নিম্ন আয়ের দেশে আরও ৫০০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন অনুদান দেবে যুক্তরাষ্ট্র
অন্যান্য দেশকে দান করার লক্ষ্যে আরও ৫০০ মিলিয়ন ডোজ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বুধবার বিশ্ব নেতাদের একটি ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই ঘোষণা দেন।
আগামী বছরের জানুয়ারিতে শুরু হবে এ ভ্যাকসিন বিতরণ।
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক ভ্যাকসিনেশন হার বাড়ানো এবং বিশ্ব নেতাদের অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনার জন্য সম্মেলনটি আয়োজিত হয়।
ব্রিটেন, কানাডা, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতাদের পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুসও ছিলেন এ সম্মেলনে।
বাইডেন বলেন, 'করোনাভাইরাস মহামারিকে যুক্তরাষ্ট্রে পরাস্ত করার জন্য আমাদের এটিকে সর্বত্র পরাজিত করতে হবে।'
২০২০ সালের শুরু থেকে ছড়িয়ে পড়া এ মহামারিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৯ লাখেরও বেশি মানুষ।
অতিরিক্ত ৫০০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্টের অনুদান দেওয়া মোট ডোজের পরিমাণ হবে ১.১ বিলিয়নেরও বেশি। তবে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দরিদ্র দেশগুলোর জন্য প্রয়োজন ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, ধনী দেশগুলো এ বিষয়ে যথেষ্ট কাজ করেনি। এছাড়া, আমেরিকাতে ভ্যাকসিনের ডোজ পূরণ করা মানুষদেরকে বুস্টার ডোজ দেওয়ায় দেশটির বিশেষ সমালোচনা করেন তারা। বিশ্বের জনসংখ্যার বেশিরভাগেরই এখনো ভ্যাকসিন ব্যবহারের সুযোগ নেই, যোগ করেন তারা।
বাইডেনের নতুন এ ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিমাণ অপর্যাপ্ত। তাছাড়া, দরিদ্র দেশগুলোতে ফাইজার ভ্যাকসিন সংরক্ষণ এবং শিপিংয়ের জন্য অত্যাধুনিক অবকাঠামোর অভাব রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তারা।
টেক্সাসের বেইলর ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল ট্রপিক্যাল স্কুল অব মেডিসিনের ডিন পিটার হোটেজ বলেন, 'উন্নয়নশীল বিশ্বকে টিকা দেওয়ার জন্য আমাদের ৬ থেকে ৯ বিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হবে।'
ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ক্যারি টিচার বলেন, 'শুধু দানই এ মহামারির অবসান ঘটাতে যথেষ্ট নয়। এ মহামারির অবসানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অধিকাংশই এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।'
এদিকে, বাইডেন আরও জানিয়েছেন, অনুদানের ভ্যাকসিন প্রদান পরিচালনায় সহায়তা করার জন্য ৩৭০ মিলিয়ন ডলার দেবে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে, যেসব দেশে ভ্যাকসিনের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি, সেসব দেশে বিতরণ কাজ পরিচালনার জন্য গ্লোবাল ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সকে (জিএভিআই) ৩৮০ মিলিয়ন ডলারেও বেশি প্রদান করবে তারা।
ফাইজার ইনকরপোরেটেড ও বায়োটেক এসই'র ভ্যাকসিনগুলো যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করা হবে এবং নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পাঠানো হবে। একটি সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন সরকার প্রতি ডোজের জন্য ৭ ডলার খরচ করবে।
এর আগে, গত জুনে ভ্যাকসিনের ৫০০ মিলিয়ন ডোজ কিনে যুক্তরাষ্ট্র। সে চুক্তির শর্তাবলী অনুযায়ী, দেশটি এ ভ্যাকসিনের জন্য খরচ করেছে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে, জিএভিআই'র তথ্যমতে, বিশ্বের ১৪১টি দেশে ২৮৬ মিলিয়নেরও বেশি ভ্যাকসিন পৌঁছে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জিএভিআই সমর্থিত কোভ্যাক্স। তবে, সেপ্টেম্বর মাসে কোভ্যাক্স সুবিধা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ডেলিভারি টার্গেট প্রায় ৩০ শতাংশ কমিয়ে ১.৪২৫ বিলিয়ন ডোজে নামিয়ে আনে।
রয়টার্স ট্র্যাকার দেখায়, হাইতি ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো-সহ কিছু দেশে টিকা দেওয়ার হার ১ শতাংশেরও কম।
এদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কোভিড -১৯ ভ্যাকসিনের অসম বণ্টনের জন্য মঙ্গলবার বিশ্বনেতাদের তিরস্কার করেছেন। তাদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এ ধরনের কাজকে 'অশালীন' বলে অভিহিত করেন তিনি।
ফাইজার ও বায়োটেকের একটি বিবৃতি অনুসারে, প্রাথমিক ৫০০ মিলিয়ন ডোজের বিতরণ শুরু হয়েছিল আগস্ট মাসে। মোট এক বিলিয়ন ডোজের বিতরণ কাজ আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে শেষ হবে বলে তাদের ধারণা।
এ ভ্যাকসিনগুলো ৯২টি নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের ৫৫টি সদস্য দেশে বিতরণ করা হবে।
বুধবার ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি ট্রেড গ্রুপের একটি কনসোর্টিয়াম এক বিবৃতিতে জানায়, এ বছর সমৃদ্ধ দেশগুলোতে বুস্টার ডোজ কার্যক্রম চালানো এবং অন্যান্য দেশে অনুদানের জন্য বৈশ্বিক ভ্যাকসিন উৎপাদনের হার যথেষ্ট।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, 'সত্যি বলতে, বাকি বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে এবং এ বিষয়ে আরও কিছু করতে হবে।' যুক্তরাষ্ট্র চায় অন্যান্য ধনী দেশও যেন অনুদানের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
-
সূত্র: রয়টার্স/ফ্রান্স২৪