লন্ডনে নিহত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাবিনা নেসার স্মরণে পেগলার স্কয়ারে জনসমাবেশ
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে নিহত হওয়া ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিক্ষিকা সাবিনা নেসার মৃত্যুতে মর্মাহত শত শত মানুষ সমাবেশ করেছেন। শুক্রবার লন্ডনের পেগলার স্কয়ারে সমবেত হন তারা।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর লন্ডনের একটি পার্কে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায় ২৮ বছর বয়সী সাবিনাকে।
১৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে আটটার আগে সাবিনা তার দক্ষিণ লন্ডনের বাসা থেকে বের হয়ে কিটব্রুক এলাকার পেগলার স্কয়ারে দ্য ডিপো বারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সেই বারে যাওয়ার পথেই ক্যাটার পার্কের অবস্থান।
তিনি তার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি। পরদিন বিকেলে পার্কে তার লাশ পাওয়া যায়।
সাবিনার এমন মৃত্যুতে মর্মাহত পাঁচ শতাধিক বেশি মানুষ পেগলার স্কয়ারে জড়ো হন। তার বোন জেবিনা ইয়াসমিন ইসলাম এ সমাবেশে আগত জনতার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তিনি বলেন, 'যারা আজ আমার বোনের প্রতি সমর্থন দেখাতে এসেছেন, তাদের ধন্যবাদ জানাই। অসাধারণ, যত্নবান ও দারুণ এক বোনকে হারিয়েছি আমরা। খুব অকালেই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন তিনি।'
জেবিনা আরও বলেন, 'আমাদের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। মনে হচ্ছে, কোনো খারাপ স্বপ্নে আটকে আছি; সেখান থেকে বের হতে পারছি না। আমাদের পৃথিবী ভেঙে পড়েছে, ভাষা হারিয়ে ফেলেছি আমরা।'
'আমরা যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, এ অবস্থায় যেন আর কোনো পরিবারকে পড়তে না হয়,' যোগ করেন তিনি।
এ সময় সাবিনার চাচা শাহিন মিয়া নিজের ভাতিজিকে 'দয়ালু ও বড় মনের মানুষ' বলে অভিহিত করেন। হাস্যোজ্জ্বল থাকা সাবিনা অন্যদের সাহায্য করতেন বলে জানান শাহিন।
তিনি বলেন, সাবিনার মৃত্যু 'রাস্তাঘাটে নারীর নিরাপত্তার প্রশ্ন আবারও সামনে এনেছে।'
বিবৃতিতে শাহিন যোগ করেন, 'আমরা চাই না, সাবিনার সঙ্গে যা ঘটেছিল তা অন্য কারও সঙ্গে ঘটুক। আমরা চাই না অন্য কোনো মায়ের বুক খালি হোক বা গভীর দুঃখে ভরে উঠুক, কিংবা কোনো বাবার চোখে জল থাকুক।'
এদিকে, স্থানীয় পুলিশ সাবিনার মৃত্যুর ঘটনায় 'গুরুত্বপূর্ণ' একজন সন্দেহভাজনকে খুঁজে বেড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ধূসর জিন্স ও কালো জ্যাকেট পরিহিত ওই লোক ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় বারবার পেছনে তাকিয়ে জ্যাকেটের হুড টানছেন।
মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার লুইসা রলফে ওই লোকের পরিচিতজনদের তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, সাবিনা হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তার হওয়া দুজন ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ডাচেস অব ক্যামব্রিজ কেট মিডেলটন জানান, তিনি 'আরেকজন নিরীহ যুবতীর মৃত্যুতে দুঃখিত।'
গত মার্চ মাসে ডাচেস ব্যক্তিগতভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের ক্ল্যাফাম কমনে সারা এভারার্ডের স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করেন। ৩৩ বছর বয়সী মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ সারা অফ-ডিউটি পুলিশ অফিসার ওয়েন কুজেন্সের হাতে খুন হয়েছিলেন।
এদিকে, সাবিনার স্মরণে ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে একটি মোমবাতিও জ্বালানো হয়েছিল।
পেগলার স্কয়ারের সমাবেশে নেতৃত্ব দেওয়া সকলেই সমস্বরে বলেন, 'সাবিনা নেসাকে আমরা কখনো ভুলব না।' সেখানে অনেকেই মোমবাতি জ্বালিয়ে ও ফুল ছড়িয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
এছাড়া, সাবিনাকে শ্রদ্ধা জানাতে হ্যাকনি, নিউহ্যাম, ব্রিস্টল ও ব্রাইটনেও মানুষের ভিড় জমে। ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র বলেন, 'প্রত্যেক নারী ও শিশুর রাস্তায়, পার্কে, খোলা জায়গায় ও নিজেদের বাড়িতে নিরাপদ বোধ করা উচিত।'
'সাবিনা নেসার স্মরণে এবং নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমরা হোভ টাউন হল ও ব্রাইটন টাউন হলে পতাকা অবনমিত রেখেছি,' বলেন তিনি।
-
সূত্র: বিবিসি