পড়ছে সব ধরনের যানবাহন। সয়াধানগড়া থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল মোড়, কোর্ট চত্বরের প্রধান ফটক ও বাজার স্টেশন পর্যন্ত যেন দুর্ভোগের শেষ নেই।
সড়কে ভোগান্তি সম্পর্কে বাস চালক আলাউদ্দিন, সুপারভাইজার শাহিন, অটোরিকশা চালক জসিম ও বাস শ্রমিক দিদার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের মুলিবাড়ি থেকে মালসাপাড়া কাটাওয়াবদা পর্যন্ত সুন্দর সড়ক নির্মাণ হলেও শহরের মাঝখানে দুর্ভোগে পড়তে হয়। বাজার স্টেশন, চামড়াপট্টি ও বাস টার্মিনালের সামনে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে চাপ বেড়ে গেলে যানবাহনগুলো এই সড়কে প্রবেশ করে। তখন দুর্ভোগ আরও প্রকট আকার ধারণ করে।
রিকশা চালক শরিফ, জিন্নাহ ও আক্কাস আলী বলেন, যানবাহনের চাপের কারণে এই দেড় কিলোমিটার এলাকার মধ্য দিয়ে চলাচল অনেক মুশকিল। এ অবস্থায় ১০ মিনিটের পথ যেতে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শামসুজ্জামান আলো বলেন, "সিরাজগঞ্জের উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে এই চারলেনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা দরকার। না হলে সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যাহত হবে। ক্ষতিগ্রস্থ হবে গোটা সিরাজগঞ্জবাসী।"
সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্য নব কুমার কর্মকার বলেন, "জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে ফোরলেনের কাজ শেষ হচ্ছে না। ১৯৮৪ সালে সিরাজগঞ্জ মহুকুমাকে পূর্ণাঙ্গ জেলা ঘোষণা হলেও শহরটিতে প্রবেশের জন্য আঞ্চলিক ছাড়া কোনো মহাসড়ক ছিল না। তাই চারলেন মহাসড়ক নিয়ে জেলাবাসীর আগ্রহ অনেক বেশি। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় সিরাজগঞ্জকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখা মানুষের প্রত্যাশা পুরণ না হওয়ার শঙ্কাও বেড়েছে।"
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তূর্ণা এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী আজাদুর রহমান বলেন, "ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় বিগত দুই বছর ধরে সার্কিট হাউস থেকে কাটা ওয়াপদা পর্যন্ত কাজ করতে পারছি না। এছাড়াও বৈদ্যুতিক পোল অপসারণ না করায় দেড় মিটার করে বাদ দিয়ে ড্রেন নির্মাণ করতেও সমস্যা হচ্ছে।"
সিরাজগঞ্জ সওজ অফিস জানায়, দুইলেন মহাসড়ক ৯.৭ মিটার এবং চারলেনের প্রস্থ হবে ১৮ মিটার। এর সঙ্গে থাকবে তিনটি ব্রিজ। চারলেন সড়কের দুই পাশের রাস্তার প্রস্থ ৭.৩ মিটার। মাঝখানে আইল্যান্ড থাকবে এক মিটার এবং দুই পাশে ফুটপাথ কাম ড্রেন হবে ১.২ মিটার।