এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিং বেড়েছে ৬৫ শতাংশ
গ্রামীণ পর্যায়ের জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে যাত্রা শুরু হওয়া এজেন্ট ব্যাংকিং দ্রুতগতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের পালে করোনা মহামারির ফলে সবচেয়ে বেশি হাওয়া লেগেছে।
পরিসংখ্যান বলছে, করোনাকালের এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের হিসাব বেড়েছে ৬৫.৮৭ শতাংশ, আমানতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯৯.৪০ শতাংশ। একই সময়ে বিতরণকৃত ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪২.২১ শতাংশ। অন্যদিকে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৫৫ শতাংশে। ২০২০ সালের জুন থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত তথ্য পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকালে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেশি সচল ছিল। এরইফলে ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে। একইসঙ্গে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর জমানো টাকা ব্যাংকে আসতে শুরু করেছে।
এখন পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের সরকারি-বেসরকারি ২৮টি ব্যাংক। এর মধ্যে তিনটি ব্যাংক এজেন্ট নিয়োগ, আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ ও রেমিট্যান্স আহরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
এজেন্ট আউটলেট চালু ও এজেন্টেদের মাধ্যমে হিসাব সংখ্যা চালুর ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে ব্যাংক এশিয়া। এজেন্টদের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে ইসলামী ব্যাংক। এজেন্টদের মাধ্যমে রেমিট্যান্স সংগ্রহে শীর্ষস্থানও দেশের বৃহৎ ব্যাংকটির। তবে এজেন্টদের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থান ব্র্যাক ব্যাংকের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরের জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত দেশে ২৩টি ব্যাংকের এজেন্ট ছিল ৮ হাজার ৭৬৪টি। চলতি বছরের জুন শেষে ৫টি এজেন্ট ব্যাংক বেড়ে বর্তমানে ২৮ টি। এ ব্যাংকগুলোর এজেন্টের সংখ্যা ১২ হাজার ৯১২-এ দাঁড়িয়েছে। করোনাকালের এক বছরে ব্যাংকগুলোর এজেন্ট সংখ্যা বেড়েছে ৪৭.৩৩%।
এজেন্টের মতোই গত এক বছরে ৪ হাজার ৬৯৬টি আউটলেট বেড়েছে। ২০২০ সালের জুন শেষে এজেন্ট আউটলেটের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৪৪৯টি। চলতি বছরের জুন শেষে আউটলেটের সংখ্যা ১৭,১৪৫ এ উন্নীত হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে আউটলেট বেড়েছে ৩৭.৭২ শতাংশ।
২০২০ সালের জুন পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চালু করা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ৭৩ লাখ ৫৮ হাজার ১৯০। করোনাকালের এক বছরে ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার ১৬৮টি নতুন ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। চলতি বছরের জুন শেষে এজেন্টদের মাধ্যমে চালু করা ব্যাংক হিসাবের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২২ লাখ ৫৩৫৮টি। এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক হিসাবের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৫.৮৭ শতাংশ।
করোনাকালের এক বছরে এজেন্টদের মাধ্যমে সংগৃহীত আমানত বেড়েছে ৯৯ শতাংশের বেশি। গত বছরের জুন শেষে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ২২০ কোটি ২১ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুনে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৩৭৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
এছাড়া ২০২০ সালের জুনে এজেন্টদের মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ৭২০ কোটি টাকা। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ হিসাবে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪২ শতাংশেরও বেশি।
চলমান মহামারিতে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় অর্জন হলো রেমিট্যান্সের বড় উল্লম্ফন। চলতি অর্থবছরের জুন পর্যন্ত রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ শতাংশের বেশি। অথচ করোনাকালের এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ১৫৫ শতাংশ। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত এজেন্টদের মাধ্যমে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২৬ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। কিন্তু মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৬৭ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা বিষয়ে নীতিমালা জারি করে। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে পাইলট কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রথম এজেন্ট নিয়োগ দেয় ব্যাংক এশিয়া। এরপর দ্রুততম সময়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে যুক্ত হয়েছে অন্য ব্যাংকগুলো। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২৮টি ব্যাংক এরই মধ্যে সেবাটি চালু করেছে।