১০ বছরে পৃথিবীর ১৪ শতাংশ প্রবাল প্রাচীর নিশ্চিহ্নের কারণ বৈশ্বিক উষ্ণতা: গবেষণা
শুধু পৃথিবীর ভূ-ভাগেই নয়, সমুদ্রতলেও দেখা যাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের আগ্রাসী প্রভাব। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিন দিন পৃথিবীর প্রবাল ক্ষয়ে যাচ্ছে। সামুদ্রিক উষ্ণতা এই হারে বৃদ্ধি পেতে থাকলে অচিরেই বিশ্বের প্রবাল প্রাচীরের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত এক গবেষণায় এমন আশঙ্কাই প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। গবেষণাটিতে দেখা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ১০ বছরে পৃথিবীর ১৪ শতাংশ প্রবাল প্রাচীর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। গ্লোবাল কোরাল রিফ মনিটরিং নেটওয়ার্কের বিজ্ঞানীদের গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রবাল প্রাচীর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন গবেষকরা। অতিরিক্ত মাছ ধরা, দূষণ ও সমুদ্রতীরে নির্মাণকাজের প্রভাবও আছে এর ওপর, তবে সবচেয়ে বড় কারণ প্রবাল ক্ষয়ে যাওয়া। এ অবস্থাটি 'কোরাল ব্লিচিং' নামে পরিচিত।
প্রবাল এর পলিপে থাকা অ্যালিগাইয়ের ওপর খাদ্যের জন্য নির্ভরশীল। সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা খুব বেড়ে গেলে এসব অ্যালিগাই আর প্রবালের শরীরে থাকতে পারে না। খুব বেশি দিন অ্যালিগাই ছাড়া থাকলে প্রবাল ধীরে ধীরে সাদা রঙ ধারণ করে, একসময় খাবারের অভাবে মারা যেতে থাকে।
এ ধরনের ঘটনাতেই ১৯৯৮ সালে বিশ্বের ৮ শতাংশ প্রবাল একই সময়ে মারা পড়ে। এটিই ছিল প্রথম বৈশ্বিক কোরাল ব্লিচিং-এর ঘটনা।
৭৩টি দেশের ৪০ বছর সময়কার তথ্য-উপাত্ত নিয়ে এ গবেষণাটি করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রবালের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
তবে পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে পানির নিচের বাস্তুসংস্থান আগের অবস্থায় ফিরে গেছে এমন ঘটনা দেখা গেছে আগেও। এটি আশার খবর হলেও এর জন্য প্রয়োজন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, সম্মিলিতভাবে বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমিয়ে আনা।
"আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই আর। আমরা এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো, কিন্তু সেজন্য খুব দ্রুতই কাজ শুরু করতে হবে," বলেন জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) প্রধান ইঙ্গার অ্যান্ডারসন।
নতুন এক চুক্তির আওতায় জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থান রক্ষার উপায় নিয়ে আলোচনা করার জন্য বিশ্বনেতাদের বৈঠকের এক সপ্তাহ আগেই এ গবেষণা প্রকাশিত হলো। বিভিন্ন দেশে রেকর্ড পরিমাণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি, গ্রীষ্মের সময় বন্যা এবং দাবানল- এসব বিষয় মাথায় রেখে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে দেশগুলোর সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান গবেষকরা।
প্রবাল প্রাচীর ধ্বংস হয়ে গেলে ক্ষতির মুখে পড়বে কোটি কোটি মানুষও। বিভিন্ন দেশে বহু মানুষ তাদের খাদ্য, চাকরির জন্য এর ওপর নির্ভরশীল। পর্যটনসহ ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ব্যবসাও নির্ভরশীল এর ওপর।
বিশ্বজুড়ে ২৫ শতাংশ সামুদ্রিক প্রাণি ও গাছপালা বেঁচে থাকার জন্য প্রবালের ওপর নির্ভরশীল। ৫০ কোটি মানুষকে অতি বন্যার হাত থেকে রক্ষা করে, মাছের উৎস হিসেবেও কাজে আসে কোটি কোটি মানুষের।
- সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট